টর্ট আইনে, সাধারণত কোন ব্যক্তি কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভূক্তভোগীর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অধিকার রয়েছে। তবে এমন কিছু শ্...
টর্ট আইনে, সাধারণত কোন ব্যক্তি কর্তৃক আঘাতপ্রাপ্ত কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ভূক্তভোগীর তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের অধিকার রয়েছে। তবে এমন কিছু শ্রেণির লোক রয়েছে যারা তার ক্ষতি বা লোকসানের জন্য মামলা করতে পারে না।
নিম্নে কারা টর্টফিজারের মামলা করতে পারে না তা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Who cannot sue a tortfeasor?
কারা টর্টফিজারের মোকদ্দমা করতে পারে না?
নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ ব্যক্তিগত অক্ষমতার কারণে টর্টের মামলা করতে পারে না। বিপরীতভাবে বলা যায় যে, নিম্নোক্ত ব্যক্তিগণ ব্যতিরেকে সকল ব্যক্তিই টর্টের মামলা করতে পারেঃ- বিদেশী শত্রু;
- গুরুতর অপরাধে অপরাধী বা দন্ডিত ব্যক্তি;
- দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি;
- স্বামী ও স্ত্রী; এবং
- কর্পোরেশন।
বিদেশী শত্রু
বিদেশী শত্রু (An alien enemy) বলতে শত্রুভাবাপন্ন কোন বিদেশী নাগরিক বা দেশের সাথে যুদ্ধরত কোন বিদেশী অধিবাসীকে বোঝায়। যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এরূপ দেশে বসবাস করে কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে তাকেও বিদেশী শত্রু বলে। এ প্রসঙ্গে সে ব্যক্তির জাতীয়তা বিবেচনা করা হয় না, শুধু আবাস বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশী জাতীয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধরত বা শত্রুভাবাপন্ন কোন দেশে বসবাসকারী কোন ব্যক্তি বাংলাদেশের দৃষ্টিতে বিদেশী শত্রু হিসেবে গণ্য হবে। তবে এরূপ দেশের কোন নাগরিক বাংলাদেশ সরকারের অনুমতিক্রমে যদি এদেশে বসবাস করে বা কারবার পরিচালনা করে তবে তাকে বিদেশী শত্রু বলা যাবে না।
ইংল্যান্ডের কমন ল’ অনুযায়ী বিদেশী শত্রু টর্টের মামলা করতে পারে না। [1 K. B. 857 (1915): 3 All. E. R. 148 (CA) (1940)] বাংলাদেশের আইন সামান্য ভিন্ন। ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৮৩ ধারায় এ সম্পর্কে বিধান রয়েছে। বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে বসবাসকারী কোন বিদেশী শত্রু সরকারের অনুমতিক্রমে বাংলাদেশের আদালতে এ দেশের নাগরিকের মতই মামলা করতে পারে।
বিদেশী বন্ধুর ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের আইনে কিংবা বাংলাদেশের আইনের এরুপ কোন বাধা-নিষেধ নেই। বিদেশী শত্রু কেন টর্টের মামলা করতে পারে না, তার কারণ ব্লাকবার্ন ও জর্জ তাদের টর্ট বইয়ে বর্ণনা করেছেন। তাদের মতে, যুদ্ধের একটা উদ্দেশ্য হচ্ছে শত্রু রাষ্ট্রের ব্যবসা-বাণিজ্য ধ্বংস বা পঙ্গু করে দেয়া যেন যুদ্ধ চালায়ে যেতে সে সক্ষম না থাকে। সেজন্য বিদেশী শত্রুকে আর্থিক ক্ষতিপূরণের মামলা করতে দেয়া জননীতির পরিপন্থী। [Blackburn and George- Elements of the Law of Torts. 1949 Eddittion. P. 236]
গুরুতর অপরাধে অপরাধী বা দন্ডিত ব্যক্তি
ব্রিটিশ কমল ল’য়ে পূর্বে এরূপ বিধান ছিল যে, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি (A convict under death sentence) তার সম্পত্তির ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারতো না, কেণনা এগুলো রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হতো। ১৮৭০ সালের Forefeiture Act প্রবর্তনের পর ইহা বাতিল করা হয়। এ আইনে বিধান করা হয় যে, মৃত্যূদন্ড প্রাপ্ত আসামী বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি তাদের দন্ডাজ্ঞা বলবৎ থাকা অবস্থায় টর্টের মামলা করতে পারবে না। যদিও সম্পদের ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণের মামলা করার অধিকার রহিত করা হয়, কিন্তু ব্যক্তিগত অপকার যেমন- মানহানি, আক্রমণ ইত্যাদির ক্ষেত্রে মামলা করা যেতো।
১৯৪৮ সালে The Criminal Justice Act প্রবর্তনের পর যে কোন অপরাধে দন্ডিত ব্যক্তিও টর্টের মামলা করতে পারে। বাংলাদেশে এ ধরণের কোন অযোগ্যতার বিধান নেই। তাই দন্ডিত কোন ব্যক্তিও তার ব্যক্তিগত ক্ষতি বা সম্পত্তির ক্ষতির জন্য টর্টের মামলা করতে পারে।
দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তি
দেউলিয়া ঘোষিত (Insolvent) ব্যক্তির সম্পদ তার পাওনাদারদের মধ্যে আনুপাতিক হারে বন্টন করার উদ্দেশ্যে সরকার কর্তৃক নিযুক্ত তত্ত্বাবধায়কের উপর ন্যস্ত করা হয়। তাই দেউলিয়া ঘোষিত ব্যক্তির সম্পত্তি ক্ষতির জন্য সে ব্যক্তি টর্টের মামলা করতে পারে না। কিন্তু তার স্বার্থে বা তার পক্ষে তত্ত্বাবধায়ক মামলা দায়ের করতে পারে। তবে ব্যক্তিগত অন্যায়ের ক্ষেত্রে যেমন- আক্রমণ, মানহানি, ইত্যাদির ক্ষেত্রে দেউলিয়াগ্রস্ত ব্যক্তি নিজে টর্টের মামলা করতে পারে।
স্বামী-স্ত্রী
ব্রিটিশ কমন ল’ এর সাধারণ নীতি অনুযায়ী বিয়ের পর স্ত্রীর ব্যক্তিসত্তা স্বামীর ব্যক্তিসত্তার সাথে একীভূত হয়ে যায়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই স্বামী-স্ত্রীকে এক ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। ফলে, স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারতো না।
বর্তমানে The Law Reform (Married Women and Tort Feasors) Act, 1935 এবং The Law Reform (Husband and Wife) Act, 1962 চালু থাকায় সে অবস্থা আর নেই। অবিবাহিতা অবস্থায় একজন মহিলা যেভাবে মামলা করতে পারে, সেভাবে একজন বিবাহিতা স্ত্রীও বর্তমানে মামলা করতে পারে। ১৯৮২ সালে Married Women's Property Act চালু হবার পরে একজন বিবাহিতা মহিলা তার নিজস্ব সম্পত্তি রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য স্বামীর বিরুদ্ধে টর্টের মামলা করতে পারে। কিন্তু এরূপ অবস্থায় স্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বামীর মামলা করার কোন অধিকার নেই। স্ত্রীর অপর কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে কিংবা অপর কোন ব্যক্তি কর্তৃক স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করতে হলে স্বামীকে যুক্ত করার বিধান ছিল। ১৯৩৫ সালের এ্যাক্টে সেটাও দূর করা হয়েছে।
ইংল্যান্ডের ন্যায় স্বামী-স্ত্রীর ব্যক্তিসত্তার ধারণা এদেশে নেই। হিন্দু, মুসলমান ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত আইন প্রযোজ্য হয়। এ সকল আইনের বিধান অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী একে অপরের বিরুদ্ধে টর্টের মামলা করতে পারে। একজন বিবাহিতা স্ত্রীও তৃতীয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে বা তৃতীয় ব্যক্তি বিবাহিতা মহিলার বিরুদ্ধে টর্টের মামলা করতে পারে।
কর্পোরেশন
কর্পোরেশ হচ্ছে আইন দ্বারা সৃষ্ট একটি কৃত্রিম ব্যক্তি। পার্লামেন্টের এ্যাক্ট দ্বারা (যেমন- ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন) কিংবা কোন নির্দিষ্ট আইনের আওতায় (যেমন- বর্তমান বাংলাদেশে ১৯৯৪ সালের কোম্পানী এ্যাক্ট এবং ভারতে ১৯৫৬ সালের কোম্পানী এ্যাক্টের আওতায় নিবন্ধিত কোম্পানী) এগুলো সৃষ্টি হতে পারে। যেভাবেই সৃষ্টি হোক না কে, কোম্পানী বা কর্পোরেশনের একটি নিজস্ব ব্যক্তি সত্ত্বা আছে যা এর সদস্য হতে স্বতন্ত্র। আইন দ্বারা সৃষ্ট বিধায় একমাত্র আইনের দ্বারাই এর পরিসমাপ্তি ঘটতে পারে, মানুষের ন্যায় এর স্বাভাবিক মৃত্যূ নেই।
কর্পোরেশন একটি ব্যক্তি বিধায় নিজ নামে টর্ট সংঘটনকারীর বিরুদ্ধে টর্টের মামলা করতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিগত অপকার যেমন, আক্রমণ, আঘাত বা মিথ্যা অবরুদ্ধকরণ, ইত্যাদির ক্ষেত্রে এগুলোর প্রকৃতিগত কারণেই কর্পোরেশন কোন মামলা করতে পারে না। তবে ব্যবসার সুনাম বা খ্যাতি বিনষ্ট করতে পারে কিংবা সম্পদের ক্ষতি হতে পারে এরূপ মানহানি উক্তির জন্য মামলা করা যায়। এছাড়া কোম্পানির অবসায়নের জন্য বিদ্বেষমূলক দরখস্ত পেশের কারণেও টর্টের মামলা করা যায়। [11 Q. B. D. 674]
COMMENTS