নেগলিজেন্স বা অবহেলা টর্ট আইনের একটি প্রকার। যখন কোন অবহেলার মধ্যে বাদী ও বিবাদী উভয়ের অবহেলা বিদ্যমান থাকে, তখন তাকে কন্ট্রিবিউটরি নেগলিজেন...
নেগলিজেন্স বা অবহেলা টর্ট আইনের একটি প্রকার। যখন কোন অবহেলার মধ্যে বাদী ও বিবাদী উভয়ের অবহেলা বিদ্যমান থাকে, তখন তাকে কন্ট্রিবিউটরি নেগলিজেন্স বা পারস্পারিক অবহেলা বলা হয়।
কন্ট্রিবিউটরী অবহেলার ক্ষেত্রে যে সমস্ত নীতিমালা অনুসরণ করা হয় তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।
Principles of Contributory Negligence
কন্ট্রিবিউটরী নেগলিজেন্সের নীতিগুলি
কন্ট্রিবিউটরী নেগলিজেন্স বা আংশিক অসতর্কতার বিধিসমূহ নিম্নরুপঃ
প্রাচীন নিয়ম
ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রথমাংশে আংশিক অসতর্কতার নিয়মাবলী প্রথম আবির্ভূত হয়। প্রথমে এই নিয়ম ছিল যে, বাদী ও বিবাদী উভয়ের অসাবধানতার ফলে কোন ক্ষতি হয়ে থাকলে কোন পক্ষকেই দায়ী করা হতো না। পরবর্তীকালে গ্লানভাইল উইলিয়াম একে বাসী-পচা নিয়ম (Stalemate rule) বলে আখ্যায়িত করেছেন।
[Butterfield v. Forrester, (1809) 11 east 60] মামলার ঘটনায় প্রকাশ, বিবাদী রাজপথে একটা খুঁটি পুতে ছিলেন। বাদী তীব্র বেগে গাড়ী চালিয়ে আসছিলেন এবং এটা দেখতে না পেয়ে জোরে ধাক্কা মারেন এবং এটা দেখতে না পেয়ে জোরে ধাক্কা মারেন এবং গাড়ীর ক্ষতি হয়। যদিও বিবাদীর অবহেলার জন্য দায়ী তবুও বাদী একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এ দুর্ঘটনা এড়ায়ে যেতে পারত। কাজেই বাদীর মামলা টিকে নাই।
পরিস্থিতির বিবেচনা
বাদী যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করলেই দুর্ঘটনা এড়াতে পারতো এরূপ যুক্তিই যথেষ্ট নয়, পরিস্থিতিও বিবেচ্য বিষয়। তাই গি বনাম মেট্রোপলিটান রেলওয়ে মামলায় বাদী ট্রেনে ভ্রমনের সময় দরজায় হেলান দিয়ে জানালার বাইরে উকি মারছিলেন। কিন্তু দরজাটির ছিটকানী ভালভাবে আটকানো ছিল না, ফলে বাদী নিচে পড়ে যান। যদিও বাদী সামান্য সতর্কতা অবলম্বন করলে এ দুর্ঘটনা এড়াতে পারতো, এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হয় যে, এরূপ পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই বাদী, বিবাদী বা তার কর্মচারীর সতর্কতার উপর নির্ভর করতে পারে। তাই বাদীর আংশিক অসাবধানতা প্রতিষ্ঠিত হয় নাই।
শেষ সুযোগ বিধি
যে সকল ক্ষেত্রে বাদীর অবহেলা তুলনামূলকভাবে খুব কম প্রমাণিত হয়, পরিস্থিতি বিবেচনার নিয়মটি প্রয়োগে বেশ সমস্যার সৃষ্টি হয়। বাদীর সামান্য অবহেলার জন্য বিবাদীর গুরুতর অবহেলা অব্যহতি পাবে তা কোনক্রমেই যুক্তিযুক্ত নয়। তাই এটা পরিবর্তন করে শেষ সুযোগ বিধি চালু করা হয়।
[Davies vs Mann 152 Eng. Rep. 588 (1842)] মামলায় এই বিধিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বিবাদী তার একটি গাধা হাত পা বেঁধে রাস্তায় ফেলে রেখেছিল। এটা নিঃসন্দেহে অবহেলা। কিন্তু গাড়ী চালায়ে গাধাটিকে আহত করায় আদালত এই অভিমত পোষণ করেন যে, বিবাদীর এই দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাবার শেষ সুযোগ ছিল। তাই বিবাদীকে দায়ী করা হয়।
বিকল্প বিপদ নিয়ম
যখন বাদীকে বিবাদীর অন্যায় কাজের ফলে হঠাৎ এমন এক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়। যখন কোন একটি কাজ করা বা না করা সম বিপজ্জনক মনে হয় এবং ক্ষণিকের বিবেচনায় সে কাজটি করে ফেলে, কিন্তু পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এ অবস্থায় অবহেলায় অবদানের জন্য বাদীকে দায়ী করা যাবে না। একে বলা হয় বিকল্প বিপদ মতবাদ।
তৃতীয় ব্যক্তির অসাবধানতা
বাদীর কর্মচারী বা প্রতিনিধি নয় বা বাদীর সাথে কোন সম্পর্ক নেই এরুপ ব্যক্তির দ্বারা অবহেলায় অবদান প্রমাণিত হলে বাদীকে দায়ী করা যাবে না।
নাবালক
বাদী নাবালক হলেও বিবাদী আংশিক অবহেলার দাবী উত্থাপন করতে পারে। অবশ্য বাদীর বয়সের সাধারণ ছেলে-মেয়েদেরর স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তার উপর ভিত্তি করে তার দায়িত্ব স্থির করা হয়। লিনচ বনাম নূরুদ্দিন মামলার ঘটনায় বিবাদী তার ঘোড়াগাড়ী চালক বিহীন অবস্থায় এবং কাউকে দেখাশুনার দায়িত্ব না দিয়ে রাস্তায় কিছুক্ষণের জন্য রেখে যায়। ৭ বছরের কম বয়স্ক এক ছেলে (বাদী) গাড়ীতে চড়ে বসে। নামার সময় হঠাৎ অপর একটি ছেলে ঘোড়াটিকে চালায়। বাদী পড়ে যায় এবং তার পা ভেঙ্গে যায়। এ ক্ষেত্রে নাবালকের অবহেলা অস্বীকার করা হয় এবং বিবাদীকে এককভাবে দায়ী করা হয়।
বর্তমানে ইংল্যান্ডে সাধারণ আইনের নিয়মগুলি এক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় না। ১৯৪৫ সালের সংশোধনী আইনে বলা হয়েছে যে, যখন বাদী ও বিবাদী উভয়েই অবহেলার জন্য দায়ী তখন অবহেলায় বাদীর অবদানের অনুপাতে ক্ষতিপূরণ হ্রাস পাবে। বাংলাদেশে েএ সম্পর্কে কোন বিধিবদ্ধ আইন না থাকায় ইংল্যান্ডের সাধারণ আইনের নীতিগুলিই এখানে প্রযোজ্য।
সীমাবদ্ধতা
কন্ট্রিবিউটরী নেগলিজেন্সের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়ঃ
- বাদী নাবালক হলে কিংবা দৃশ্যত শারীরিক অক্ষম হলে অবহেলায় বাদীর অবদান অগ্রাহ্য করা হয়।
- বিবাদী শেষ সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে ব্যর্থ হলে বাদীকে দায়ী করা যায় না।
- বিবাদীর কাজের দরুন বিকল্প পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে েএবং বাদী স্বাভাবিকভাবে কিছু করে ক্ষতিগ্রস্থ হলে এই নীতি প্রযোজ্য হবে না।
- উদ্ধারকাজে স্বাভাবিকভাবে বাদী প্রবৃত্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হলে বিবাদীর অবহেলায় বাদী অবদান রেখেছে তা বলা যায় না।
- বাদীর সাথে কোন সম্পর্ক নেই এমন তৃতীয় ব্যক্তির আংশিক অসাবধানতা থাকলে বাদীকে দায়ী করা যায় না।
COMMENTS