চুক্তিভূক্ত পক্ষগণ ভবিষ্যতে কোন একটি কার্য সম্পাদন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং সেই পক্ষগণ তাদের প্রতিশ্রুতি যথাথভাবে পালন করবে বলে চু...
চুক্তিভূক্ত পক্ষগণ ভবিষ্যতে কোন একটি কার্য সম্পাদন করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকে এবং সেই পক্ষগণ তাদের প্রতিশ্রুতি যথাথভাবে পালন করবে বলে চুক্তি আইন প্রত্যাশা করে। কোন একটি পক্ষ যদি চুক্তি পালন করতে অস্বীকার করে বা চুক্তিভঙ্গ করে তবে আইন অনুযায়ী চুক্তি ভঙ্গকারী পক্ষ ক্ষতিপূরণ করতে বাধ্য থাকে।
কিন্তু ক্ষতিপূরণ কোন কোন ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ও যথার্থ হয় প্রতিকার বলে বিবেচিত হয় না, চুক্তিটির ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের ইকুইটি কোর্ট প্রতিকারের জন্য এগিয়ে আসেন এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণের পরিবর্তে যথাযথভাবে পালন করার নির্দেশ দেন। ইকুইটি উদ্ভূত এই প্রতিকারটি সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ১২ ধারায় বিধিবদ্ধ আকারে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। অতএব, পক্ষগণ স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে চুক্তি বাস্তবায়ন করলে তাকে চুক্তি পালন বলে এবং আদালত চুক্তিটি যথাযথভাবে পালনের জন্য নির্দেশ প্রদান করলে তাকে সুনির্দিষ্ট চুক্তি পালন বলে। অর্থাৎ চুক্তি পালনে অনাগ্রহী পক্ষকে চুক্তিটি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করার জন্য আদালত কর্তৃক আদেশ প্রদানকে সুনির্দিষ্টভাবে চুক্তি পালন বলে।
তবে, বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৭৭ সালের সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুযায়ী এমন কতগুলি চুক্তি আছে যে চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করা যায় না, তা নিম্নে সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।
Contracts not specifically enforceable
যে চুক্তিগুলি সুনিদির্ষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ২১ ধারা অনুযায়ী নিম্নলিখিত চুক্তিগুলি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় নাঃ
(১) যে চুক্তির কার্য সম্পাদন না করলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ পর্যাপ্ত হয়।
উদাহরণঃ ‘ক’ ১০০ বক্স সাবান ২০ হাজার টাকায় ‘খ’ এর নিকট বিক্রির জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। পরবর্তী সময়ে ‘ক’ এটা সরবরাহ করতে অস্বীকৃতি জানালে ‘খ’ উক্ত চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করার জন্য মামলা দায়ের করতে পারবে না। কারণ এই চুক্তিভঙ্গের জন্য যে ক্ষতি হবে তা অর্থের দ্বারা পূরণযোগ্য।
(২) যে চুক্তি অতি সুক্ষ্ম বা অসংখ্য বিবরণের সমষ্টি বা পক্ষসমূহের ব্যক্তিগত যোগ্যতা বা ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল অথবা অন্য কোনভাবে এর প্রকৃতি এমন যে, আদলত উক্ত চুক্তির উল্লেখযোগ্য শর্তাবলীর সুনির্দিষ্ট কার্য সম্পাদন করতে পারেন না।
উদাহরণঃ ‘ক’ একজন সঙ্গিত শিল্পী। ‘খ’ এর হোটেলে সঙ্গীত পরিবেশনের জন্য সে একটা চুক্তি করে। পরে কার্য সম্পাদন না করলে আদালত তাকে চুক্তিটি কার্যকর করতে বাধ্য করতে পারে না।
(৩) যে চুক্তির শর্তাবলী আদালত যুক্তি সঙ্গত নিশ্চয়তার সহিত নির্ণয় করতে পারেন না।
উদাহরণঃ ‘ক’ এর ছেলেকে বিদেশে পাঠাতে পারলে ‘খ’ একটা সোন চেন দিবে বলে চুক্তি করে। এক্ষেত্রে চুক্তির শর্ত অস্পষ্ট কেণনা সোনার পরিমাণ কত এবং বিদেশের কোথায় পাঠাতে হবে এটা স্পষ্ট নয়। তাই এ ধরণের চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আদালত নির্দেশ দিবেন না।
(৪) যে চুক্তি তার প্রকৃতিগত কারণে বাতিলযোগ্য।
উদাহরণঃ ‘ক’ ও ‘খ’ একটি অংশীদারী কারবার পরিচালনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। কিন্তু তাদের প্রত্যেকের অংশ এবং কারবারের স্থিতিকাল ছাড়াই চুক্তি করা হয়েছে। এই চুক্তি প্রকৃতির কারণেই সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।
(৫) জিম্মাদারের ক্ষমতার বাইরে কিংবা তাদের জিম্মাদারী চুক্তি ভঙ্গ করলে।
উদাহরণঃ কোন জমি ৭ বছরের জন্য ইজারা দিবার ক্ষমতা সম্পন্ন জিম্মাদার ‘ক’ ইজারা দিবার সময় ৭ বছরের শেষে নবায়নের চুক্তিসহ উক্ত জমি ‘খ’ কে ইজারা দিবার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। এই চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।
(৬) কোন সংস্থা অথবা বিশেষ উদ্দেশ্যে গঠিত পাবলিক কোম্পানীর দ্বারা বা পক্ষে অথবা সেই ধরণের কোম্পানীর উদ্দোক্তাগণের দ্বারা ক্ষমতা বহির্ভূত কোন চুক্তি হয়ে থাকলে।
উদাহরণঃ রেলপথ নির্মাণের উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত কোন কোম্পানী বস্ত্র মিলস্ নির্মাণের জন্য কোন জমি কেনার চুক্তি করলে ঐ চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় না।
(৭) যে চুক্তি কার্য সম্পাদন করতে হলে শুরু করার তারিখ হতে ক্রমাগত তিন বছরেরও বেশি সময়কাল কাজ করে যেতে হবে।
উদাহরণঃ মালেকের জমির উপর দিয়ে জলিল কর্তৃক নির্মিত রেলপথ মালেককে ব্যবহারের জন্য জলিল চুক্তিবদ্ধ হয়। আরো শর্ত থাকে যে, সমগ্র লাইনে মালেক গাড়ী চালাবে এবং জলিল ইঞ্জিন শক্তি সরবরাহ করবে ও লাইন সংরক্ষণ করবে। এই ধরণের চুক্তি কার্যকর করা যাবে না।
(৮) যে চুক্তির বিষয়বস্তুর উল্লেখযোগ্য অংশ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবার পূর্বেই বিলুপ্ত হয়েছে।
উদাহরণঃ ‘ক’ ও ‘খ’ কে আজীবন বার্ষিক বৃত্তি দিবার জন্য ‘গ’, ‘ঘ’ এর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়। পরে প্রকাশ পায় যে, চুক্তির সময় ‘ক’ জীবিত ছিল না। এই চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যাবে না।
COMMENTS