ভরণ-পোষণকে আরবীতে বলা হয় ‘নাফকাহ’। যা আইনের ভাষায়- All those things that are necessary to support life” অর্থাৎ জীবনকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য প্র...
ভরণ-পোষণকে আরবীতে বলা হয় ‘নাফকাহ’। যা আইনের ভাষায়- All those things that are necessary to support life” অর্থাৎ জীবনকে ঠিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয়কেই বোঝায়। সুতরাং ভরণ-পোষণ ‘Nafqah’ বলতে খাদ্য বস্ত্র ও বসবাসের স্থানকে বুঝায়। তবে বর্তমানের এর সঙ্গে শিক্ষার ব্যয় এবং শারিরীক ও মানসিক পুষ্টির জন্য অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়ও অন্তর্ভূক্ত। ভরণ-পোষণ শব্দের ইংরেজি হলো- Maintenance।
নিম্নে ভরণ-পোষণ সংক্রান্ত আইন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Who are entitled to maintenance under Muslim law?
মুসলিম আইনে কারা ভরণ-পোষণের অধিকারী?
ইসলামী আইনে এমন কারণ রয়েছে যার কারণে এক ব্যক্তির উপর অন্যজনের ভরণ-পোষণ প্রদান করা বাধ্যতামূলক। তা নিম্নরুপঃ
- বিবাহ (Marriage);
- সম্পর্ক (Relationship); এবং
- সম্পত্তি (Property)।
স্ত্রীর ভরণ-পোষণ/খোরপোশ
স্ত্রীর ভরণ-পোষণ প্রদান করা স্বামীর জন্য আইনগত কর্তব্য। তবে স্ত্রীকে স্বামীর বাধ্য থাকতে হবে। কেণনা, অবাধ্য স্ত্রী স্বামীর নিকট ভরণ-পোষণ দাবী করতে পারে না। এ মর্মে করাচি ও বোম্বে হাইকোর্টে নজীর (Precedent) রয়েছে। [(১৯৪২) করাচি ৫৩৫; (১৮৯৬) ২১ বোম্বে ৭৭-৮২)]
তবে, স্ত্রী বিশ্বস্ত হওয়ার পরেও স্বামী তার কর্তব্য হতে বিচ্যূত হলে স্ত্রী আদালতে ভরণ-পোষণ মামলার মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারে। এছাড়া স্বামী অপর স্ত্রী গ্রহণ করলে স্ত্রীর তার সাথে একত্রে বসবাস করতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা স্বামীর নিষ্ঠুরতার কারণে স্বামীগৃহ ত্যাগ করলেও ভরণ-পোষণ দাবী করতে পারে। এছাড়া তালাকের মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটলে স্ত্রী ইদ্দতকালীন সময়ের জন্য ভরণ-পোষ দাবী করতে পারে, তবে উক্ত সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে স্বামী আর খোরপোশ দিতে বাধ্য থাকে না। [Hefzur Rahman Vs. Samsun Nahar Begum 47 DLR (HCD) 1995; 54]
স্ত্রীর রক্ষণাবেক্ষণ বা ভরণ-পোষণের পরিমাণ সম্পর্কে হানাফী মাযহাবের আইনগ্রন্থ হেদায়ার ১৪০ পৃষ্টাতে বলা হয়েছে যে, স্ত্রীর খোরপোশের ক্ষেত্রে স্বামীর আর্থিক অবস্থা ও সামাজিক মর্যদা এবং স্ত্রীর মর্যদা বিবেচ্য বিষয়। কেণনা, কুরআনের সূরা বাকার ২৩৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-
Let him support her according to his ability অর্থাৎ স্বামী সামর্থ অনুযায়ী তার স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ প্রদান করবে।
অন্যদিকে, ১৯০৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধির ৪৮৮ ধারানুযায়ী আদালত স্ত্রীর ভরণ-পোষণের জন্য অনধিক মাসিক ৪০০ টাকা প্রদানের জন্য স্বামীর উপর আদেশ জারি করতে পারেন। বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে খোরপোশের নির্ধারিত ৪০০ টাকা অপ্রতুল।
শিশুদের ভরণ-পোষণ
আইন অনুযায়ী নাবালক সন্তান-সন্ততি পিতার নিকট হতে ভরণ-পোষণ লাভ করবে। মেয়ের বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত পিতা তার ভরণ-পোষণ দিতে বাধ্য। অন্যদিকে, ছেলে প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পরেও পঙ্গুত্ব বা অসুস্থতার কারণে অক্ষম (Disabled) হলে পিতার নিকট হতে আইনতঃ ভরণ-পোষণ পেতে পারে।
জ্ঞাতব্য যে, ইন্ডিয়ান সাবলকত্ব আইন, ১৮৭৫ (Indian Majority Act, 1875) অনুসারে, একজনকে সাবালক হিসেবে বিবেচনা করা হবে যে ব্যক্তি ১৮ বছর বয়স সম্পন্ন করেছে। কিন্তু মুসলিম আইন অনুসারে, সাবলকত্বের ন্যূনতম বয়স পুরুষের ক্ষেত্রে ১২ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ বছর।(হেদায়া, ৫২৯ পৃষ্ঠা)
পক্ষান্তরে, যদি কোন কারণ বশতঃ পিতার অবস্থা অস্বচ্ছল হয় এবং মাতা স্বচ্ছল হয়, তবে ছেলে-মেয়েরা মায়ের নিকট হতে ভরণ-পোষণ পাবার অধিকারী। এছাড়া পিতা-মাতা অসচ্ছল (গরীব ও অসমর্থ) হলে এবং পিতামহ (দাদা) স্বচ্ছল হলে ঐ সকল ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষণের দায়ভার তার উপর বর্তাবে।
আরোও উল্লেখ্য যে, অবৈধ সন্তানের (Illegitimate child) পিতা ঐ সন্তানের ভরণ-পোষণ দিতে আইনগতভাবে বাধ্য থাকে না।
পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ
পিতা-মাতা দরিদ্র হলে এবং পুত্র-কন্যা স্বচ্ছল (Solvent) হলে তাদের নিকট হতে কিছু ভরণ-পোষণ দাবী করতে পারেন। এছাড়া মাতা দরিদ্র হলে অসচ্ছল পুত্রের নিকট হতে আইনতঃ ভরণ-পোষণ আদায় করতে পারেন। তবে, মা বাবার ভরণ পোষণ আইন ২০১৩ (Parents Maintenance Act 2013) অনুযায়ী সন্তান পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ দিতে অস্বীকৃতি জানালে আইন লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে সন্তানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও রয়েছে। এই আইনে এক লাখ টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।
আরোও উল্লেখ্য যে, পিতামহ বা পিতাহী দরিদ্র হলে আপন স্বচ্ছল পৌত্রের নিকট হতে ভরণ-পোষণ দাবী করতে পারে। এ ক্ষেত্রে, স্বচ্ছল পৌত্রের জন্য পিতাকে ভরণ-পোষণ দেয়া যতখানি বাধ্যকর দরিদ্র পিতামহকে ততটুকু বাধ্য কর নয়। দায়িত্ব তদপেক্ষা কিছু কম।
আত্মীয়দের ভরণ-পোষণ
দরিদ্র আত্মীয় স্বজন সেই সকল আত্মীয়-স্বজনের নিকট হতে ভরণ-পোষণ দাবী করতে পারে যারা ঐ মৃত্যূর পর তার নিকট হতে উত্তরাধিকার লাভের অধিকারী। উত্তরাধিকারে তাদের অধিকার অনুপাতে তারা ভরণ-পোষণের দাবীদার হবেন।
COMMENTS