চুক্তি সম্ভবত আমাদের সমাজে সর্বাধিক পরিচিত আইনী ধারণা। কারণ এটি আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের মর্মের কেন্দ্রস্থল। তাই চুক্তি...
চুক্তি সম্ভবত আমাদের সমাজে সর্বাধিক পরিচিত আইনী ধারণা। কারণ এটি আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক জীবনের মর্মের কেন্দ্রস্থল। তাই চুক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার প্রাক্কালে আপনার জানা আবশ্যক যে, কি কি কারণে চুক্তি বাতিল হয়ে থাকে।
নিম্নে চুক্তি বাতিল হওয়ার কারণসমূহ সবিস্তারে আলোচনা করা হলো।
What are the reasons for the cancellation of the contract?
কি কি কারণে চুক্তি বাতিল হয়?
বাংলাদেশের চুক্তি আইন, ১৮৭২ অনুসারে নিম্নলিখিত চুক্তিগুলি বাতিলঃপ্রতিদান বিহীন চুক্তি
কোন প্রতিদান ছাড়ািই চুক্তি হয়ে থাকে, তবে চুক্তি আইনের ২৫ ধারা মতে কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া তা বাতিল হিসেবে পরিগণিত হবে। ব্যতিক্রমগুলি নিম্নরুপঃ
- পক্ষগণের মধ্যে নিকট আত্মীয়তা হেতু পারস্পারিক স্বাভাবিক স্নেহ ভালবাসার দরুন যদি কোন অঙ্গীকার করা হয় এবং লিখিতও রেজিস্ট্রি করা হয়।
- প্রতিশ্রুতিদাতার জন্য যদি কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে পূর্বেই কিছু করে থাকে অথবা আইনতঃ সে যা করতে বাধ্য উক্ত ব্যক্তি তা করে থাকে তবে তার জন্য পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার।
- তামাদি ঋণ আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে পরিশোধের নিমিত্ত প্রদত্ত লিখিত স্বাক্ষরিত অঙ্গিকার পত্র।
যোগ্যতাবিহীন ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত চুক্তি
চুক্তি আইনের ১১ ধারা অনুযায়ী যে সকল ব্যক্তির চুক্তি করার যোগ্যতা নাই সে সকল ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত চুক্তি সাধারণতঃ বাতিল। তাই নাবালক, উন্মাদ বা অপ্রকৃতিস্থ ব্যক্তি কিংবা কোন আইনে কারো চুক্তি করার যোগ্যতা খর্ব করা হয়েছে এরূপ ব্যক্তি কর্তৃক গঠিত চুক্তি বাতিল।
ভূল তথ্যের উপর গঠিত চুক্তি
চুক্তি আইনের ২০ ধারায় বলা হয়েছে যে, চুক্তিতে আবদ্ধ উভয় পক্ষ যদি চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোন তথ্যগত ভূল করে তবে তা বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। তবে চুক্তির বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভ্রান্ত মতামত তথ্য সম্পর্কিত ভূল বলে ধরা হবে না।
উদাহরণঃ
‘ক’ একটি ঘোড়া ‘খ’ এর নিকট বিক্রয়ের চুক্তি করলো। কিন্তু চুক্তি গঠনের সময় হয়তো সে ঘোড়াটি মারা গিয়েছে তা ক্রেতা বিক্রেতা কেউ জানতো না। এ ভূল তথ্যের জন্য চুক্তি বাতিল হয়ে যাবে।
প্রতিদান ও উদ্দেশ্য অবৈধ হলে
২৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন চুক্তির প্রতিদান বা উদ্দেশ্য যদি অবৈধ হয় তবে চুক্তিটি বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে প্রতিদান অবৈধ হবে তার বর্ণনাও উক্ত ধারায় দেয়া হয়েছে। উক্ত ধারানুসারে নিম্নলিখিত প্রতিদানগুলি অবৈধঃ
- যে সকল কাজ কোন আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, যদি আমগাছ কাটা নিষিদ্ধ হয় তবে আম কাঠের আসবাবপত্র সরবরাহের চুক্তি বাতিল।
- প্রচলিত আইনের কোন বিধানের পরিপন্থী কাজ। যেমন, বিয়ের পর স্ত্রীর তার পিতা-মাতার সাথে বসবাস করবে মর্মে কোন চুক্তি হলে তা মুসলিম আইনের পরিপন্থী। বিধায় এমন চুক্তি অবৈধ।
- কাজটি যদি প্রবঞ্চনামূলক (Fraudulent) হয়। যেমন, ‘ক’, ‘খ’, ও ‘গ’ যদি একটি ভূয়া কোম্পানী গঠন করে এবং স্থির হয় যে, তারা যে অতিরিক্ত লাভ করবে তা নিজের মধ্যে বন্টন করে নিবে। এটা অবৈধ।
- অন্যের শরীর বা সম্পত্তির ক্ষতি সাধন। যেমন, কারো শরীরে আঘাত করার জন্য বা অন্যের সম্পত্তির ক্ষতি সাধনের নিমিত্ত গঠিত চুক্তি অবৈধ।
- নৈতিকতা ও জননীতির বিরোধী কাজ। যেমন, পতিতাবৃত্তির নিমিত্ত চুক্তি করা অবৈধ।
বিবাহে বাধ্যতামূলক চুক্তি
চুক্তি আইনের ২৬ ধারা মোতাবেক নাবালক ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির বিয়ের ব্যাপারে বাধা নিষেধ আরোপের উদ্দেশ্যে যদি কোন চুক্তি গঠিত হয় তবে বাতিল হিসেবে গণ্য হবে।উদাহরণঃ
‘ক’ ও ‘খ’ এর মধ্যে যদি এই মর্মে কোন চুক্তি হয় যে, ‘ক’, ‘খ’ ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবে না, বা ‘খ’ এর মৃত্যূর পর ‘ক’ কাউকে বিয়ে করতে পারবে না, তবে সে চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে।
ব্যবসায় বাণিজ্যে বাধামূলক চুক্তি
চুক্তি আইনের ২৭ ধারানুসারে কারো বৈধ পেশা বা ব্যবসায়ের উপর বাধা-নিষেধ আরোপের উদ্দেশ্য গঠিত চুক্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে।
আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে বাধামূলক চুক্তি
নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠাকল্পে যে কেউ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। এই ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা নিষেধ আরোপিত যে কোন চুক্তি ২৮ ধারার বিধান মতে বাতিল বলে গণ্য হবে।
বাজীমূলক চুক্তি
বাজী সম্পর্কিত যে কোন ধরণের চুক্তি বাংলাদেশ চুক্তি আইনের ৩০ ধারা মতে বাতিল বলে ঘোষণা করা হয়েছে।
অনিশ্চয়তার চুক্তি
যে সকল চুক্তির অর্থ সুস্পষ্ট নয় কিংবা সুস্পষ্ট করা সম্ভব নয় সেগুলি ২৯ ধারামতে বাতিল।
অসম্ভব কাজ করার চুক্তি
যে কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব বা পরবর্তী সময়ে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতি অনুযায়ী সে কাজ সম্পন্ন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে তা চুক্তি আইনের ৩৫, ৩৬, এবং ৫৬ ধারানুযায়ী বাতিল।
COMMENTS