কনভেনশন একটি দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত, অনানুষ্ঠানিক এবং অরক্ষিত পদ্ধতিগত রীতিনীতি, যা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি অনুসরণ করে। সাধারণতঃ যে সব রাষ্ট্রে ল...
কনভেনশন একটি দীর্ঘ প্রতিষ্ঠিত, অনানুষ্ঠানিক এবং অরক্ষিত পদ্ধতিগত রীতিনীতি, যা রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলি অনুসরণ করে। সাধারণতঃ যে সব রাষ্ট্রে লিখিত সংবিধান নাই, সেখানে রাষ্ট্র কীভাবে কাজ করে তা বুঝতে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতিগুলি সহায়তা করে।
নিম্নে ব্রিটেনের সাংবিধানিক কাঠামোতে শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতির ভূমিকা ও অবস্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Role of Conventions in the UK Constitution
যুক্তরাজ্যের সংবিধানে কনভেনশনের ভূমিকা
গ্রেট ব্রিটেনে এমন কতগুলি সাংবিধানিক রীতিনীতি গড়ে উঠেছে যা পার্লামেন্ট কর্তৃক আইন হিসেবে স্বীকৃত হয় নাই কিংবা আদালত কর্তৃক বলবৎযোগ্য নয় অথচ আইনের ন্যায় মর্যদা লাভ করেছে এবং সাংবিধানিক কাঠামোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত হয়ে পড়েছে।জেনিংস এর মতে, ইহা বৃটিশ সংবিধানের মূল চালিকা শক্তি। এগুলোর মাধ্যমেই আইন বাস্তবায়িত হয়। মার্শাল ও মুডির মতে, শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বলতে এমন কতগুলি প্রথাকে বুঝায়, যা শাসনতন্ত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকের জন্য মেনে চলা বাধ্যতামূলক, কিন্তু ইহা আদালতে বলবৎযোগ্য নয়।
রাজার সাথে মন্ত্রীদের এবং মন্ত্রীদের সাথে পার্লামেন্টের সম্পর্ক, পার্লামেন্টের কার্যপদ্ধতি, পার্লামেন্টের অধিবেশন, ইত্যাদি অনেক বিষয় শাসনতান্ত্রিক কনভেনশনের অন্তর্ভূক্ত। এগুলিকে শাসনতন্ত্রের অলিখিত বিধান বা শাসনতান্ত্রিক প্রথা হিসেবে অভিহিত করা হয়। এগুলি আইনের পরিপূরক হিসেবে কাজ করে। শুধু তাই নয়, এগুলি আইনের প্রয়োগকে নিয়ন্ত্রন করে। পরিবর্তনশীল অবস্থার সহিত আইনকে খাপ খাওয়ানোর জন্য কনভেনশনগুলি ব্যবহার করা হয়। আইন ভঙ্গ করলে শাস্তির ভয় থাকে, কিন্তু কনভেনশন ভঙ্গ করলে জনমতের চাপ থাকে এবং জনগণ বিক্ষুব্ধ হতে পারে।
মোটের উপর, পরিবর্তনশীল সামাজিক মূল্যবোধের সাথে আইন ব্যবস্থা ও শাসন ব্যবস্থার একটি ভারসম্য রক্ষা করার উদ্দেশ্যেই যুক্তরাজ্যে সাংবিধানিক কনভেনশন গড়ে উঠেছে এবং সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
গ্রেট ব্রিটেনে চার ধরণের শাসনতান্ত্রিক রীতিনীতি বা সাংবিধানিক রীতিনীতি পরিলক্ষিত হয়। এগুলি নিম্নরুপঃ
(১) রাজার বিশেষ ক্ষমতা ও মন্ত্রী পরিষদ সম্পর্কিত
উদাহরণঃ (ক) রাজা বা রাণী কমন্সসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতাকে মন্ত্রী পরিষদ গঠন করতে আমন্ত্রন জানান।
(খ) প্রধান মন্ত্রির সুপারিশক্রমে রাজা বা রাণী অন্যান্য মন্ত্রীদেরকে নিয়োগ করে থাকেন।
(গ) রাজা কখনো ভোটো প্রয়োগ করেন না।
(২) পার্লামেন্ট সম্পর্কিত
উদাহরণঃ (ক) বছরে কমপক্ষে একবার পার্লামেন্টের অধিবেশন বসবে।
(খ) অর্থ সংক্রান্ত বিল কমন্স সভায় পেশ করা হয়।
(গ) কমন্স সভা ও লর্ডস সভার মধ্যে কোন বিরোধ দেখা দিলে কমন্স সভা প্রাধন্য পায়।
(৩) ডোমিনিয়ন সম্পর্কিত
উদাহরণঃ (ক) ডোমিনিয়ন মন্ত্রীসভার পরামর্শ ব্যতিরেকে রাজা বা রাণী ডোমিনিয়নের গভর্ণর জেনারেল নিয়োগ করেন না।
(খ) ডোমিনিয়নের পরামর্শ ব্যতিরেকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ডোমিনিয়ন জনগণের জন্য কোন আইন প্রণয়ন করে না।
(৪) মন্ত্রীপরিষদ সম্পর্কিত
উদাহরণঃ (ক) প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীপরিষদের প্রধান হিসেবে গণ্য। তিনি কমন্স সভার সদস্যও বটে।
(খ) মন্ত্রীপরিষদের সদস্যগণ ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগতভাবে পার্লামেন্টের নিকট দায়ী থাকেন এবং পার্লামেন্টের আস্থা হারালে পদত্যাগ করতে হয়।
COMMENTS