ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া হলো রোমান আইনবিদ আলপিয়ান কর্তৃক প্রণীত আইনী প্রবাদের (Maxim) ল্যাটিন রূপ, যা বিশ্বজুড়ে আইনী প্রতিরক্ষা (Legal defe...
ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া হলো রোমান আইনবিদ আলপিয়ান কর্তৃক প্রণীত আইনী প্রবাদের (Maxim) ল্যাটিন রূপ, যা বিশ্বজুড়ে আইনী প্রতিরক্ষা (Legal defence) হিসাবে স্বীকৃত। এটি বাংলাদেশসহ ইংলিশ কমন ল’ সিস্টেম, স্কটিশ আইন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার আইনে পাওয়া যায়।
নিম্নে ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া মতবাদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What is volenti non-fit injuria?
ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া কি?
কারো সম্মতিক্রমে কোন কার্য সম্পদিত হলে এবং এর ফলে কোন ক্ষতি হলে সম্মতিদানকারী কোন অভিযোগ করতে পারে না। এটা যে নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত তাকে বলে ভলেন্ট নন্ ফিট ইনজুরিয়া। বাদী যে অধিকার স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে পরিত্যাগ করেছে সে অধিকার আর সে বলবৎ করতে পারে না। তাই মুষ্ঠিযুদ্ধে আহত হলে বা ডাক্তার অস্ত্রোপচার করলে টর্ট আইনে কাউকে দায়ী করা যায় না।
ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া মতবাদ প্রয়োগ কালে প্রাথমিক স্তরে যে প্রশ্নটি আসে তা হলো সংশ্লিষ্ট কাজের ঝুঁকি সম্পর্কে বাদীর জানা ছিল কিনা এবং জ্ঞাতসারেই তার সম্মতি দিয়েছিল কিনা। কাজেই এই মতবাদটি প্রয়োগের জন্য নিম্নোক্ত দু’টি শর্ত প্রয়োজনঃ
- অবগতি (Knowledge); এবং
- প্রকৃত সম্মতি (Real Consent)।
অবগতি (Knoledge)
কোন্ কাজ কিরূপ ঝুঁকিপূর্ণ তা বাদীর সম্পূর্ণ জানা প্রয়োজন। কাজটি ঝুঁকিপূর্ণ না এর আনুষঙ্গিক বিষয়গুলি ঝুঁকিপূর্ণ তা বাদীকে জানতে হবে। এছাড়া ঝুঁকির মাত্রা ও এর পরিণতি সম্পর্কে জানার জন্য বাদীকে পরিণত বুদ্ধি-মত্তা সম্পন্ন হতে হবে। ঝুঁকিপূর্ণ কাজ জানা থাকলেও চলবে না, বাদীর স্বাধীন সম্মতিও প্রয়োজন।
Smith Vs. Baker & sons, [(1891) AC 325] মামলার ঘটনায় জানা যায় যে, বাদী একটি ঝুঁঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় মুহূর্তে বাদীকে সতর্ক করা হয় নাই। তাই এই নীতিটি সফলভাবে প্রয়োগ করা যায় নাই, অর্থাৎ বাদী সেক্ষেত্রে জয়লাভ করে।
রাস্তায় চলাফেরা করা কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও সকলে চলাফেরা করে তাই বলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি আইনগত প্রতিকার হতে বঞ্চিত হয় না।
প্রকৃত সম্মতি (Real Consent)
বাদীর সম্মতি ব্যক্ত বা অব্যক্ত হতে পারে। ব্যক্ত সম্মতির ক্ষেত্রে সাধারণতঃ কোন সমস্যা হয় না। যে ব্যক্তি তার আঙ্গিনায় চলাফেরা করতে অনুমতি দেয় সে ব্যক্তি পরে ট্রেসপাশের (Trespass) মামলা করতে পারে না। ব্যক্ত সম্মতির ক্ষেত্রেও বাদী জয়লাভ করতে পারে যদি বিবাদী অসতর্কভাবে বা ইচ্ছাকৃতভাবে বাদীর ক্ষতি সাধন করে। তাই মুষ্ঠিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সুস্পষ্ট সম্মতি দিলেও নিয়মবিরুদ্ধ ও ইচ্ছাকৃত অন্যায় আঘাতের প্রতিকার পেতে পারে। নিয়ম অন্তর্ভূক্ত মুষ্টির জন্য সম্মতি দেয়া থাকে, কিন্তু নিয়ম বহির্ভূত অন্যায় মুষ্ঠির জন্য কেউ সম্মতি দেয় না।
অনুরূপভাবে, অব্যক্ত (Implied) সম্মতির ক্ষেত্রেও ইচ্ছাকৃত আঘাতের জন্য কারো সম্মতি থাকে না। তাই খেলার মাঠে দর্শক হিসেবে গেলেও বলের আঘাত লাগতে পারে এটা সকলের জানা। কাজেই একটা বল হঠাৎ কারো গায়ে এসে পড়লে তার জন্য কাউকে দায়ী করা যায় না। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে কেউ দর্শককে বলের আঘাত করলে সেক্ষেত্রে বাদীর সম্মতি ধরা যায় না। যাইহোক, প্রতিটি ক্ষেত্রে পরিস্থিতির আলোকে বিচার করতে হবে।
এছাড়া সম্মতি বাস্তব (Real) ও স্বাধীন (Free) হতে হবে। কোন নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে বাদীর প্রকৃত সম্মতি ধরা যায় না। তাই পথিমধ্যে এক ছোট মেয়েকে দুর্ঘটনা হতে রক্ষা করা নৈতিক কর্তব্য বিধায় কোন ব্যক্তি এরূপ কাজে প্রবৃত্ত হয়ে যদি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, তবে এতে তার প্রকৃত সম্মতি ছিল যায় না।
অনুরূপভাবে, কোন পুলিশ কনষ্টেবল একটা দুরন্ত ঘোড়ার কবল হতে কোন মহিলা ও তার সন্তানকে রক্ষা করায় প্রচেষ্টায় আহত হলে তার কার্য স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও তার সম্মতি প্রকৃত তা বলা যায় না।
স্বাধীন সম্মতি প্রদান সম্ভব যখন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি স্বাধীনভাবে চিন্ত ভাবনার সুযোগ পায় এবং তার উপরে কোন বাধ্যবাধকতা থাকে না। তাই অবৈধ প্রভাব, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতারণার মাধ্যমে সম্মতি আদায় করলে তা প্রকৃত সম্মতি হয় না।
সীমাবদ্ধতা
ভলেনটি নন ফিট ফিট ইনজুরিয়ার প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত সীমাবদ্ধতা রয়েছেঃ
- অবৈধ কাজ (Unlawful Act): কোন অবৈধ কাজ সম্মতি দ্বারা বৈধ করা যায়, অর্থাৎ অবৈধ কাজে সম্মতিদান প্রকৃত সম্মতি নয়।
- বিবাদীর অবহেলা (Negligence of the defendant): বিবাদীর সতর্কতার দায়িত্ব থাকলে অবহেলার জন্য তাকে দায়ী হতে হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে বাদীর সম্মতি প্রকৃত ও গ্রহণযোগ্য নয়।
- বিধিবদ্ধ আইন লঙ্ঘন (Breach of statutory duty): বিধিবদ্ধ আইনের বিধান অনুযায়ী অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে ভলেনটি নন্ ফিট ইনজুরিয়া মতবাদটি প্রযোজ্য হবে না।
- উদ্ধার কাজ (Rescue case): উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করলে তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ঝুঁকি গ্রহণ বলা যায় না। তাই নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব পালনে ঝুঁকি গ্রহণ করলে সেক্ষেত্রে বাদীর প্রকৃত সম্মতি ধরা যায় না।
- বিকল্প বিপদ পরিস্থিতি (Situation of alternative danger): বিবাদীর কাজের ফলে “বিকল্প বিপদ” পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বাদী ক্ষণিকের চিন্তায় একটা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করলেও তা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বলে চিহ্নিত করা যায় না।
COMMENTS