একটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের (আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ) মধ্যে বিচার বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, দেশের উৎকর্ষ সাধনে বিচার ব্যবস্থাকে সর...
একটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের (আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ) মধ্যে বিচার বিভাগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং, দেশের উৎকর্ষ সাধনে বিচার ব্যবস্থাকে সর্বদা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব ও নিয়ন্ত্রনমুক্ত রাখা জরুরী। তবে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত মোবাইল কোর্ট বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সম্মুখ আঘাত।
নিম্নে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নের্তৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে আলোচনা করা হলো।
Executive magistrate-led mobile court illegal
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত অবৈধ
বিচার বিভাগ পৃথকীকরণের দাবি ব্রিটিশ আমল থেকে হয়ে আসছে কিন্তু বিভিন্ন সময়ে এর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকৃতপক্ষে ফলপ্রসূ কিছুই হয় নি। অবশেষে, প্রখ্যাত মাসদার হোসেন বনাম বাংলাদেশ, ১৯৯৯ মামলার রায়ের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্ট কি কি করণীয় তা বর্ণনা দিয়ে সরকারকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতৃত্বে জোট সরকার, লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কেউ এগুলি বাস্তবায়ন করে নি। শেষে সরকারের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিলে তড়িঘড়ি করে ফকরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার ১৮৯৮ সালের কার্যবিধি সংশোধন পূর্বক নিম্ন আদালতগুলোকে নির্বাহী বিভাগ হতে ২০০৭ সালের নভেম্বরে বিচার বিভাগকে পৃথক করে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকলেও তারা এখন আর বিচারিক কার্যাবলী সম্পাদন করেন না। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, বিভিন্ন সময়ে তারা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে থাকে, যা সম্পুন্নভাবে অসাংবিধানিক। শুধু তাই নয়, বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতায়ন করা বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় সম্মুখ আক্রমণ এবং ক্ষমতা বিচ্ছিন্নকরণ তত্ত্বের লঙ্ঘনকারী।
প্রশ্ন আসতে পারে যদি গ্রাম আদালত, ২০০৬ অনুসারে, অপরাধের দায়ে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে কিংবা একজন ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট The Motor Vehicles Ordinance, 1983 অনুযায়ী জরিমান করতে পারেন, তবে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কেন পারবেন না?
এই প্রশ্নের সহজ উত্তর হলো- গ্রাম আদালতের ক্ষতিপূরণ আর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক শাস্তিমূলক জরিমানা এক নয়। সুতরাং গ্রাম আদালতের সাথে ভ্রাম্যমান আদালতের তুলনা অনার্থক। অন্যদিকে, একজন ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট কেবল বিধান লঙ্ঘনকারীকে নির্ধারিত পরিমাণের অর্থ জরিমানা করতে পারে; কিন্তু ঘটনাস্থলে আদালত বসিয়ে কাউকে দোষী সাব্যস্ত বা দন্ড ঘোষণা করতে পারে না।
উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ২০০৯ সালে “গ্রাম ন্যায়ালয়” চালু করেছে, যা প্রথম শ্রেণীর বিচারিক হাকিম দ্বারা পরিচারিত হয়ে থাকে। অনুরূপভাবে, UNDP এর অর্থায়নে সিরালিওয়ন, কঙ্গো এবং সোমালিয়াতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে, যা রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের মধ্যে ক্ষমতা বিচ্ছিন্নকরণের নীতির সাথে যথাযথভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
সর্বোপরি, পাকিস্তানে আইন অনুসারে বিভিন্ন ধরণের ভ্রাম্যমাণ আদালতও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে তাদের কেউই তাৎক্ষণিক ফৌজদারি কার্যক্রম পরিচালনা করে না। কারণ প্রবাদ আছে, “Justice hurried is justice buried” অর্থাৎ দ্রুত বিচারে ন্যায়বিচার সমহিত হয়।
ফলে, রীটের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৭ সালের ১১ই মে, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নের্তৃত্বে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকে অবৈধ ও সংবিধানের সহিত সাংঘর্ষিক বলে রায় দেন। বর্তমানে সুপ্রীম কোর্টের আপীলেট বিভাগ কর্তৃক রায়টি স্থগিত করা হয়েছে, তবে তা বাতিল করা হয়নি। তাই ভ্রাম্যমাণ আদালতের বৈধতা বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ।
COMMENTS