সাধারণত কোন ক্রিয়া বা কর্মের বিধিকে আইন বলে। এর কোন সর্বজন স্বীকৃত বা সকলের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নাই। এর পরিধি এবং ক্ষেত্রের ব্যাপকতা লক্ষ্য কর...
সাধারণত কোন ক্রিয়া বা কর্মের বিধিকে আইন বলে। এর কোন সর্বজন স্বীকৃত বা সকলের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা নাই। এর পরিধি এবং ক্ষেত্রের ব্যাপকতা লক্ষ্য করে কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দ্বারা এর ক্ষেত্র সীমাবদ্ধ করা সম্ভবপর হয় নি।
সাম্প্রতিকালের প্রখ্যাত মার্কিন আইনবিজ্ঞানী জন চিপম্যান গ্রে বলেন যে, নাগরিকদের বৈধ অধিকার ও কর্তব্য নির্ধারণের জন্য আদালত যে সকল বিধিবিধান মেনে চলেন, তা হচ্ছে আইন। নিউজিল্যান্ডের আইনবিজ্ঞানী স্যামন্ড আইনকে নিম্নোক্ত শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেনঃ
- অনুজ্ঞাসূচক আইন (Imperative Law);
- প্রাকৃতিক আইন (Physical Law);
- নৈতিক আইন (Moral Law);
- প্রচলিত আইন (Conventional Law);
- প্রথাগত আইন (Customary Law);
- কারিগরী আইন (Technical Law);
- আন্তর্জাতিক আইন (International Law); এবং
- রাষ্ট্রীয় আইন (Law of the state বা Civil Law)।
তবে, উপরোক্ত আইনসমূহের মধ্যে আন্তর্জাতিক আইনকে প্রচলিত আইন হিসেবে বিবেচনা করে থাকে। সুতরাং আন্তর্জাতিক আইন প্রচলিত আইন কিনা সে ব্যপারে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Whether international law is conventional law?
আন্তর্জাতিক আইন প্রচলিত আইন কিনা?
স্যামন্ডের মতানুসারে প্রচলিত আইন বলতে সে সকল বিধিকে বুঝায় যা কতিপয় ব্যক্তি বা একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠী তাদের মধ্যে পারস্পারিক লেনদেনের ক্ষেত্রে মেনে চলতে স্বীকৃত থাকে। দুই বা ততোধিক ব্যক্তির মধ্যে যদি কোন চুক্তি হয়ে থাকে তবে সেই চুক্তি সম্পর্কিত বাধ্যবাধকতা চুক্তিভূক্ত পক্ষগণের উপরই প্রযোজ্য হয়।
তাই প্রচলিত আইন যেখানে রয়েছে সে সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের সম্মতি আছে তা ধরে নেয়া যায়। তাই কোন ক্লাবের সদস্যগণ ঐ ক্লাবের নিয়ম নীতি মেনে চলে। একইভাবে ফুটবল, ক্রিকেট ইত্যাদি খেলায় অংশগ্রহণকারী খোলোয়াড়গণ ঐ সকল খেলার নিয়মাবলী মেনে বলতে বাধ্য থাকে।
অন্যদিকে, বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহের পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে সকল নীতিমালা ও বিধি-বিধান সাধারণভাবে বাধ্যতামূলক বলে স্বীকৃত ও প্রতিপালিত হয়, তাকে আন্তর্জাতিক আইন বলা যেতে পারে। কোন বিষয়ে রাষ্ট্রসমূহের অধিকার এবং এ সকল অধিকার সংরক্ষণ করার উপায় ইত্যাদি সম্পর্কে আন্তর্জাতিক আইন নির্দেশ প্রদান করে থাকে।
এছাড়া আইনের প্রকৃতি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ থাকার কারণে আন্তর্জাতিক আইনের প্রকৃতি সম্পর্কেও বিভিন্ন মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে। স্যামন্ডের মতানুসারে, এগুলি হচ্ছেঃ
- প্রাকৃতিক আইন মতবাদ (Natural Law Theory),
- প্রথাগত আইন মতবাদ (Customary Law Theory),
- অনুজ্ঞাসূচক আইন মতবাদ (Imperative Law Theory), ও
- প্রচলিত আইন মতবাদ (Conventional Law Theory)।
শেষোক্ত মতবাদ ইংল্যান্ডের আদালত কর্তৃক ব্যাপকভাবে গৃহীত হয়েছে। একটি নতুন রাষ্ট্রের উদ্ভব হলে এবং অপর রাষ্ট্র কর্তৃক তা স্বীকৃত হলে তা আন্তর্জাতিক আইনের আওতাধীন হয়। যেমন, সমাজে যেমন একাকী মানুষ বাস করতে পারে না, বিশ্ব সমাজেও একটি রাষ্ট্র একা একা চলতে পারে না। অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে লেনদেনের প্রয়োজন হয় এবং পারস্পারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নির্ধারিত নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয়। এ জন্য কোন লিখিত চুক্তি না থাকলেও একটা অপ্রকাশ্য বা অব্যক্ত সম্মতি থাকে যার উপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক দায়-দায়িত্বের সৃষ্টি হয়ে থাকে।
সেই জন্য অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক আইন প্রচলিত আইন বা Conventional Law এর অংশ বিশেষ।
COMMENTS