এখানে সংক্রামক রোগ বিস্তার ও বিস্তারে সহায়তা এবং স্বাস্থ্যবিধি না মানলে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কি কি শাস্তি হতে পারে তা বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির ফলে সরকার সারাদেশে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে। এই বিধিনিষেধকালীন সময় বাড়ীর বাইরে যাওয়ার সময় প্রত্যেককে অবশ্যই একটি মাস্ক পরতে হবে। একই সাথে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৮ দফা এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের ১১ দফাসহ সকল ধরণের স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে হবে।
এই সরকারী আইন লঙ্ঘনকারী যে কাউকে ২০১৮ সালের সংক্রামক রোগ আইন এবং ১৮৬০ সালের দন্ডবিধি আইনের মুখোমুখি হতে হবে। সংক্রামক রোগ আইনে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া ১৮৬০ এর দন্ডবিধিতে জেল ও জরিমানার বিধান রয়েছে।
নিম্নে আপনাদের সুবিধার্থে স্বাস্থ্যবিধি অমান্যের আইনানুগ শাস্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Legal punishment for violating hygiene rules
স্বাস্থ্যবিধি অমান্যে আইনানুগ শাস্তি
বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই সরকারী আদেশ অমান্যকারীদের সাজা/শাস্তি দেয়ার জন্য ভ্রাম্যমান আদালত গঠন করা হয়েছে। এমনকি চলমান করোনা প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল কোর্ট অভিযান অব্যহত রয়েছে।
গত ৮ এপ্রিল, মঙ্গলবার র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাজধানীর মতিঝিল শাপলা চত্বরে একটি অভিযান চালায় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ১৮ দফা এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ১১ দফা নির্দেশের অমান্য করার জন্য ২৫ জনকে ১২,১০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছিল।
অন্যদিকে, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অহেতুক বাইরে ঘোরাফেরাকীদের ২৫ জনকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযানে অনেককে জরিমানা দিতে হয়েছে।
কাজেই স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনে যেসব সাজা বা শাস্তি হতে পারে তা নিম্নরুপঃ
সংক্রামক রোগ বিস্তার ও বিস্তারে সহায়তার শাস্তি
সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন ২০১৮ এর ২৪ ধারায় বলা হয়েছে-
২৪ (১): যদি কোনও ব্যক্তি সংক্রামক জীবাণু ছড়ান বা ছড়িয়ে পড়াতে সহায়তা করে, বা অন্য ব্যক্তির সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকিকে গোপন করে যখন সে কোনও সংক্রামিত ব্যক্তির সাথে যোগাযোগ করে বা সুবিধা জেনেও যোগাযোগ করে, তবে সেই ব্যক্তির এ জাতীয় আচরণ হবে একটি অপরাধ।
(২) কোন ব্যক্তি যদি উপধারা (১) এর অধীন কোন অপরাধ করে থাকে, তবে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ মাস বা অনধিক ১ (এক) লক্ষ টাকা কিংভা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
দায়িত্ব পালনে বাধা ও নির্দেশনাবলী মেনে চলতে অসম্মতির সাজা
দায়িত্ব পালনে বাধা এবং নির্দেশাবলী মেনে চলতে অস্বীকার করার জন্য অপরাধ এবং দন্ড আইনের ২৫ ধারায় বলা হয়েছে-
২৫(১) যদি কোনও ব্যক্তি
(ক) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা অনুমোদিত অফিসারকে তার ওপর অর্পিত যে কোনও দায়িত্ব পালনে প্রতিবন্ধকতা বা বাধা দেয় এবং
(খ) মহাপরিচালক, সিভিল সার্জন বা অন্য কোনও অনুমোদিত কর্মকর্তা কর্তৃক সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলের লক্ষ্যে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসরণ করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন, তবে এই জাতীয় ব্যক্তির অনুরূপ কাজটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
(২) কোন ব্যক্তি যদি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোন অপরাধ করে থাকে, তবে তিনি অনূর্ধ্ব ৩ মাস কারাদন্ডে বা অনধিক ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
মিথ্যা বা ভুল তথ্য সরবরাহের জন্য অপরাধ এবং জরিমানা
২৬ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে-
২৬(১) সংক্রামক রোগ সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানার পরেও যদি কোনও ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা বা ভুল তথ্য দেয়, তবে উক্ত ব্যক্তির এ জাতীয় আচরণ একটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।
(২) কোন ব্যক্তি যদি উপধারা (১) এর অধীন কোন অপরাধ করে থাকে, তবে তিনি অনুর্ধ্ব ২ (দুই) মাসের কারাদন্ডে বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।
দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর আওতায় শাস্তি
সরকারী কর্মচারীর দ্বারা আইনসঙ্গতভাবে জারি করা আদেশ অমান্য করার দণ্ড-
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১৮৮ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তি যদি কোন আদেশ জারী করার ব্যাপারে বিধিসঙ্গতভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন সরকারী কর্মচারী কর্তৃক জারীকৃত আদেশে তাকে কোন বিশেষ কাজ করা থেকে বিরত থাকতে বা তার দখলে বা ব্যবস্থাপনায় থাকা যে কোনও সম্পত্তির বিষয়ে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে জানা সত্ত্বেও অনুরূপ নির্দেশ অমান্য করে,
যদি অনুরূপ অবাধ্যতার ফলস্বরূপ আইনীভাবে নিযুক্ত কোনও ব্যক্তির বিঘ্ন ঘটায়, বিরক্তি সৃষ্টি করে বা ক্ষতিগ্রস্থ হয় বা বাধা, বিরক্তি বা ক্ষতির ঝুঁকি থাকে, তবে তিনি অনূর্ধ্ব ১ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে, বা অনধিক দুইশত টাকা জরিমানা কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
যদি অনুরূপ অবাধ্যতার ফলস্বরূপ মানবদেহ, স্বাস্থ্য বা সুরক্ষা বিপন্ন হয় বা একই রকম বিপদ বা দাঙ্গা বা কলহের আশংকা দেখা দেয়, তবে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ মাস বা অনধিক এক হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোন কার্য দ্বারা একটি প্রাণঘাতী রোগ ছড়াতে পারে জেনেও অবহেলা বশতঃ তা করার শাস্তি-
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২৬৯ ধারাতে বলা হয়েছে যে, যদি কোনও ব্যক্তি বেআইনীভাবে বা গাফিলতির সাথে এমন কোনও কাজ করে যা জীবন বিপন্নকারী রোগ ছড়িয়ে দিতে পারে, তা জানা বা বিশ্বাস থাকা সত্ত্বেও সে কাজ করে, তবে তিনি অনূর্ধ্ব ৬ মাস সশ্রম বা বিনাশ্রম বা কারাদন্ডে বা অর্থদন্ডে, অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
COMMENTS