আধুনিক জীবনে যানবাহনের কোন বিকল্প নেই। ঘর হতে বেরিয়েই আমাদের কোন না কোন যানবাহনে চড়তে হয়। কাজেই রাস্তায় মোটরযান চালাতে হলে আমাদের জানতে হবে...
আধুনিক জীবনে যানবাহনের কোন বিকল্প নেই। ঘর হতে বেরিয়েই আমাদের কোন না কোন যানবাহনে চড়তে হয়। কাজেই রাস্তায় মোটরযান চালাতে হলে আমাদের জানতে হবে মোটরযান সংক্রান্ত আইন এবং ড্রাইভিং কালীন সময়ে কাছে রাখতে হবে ড্রাইভিং লাইসেন্স, ইন্সুরেন্স এবং গাড়ির বিভিন্ন নথি। কেণনা, যে কোন সময় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা মোটরযান সম্পর্কিত পেপারস দেখতে চাইতে পারেন।
সুতরাং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজাদি দেখাতে ব্যর্থ হলে হতে পারে বিভিন্ন মেয়াদী জেল-জরিমানা। এমনকি আমাদের খুব প্রিয় অনুষঙ্গটি থানায় বা ডাম্পিংয়েও যেতে পারে।
নিম্নে মোটরযান সম্পর্কিত কিছু দরকারী আইন আলোচনা করা হলো।
Some useful law for motor vehicles
মোটরযানের দরকারি কিছু আইন
ভারতীয় উপমহাদেশে সর্বপ্রথম মোটরযান আইন ১৯৩৯ সালে প্রণীত হয়েছিল। পরবর্তীতে যুগের চাহিদা মেটাতে এই আইনের আরেকটি অধ্যাদেশ ১৯৮৩ সালে পাস হয়। তবে সেটিও যে এখন মান্ধাতার আমলের; তা বলা বাহুল্য।
তার পরেও রাস্তায় যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, চালক এবং যানবাহনের মালিকদের দায়বদ্ধতা সহ বিভিন্ন ইস্যুতে মোটরযান আইন, ১৯৮৩ (২৯ শে নভেম্বর, ১৯৯০ পর্যন্ত সংশোধিত) এ বিভিন্ন বিধান রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর কোন প্রয়োগ নেই। এমনকি অধিকাংশ গাড়ি চালকের ট্রাফিক আইন সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই। ফলে, আমাদের দেশে প্রতিনিয়তিই সড়ক দুর্ঘনা বেড়েই চলেছে। মোটরযান সংক্রান্ত যে আইনগুলি আপনাকে জানতে হবে তা নিম্নরুপঃ
মোটরযান চালকের যোগ্যতা
মোটরযান আইনের ৪ ধারার বিধান অনুযায়ী, ২০ বছরের কম বয়সী কোনও ব্যক্তি পেশাদার চালকের আসনে বসতে পারবেন না। এছাড়া অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানো একটি দন্ডনীয় অপরাধ।
আইনের ১৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোন ব্যক্তি লাইসেন্সবিহীন কোন মোটরযান বা যাত্রীবাহী মোটরযান চালায় বা মোটরযান অন্যকে চালাতে দেয়, তবে তিনি সর্বোচ্চ ৪ মাসের কারাদন্ড অথবা ৫০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।
চালকের পাশাপাশি সহকারী চালকেরও লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। আইনানুযায়ী, এই ধরণের অপরাধের ক্ষেত্রে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা বিনা ওয়ারেন্টে অভিযুক্ত চালককে গ্রেপ্তার করতে পারবেন।
গাড়ির শ্রমিক
গাড়িতে চালক ছাড়াও এক বা একাধিক মোটরযান শ্রমিক থাকে। গাড়িতে যাত্রীদের কাছে থেকে গাড়ীভাড়া আদায়কারীকে সাধারণত কন্ডাক্টর বলা হয়। আইনের ২৩ ধারা অনুযায়ী একজন গাড়ির কন্ডাক্টরের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে এবং কন্ডাক্টরের লাইসেন্স থাকতে হবে। কোনও পঙ্গু বা অসুস্থ ব্যক্তি কন্ডাক্টর হিসাবে গাড়িতে কাজ করতে পারবে না।
মোটরযানের নিবন্ধন
মোটরযান আইনের ৩২ ধারার অধীনে মোটরযান নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। কাজেই যদি যানবাহনটি নিবন্ধিত না হয়ে থাকে এবং নিবন্ধের চিহ্নটি গাড়ীতে যথাযথভাবে সেটে না দেয়া হয়, তবে সে মোটরযানে যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করা যাবে না।
মোটরযানের গতিসীমা
রাস্তার পাশে গাড়ির নির্ধারিত গতিসীমা সংক্রান্ত নির্দেশিকা থাকা সত্ত্বেও, অনেক ড্রাইভার তা অমান্য করে নিজের ইচ্ছামতো গতি বাড়ায়। মোটরযান আইনের ১৪২ ধারা অনুসারে, এই ধরনের গতিসীমা নির্দেশিকাকে উপেক্ষা করে দ্রুতগতিতে মোটরযান চালালে অভিযুক্ত ব্যক্তি প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ১ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৩০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে অনুরূপ অপরাধেরর জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডিত হবেন এবং অনধিক ১ মাসের জন্য ড্রাইভিং লাইসেন্স বাতিল হতে পারে।
এছাড়াও আইনের ৯৫ ধারাতে বলা হয়েছে যে, চালক রাস্তার বিপজ্জনক স্থানে অর্থাৎ ঢালু জায়গায় গাড়ী থামাতে পারবেন না। ধারা ৯৬ ও ৯৭ অনুযায়ী, গাড়ির চালক বা কন্ডাক্টর চলন্ত যানবাহনে বা বাম্পার বা ছাদে অর্থাৎ ভিতর ব্যতীত অন্য কোনও স্থানে কাউকে আরোহন করতে দিতে পারবেন না এবং নির্ধারিত বা অনুমোদিত সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিতে বা বহন করতে পারবেন না।
উপরোক্ত আইনভঙ্গে প্রথমবারের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ২০০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। পরবর্তীতে অনুরূপ অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দন্ডিত হবেন।
নির্ধারিত লেনে যানবাহন চালানো
আইন অনুসারে, যানবাহনের চালককে যথাসম্ভব রাস্তার বাম পাশে নির্ধারিত লেনে গাড়ি চালাতে হবে এবং বিপরীত দিক থেকে আগত সমস্ত যানবাহনকে ডান পথে যেতে দেবেন। ড্রাইভার যদি কোনও মিছিল বা সৈন্যদল বা ঐ রাস্তায় কর্মরত পুলিশের সম্মুখীন হন কিংবা রাস্তা মেরামতকর্মীদের পাশ দিয়ে যান, তবে গাড়ির গতি প্রতি ঘন্টায় ১৫ মাইলের বেশি করা যাবে না।
চালক এমনভাবে গাড়ি চালাবেন যাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। দুটি গাড়ি অতিক্রম করার সময়, একে অপরকে আঘাত না করার বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল এলাকা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় চালককে সব দিক লক্ষ্য রাখতে হবে এবং নির্ধারিত গতিসীমা ছাড়িয়ে দ্রুতগতিতে গাড়ি চালানো যাবে না।
অধিকন্তু, যে সব মোটরযান পাবলিক প্লেসে চালানো যাবে না তা নিম্নরুপঃ
- নিবন্ধনপত্রে পণ্য বা যাত্রী বোঝাইবিহীন অবস্থায় যে ওজন নির্ধারিত হয়েছে তার বেশি ওজনের যানবাহন।
- নিবন্ধনপত্র অনুসারে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি ওজনের যানবাহন।
- নিবন্ধনপত্রে নির্ধারিত হওয়া ওজন এক্সেলের চেয়ে বেশি ওজন এক্সেলের যানবাহন।
যত্রতত্র যানবাহন থামানো
যেখানে সেখানে যানবাহন দাড় করা যাবে না বা যাত্রী ওঠা-নামা করা যাবে না। নির্দিষ্ট জায়গার বাইরে গাড়ি পার্কিং করার জন্য জরিমানা এবং নির্দিষ্ট জায়গা ব্যতীত অন্য কোনও জায়গা থেকে যাত্রী উঠানোর জন্য জরিমানা দিতে হবে। নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি টাকা আদায় করলে ৫০/= টাকা জরিমানা দিতে হবে এবং সময় সীমা না দেখিয়ে গাড়ি চালালে ৩০/= টাকা জরিমানা দিতে হবে।
মোটরযান আইনের ৯২ ধারানুসারে, প্রত্যেক ড্রাইভারকে বাধ্যতামূলকভাবে ট্র্যাফিক সিগন্যাল মানতে হবে। ট্র্যাফিক পুলিশ চাইলে চালক গাড়ির কাগজপত্র দেখাতে বাধ্য থাকবেন। রাস্তায় পথচারী ক্রসিংয়ের নির্ধারিত সীমানায় ড্রাইভারকে অবশ্যই নির্ধারিত লাইন বরাবর গাড়ি থামাতে হবে।
মদ্যপ ও শারীরিক অনুপযু্ক অবস্থায় যানবাহন চালানো
মদ পান করে গাড়ি চালানো যাবে না। সুতরাং কোন ব্যক্তি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালালে মোটরযান আইনের ১৪৪ ধারানুসারে প্রথমর অপরাধের জন্য অন্যূন ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১০০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এছাড়া দ্বিতীয় ও তৎপরবর্তী সময়ে অনুরূপ অপরাধের জন্য অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ড বা ১০০০/= টাকা বা উভয়ই দন্ডে দন্ডিত হবেন। উভয় ক্ষেত্রেই চালকের লাইসেন্স স্থগিত করা হবে।
অন্যদিকে, মানসিক বা দৈহিকভাবে অনুপযুক্ত কোন ব্যক্তি যানবাহন চালালে মোটরযান আইনের ১৪৫ ধারানুসারে প্রথমবার অপরাধের জন্য ৫০০/= টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন এবং তার ড্রাইভিং লাইসেন্স নিদিষ্ট মেয়াদে বাতিল করা হইবে।
আরও কিছু বিধিনিষেধ এবং সাজা
যানবাহন নিবন্ধন, ফিটনেস বা রুট পারমিট ছাড়াই যানবাহন ব্যবহার করলে মোটরযান আইনের ১৫২ ধারা অনুযায়ী প্রথমবার অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৩ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা অনধিক ২০০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন মালিক বা চালক। পরবর্তী সময়ে অনরূপ অপরাধ সংঘটিত করলে সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০০০/= টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। ওভারটেকিং নিষিদ্ধ এলাকায় চালক যদি ওভারটেক করে, তবে তাকে ১০০/= টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
COMMENTS