প্রেম, Secret affairs বা গোপন সম্পর্ককে কুরআন মাজিদের সূরা নিসার ২৫ নম্বর আয়াতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরেও বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- চোরা ন...
প্রেম, Secret affairs বা গোপন সম্পর্ককে কুরআন মাজিদের সূরা নিসার ২৫ নম্বর আয়াতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। তারপরেও বাংলায় একটি প্রবাদ আছে- চোরা না শুনে ধর্মের কাহিনী। ফলে, প্রেমে পড়ে প্রতারিত হওয়ার সংখ্যা এই দেশে নেহায়েত কম নয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- প্রেমে প্রতারিত হলে আপনার করণীয় কি?
নিম্নে এ ব্যাপারে আইনী প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Legal remedy if cheated in love
প্রেমে প্রতারিত হলে আইনি প্রতিকার
প্রেমে পড়ে প্রতারিত হলে দেয়া উপহারগুলো ফেরত চাওয়া ছাড়া কিছুই করার নাই। কেণনা, এ দেশের প্রচলিত আইনে প্রেম বা Affairs এর কোন বৈধতা নেই। আবার কোন আইন দ্বারা প্রেমকে অবৈধ ঘোষণাও করা হয় নি। কিন্তু প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কোন পক্ষ যদি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তবে ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষ আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
আবার প্রায়শই দেখা যায় যে, প্রেমিক যুগল স্বেচ্ছায় দেহিক মিলনে লিপ্ত হয় এবং প্রেম ভেঙ্গে গেলে সঙ্গি ধর্ষণের মামলা করে থাকে। সুতরাং পুরুষদের অবশ্যই এই সম্পর্কে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। যাই হোক, এবার দেখা যাক প্রেমে প্রতারিত হলে আইনে কি প্রতিকার রয়েছে-
প্রেমের সম্পর্কে প্রতারণামূলকভাবে অর্থ বা সম্পদ আত্মসাৎ
যদি প্রেমিক যুগলের কোন এক পক্ষ অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করে এবং বিশ্বাস অর্জন করে অপর পক্ষের অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেয়, তাহলে বাংলাদেশে প্রচলিত দন্ডবিধির ৪১৫-৪২০ ধারানুযায়ী তা প্রতারণা হিসেবে বিবেচিত হবে।
দন্ডবিধির ৪১৫ ধারাতে বলা হয়েছে-
কোন ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারো উপর প্রভাব খাটিয়ে তার কোন কিছু হাতিয়ে নেয় (তার সম্মতিতে করলেও) সেটা প্রতারণা হবে। উপরোক্ত প্রতারণার জন্য দন্ডবিধির ৪১৭ ধারার অধীনে এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কিংবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন।
আবার যদি কোনও ব্যক্তি মূল্যবান সম্পত্তির ক্ষেত্রে একই কাজ করে, তবে তিনি দন্ডবিধির ৪২০ ধারায় দোষী হবেন এবং সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদন্ড হতে পারে।
মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রেম করে প্রতারণা
যদি কোন ব্যক্তি অন্য কোন ব্যক্তির নকল হিসেবে নিজেকে পরিচিত করে এবং সেই পরিচয়ে কারো সাথে প্রেম করে ধোঁকা দেয় বা প্রতারণা করে, তবে দন্ডবিধির ৪১৬ ধারা অনুযায়ী সে অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে। এর জন্য তার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে।
আর যদি কেউ অনুরূপ অপরাধ ডিজিট্যাল মাধ্যম (ফেসবুক, ফোন, ইন্টারনেট ইত্যাদি) ব্যবহার করে সংঘটিত করে, তবে ডিজিট্যাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮ এর ২৪ ধারায় অপরাধী সাব্যস্ত হবে এবং সেক্ষেত্রে সে ৫-৭ বছর কারাদন্ড সাথে ৫ লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ডে দন্ডিত হবে।
এছাড়াও ডিজিট্যাল সিকিউরিটি আইন, ২০১৮ এর ধারা ২২ ও ২৩ এ ডিজিট্যাল মাধ্যম ব্যবহার করে জালিয়াতি ও প্রতারণার শাস্তি বর্ণনা করা আছে।
বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারিরীক সম্পর্ক
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, একজন পুরুষ সঙ্গী বিয়ের প্রলোভন বা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তার নারী সঙ্গীকে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে প্রলুব্ধ করে। পরবর্তীতে যখন পুরুষটি তার প্রতিশ্রুতি করে না, ঠিক তখনই নারীটি আদালতে গিয়ে পুরষটির বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা ঠুকে দেন।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত পক্ষে ধর্ষণ হয়েছে কিনা সেই প্রশ্ন ওঠে। কারণ যদি দুজন প্রাপ্ত বয়স্ক নারী ও পুরুষ উভয়ের পারস্পারিক সম্মতিতে সঙ্গম হয়ে থাকে, তবে তা কোন অপরাধের মধ্যে পড়ে না।
এ ব্যাপারে হানিফ সেখ বনাম আছিয় বেগম মামলায়, যা ৫১ ডিএলআরের ১২৯ পৃষ্ঠায় এবং অন্য একটি মামলায়, যা ১৭ বিএলটি’র পৃষ্ঠায় রয়েছে, মহামান্য সুপ্রীম কোর্ট মন্তব্য করেন যে, যদি কোনও পুরুষ ১৬ বছরের অধিক বয়সী কোনও নারীকে বিয়ের প্রলোভনে প্রলুব্ধ করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে, তবে তা ধর্ষণের আওতায় আসবে না।
ফলে, যদি নারীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অমতে, বল প্রয়োগে কিংবা ভয় দেখিয়ে বা বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে মর্মে শঠতা করে শারীরিক সম্পর্ক তৈরী করা না হয়, তবে এই ধরণের মামলা টিকবে না।
পক্ষান্তরে, ভিকটিম যদি ১৬ বছরের কম বয়সী হয়, তবে তা ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হবে। কারণ এই বয়সী মেয়েরা সম্মতি দেয়ার মত সক্ষমতা রাখে না। এক্ষেত্রে দন্ডবিধির ৩৭৫ ও ৩৭৬ ধারা অনুযায়ী অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদন্ড হতে পারে।
ভূয়া বিয়ে ও শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন
বাংলাদেশে প্রায়ই দেখা যায় যে, অনেকে চার পাশের অনেক জিনিষ যেমন, আকাশ, বাতাশ, গাছপালা, তরুলতা ইত্যাদিকে স্বাক্ষী রেখে কিংবা ভূয়া বিয়ে করে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং পরবর্তীতে তা অস্বীকার করে। আবার কোন ব্যক্তি কোন স্ত্রীলোকের স্বামী নয় জেনেও নিজেকে তার স্বামী হিসেবে উপস্থাপন করে এবং সেই স্ত্রীলোক তার সাথে দৈহিক সম্পর্কে লিপ্ত হয়।
আবার অনেক সময় নারীরা না বুঝেই প্রতারিত হয় এবং অসহায় হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতির শিকার হলে আইনে যথাযথ ব্যবস্থা আছে। এ ব্যাপারে দন্ডবিধির ৪৯৩ ধারাতে বলা হয়েছে-
যদি কোন ব্যক্তি কোন নারীকে প্রতারণামূলকভাবে তার বৈধ বিবাহিত স্ত্রী বলে বিশ্বাস জন্মায় অথচ সে নারী আদৌ তার স্ত্রী নয় এবং তাকে যৌনসঙ্গম করার জন্য প্রবৃত্ত করে, তবে অপরাধী দশ বছর পর্যন্ত যে কোন মেয়াদের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদন্ড সাথে অর্থদন্ডে দন্ডিত হবেন।
COMMENTS