আপনার এক খন্ড জমি একই গ্রামের কোনও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সে দখলকৃত জমির দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য জাল দ...
আপনার এক খন্ড জমি একই গ্রামের কোনও একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। শুধু তাই নয়, সে দখলকৃত জমির দাবি প্রতিষ্ঠার জন্য জাল দলিলও করে ফেলেছে। এমতাবস্থায় আপনি জমির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য দেওয়ানি আদালতে মামলা ঠুুকে দিলেন। এদিকে দেওয়ানি মামলা চলতে থাকল বছরের পর বছর। ইতিমধ্যে, জবরদখলকারী ব্যক্তি আপনার অগোচরে তৃতীয় এক ব্যক্তির নিকট ঐ মামলাকৃত সম্পত্তিটি বিক্রি করে ফেলে।
এখন যদি মামলার শেষে আদালতের রায় আপনার পক্ষে আসে, তবে আপনি কার কাছে গিয়ে জমির মালিকানা দাবি করবেন? আপনি যদি আপনার প্রতিবেশীর কাছে গিয়ে জমি চান তবে তিনি বলবেন যে, এটি বিক্রি হয়ে গেছে। অন্যদিকে, যার কাছে এটি বিক্রি করা হয়েছে তার কাছে জমির দাবি নিয়ে গেলে সে হয়তঃ বলবে, আমি এ জমি টাকা দিয়ে অমুকের কাছ থেকে কিনেছি। এখন প্রশ্ন হলো- এ ধরণের জটিলতার সমাধানে আইন কি বলে?
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Is it possible to transfer property during the case?
মামলা চলাকালে সম্পত্তি হস্তান্তর কি সম্ভব?
বাংলাদেশে অন্যের সম্পত্তি জোর করে দখল ও ভোগের ঘটনা নেহায়েত কম নয়। তাছাড়া জবরদখলকৃত সম্পত্তি আদালতে প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় তৃতীয় পক্ষের নিকট হস্তান্তর নিতান্তই মামুলি ব্যাপার। সাধারণত মামলার রায় যে পক্ষের বিপক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা হয়, সেই পক্ষ তাড়াহুড়া করে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বাজার মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে সেই সম্পত্তি হস্তান্তরের চেষ্টা করে থাকে। তাই আসুন জেনে নেয়া যাক এ সংক্রান্ত আইনি বিধান।
এই জাতীয় জটিলতা নিরসনে আইনের মূলনীতি হলো- যদি কোনও সম্পত্তি আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় থাকে, তবে মামলাকালীন সময়ে আদালতের অনুমতি ব্যতীত সেই সম্পত্তি হস্তান্তর করা যাবে না।
এছাড়া, কমন ল’ এর একটি সুপ্রতিষ্ঠিত নীতি হলো- মামলা রুজু অবস্থায় নতুন কোনও পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটানো উচিত নয়। সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫২ ধারায় এই নীতিটিকে লিস পেন্ডেন্স বা Suit pending নামে একটি বিধিবদ্ধ আইন করা হয়েছে। আর ৫২ ধারার মূল বক্তব্য হলো মামলার অন্তর্ভুক্ত সম্পত্তি যদি মামলা চলাকালীন অবস্থায় স্থানান্তরিত হয়, তবে এর ফলাফল মামলার ফলাফলের উপর নির্ভর করবে।
সম্পত্তি হস্তান্তর আইন, ১৮৮২ এর ৫২ ধারায় বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বা বাইরে এখতিয়ারবিশিষ্ট কোন আদালতে স্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে কোনও মামলা বা কার্যক্রম চলাকালীন উক্ত মামলা বা কার্যক্রমটি ষড়যন্ত্রমূলক না হলে এবং তাতে সম্পত্তির স্বত্বাধিকার সম্পর্কে প্রত্যক্ষ এবং সুনির্দিষ্টভাবে প্রশ্নটি উত্থাপন করা হলে উক্ত মামলার বা কার্যক্রমের কোনও পক্ষই আদালতের অনুমতি ব্যতীত উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তর বা অন্য কোনভাবে ব্যবহার করতে পারবে না, যার ফলে আদালতের কোনও ডিক্রি বা আদেশ দ্বারা প্রাপ্ত কোনও পক্ষের কোনও অধিকারকে ক্ষুন্ন করবে। তবে, আদালত যদি অনুমতি দেয় বা আদালত কোনও শর্ত আরোপ করে, তবে সেই শর্ত অনুযায়ী তা হস্তান্তর করা যেতে পারে।
এছাড়া, ৫২ ধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এই ধারার উদ্দেশ্যে আরজি জমা দেয়ার বা মামলার প্রক্রিয়া আরম্ভ হওয়ার তারিখ হতে আদালতের চূড়ান্ত ডিক্রী জারি হয়ে সম্পূর্ণ দায় পরিশোধ না হওয়া অবধি বা তামাদি কাল অতিক্রান্ত হয়ে যাওয়ার দায় পরিশোধের সময় না হওয়া অবধি মামলা বা কার্যক্রম চলমান বলে ধরে নিতে হবে।
আরোও উল্লেখ্য যে, শ্রী মনোরঞ্জন বণিক ও অন্যান্য বনাম শ্রী নিত্যরঞ্জন কর্মকার এবং অন্যন্য (৩৯ ডিএলআর, ৭৫ পৃষ্ঠা) মামলায় বলা হয়েছে, Pre-emption বা অগ্রক্রয়ের মামলা দায়ের হওয়ার পর খারিজের আবেদনও মামলার কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং এ ক্ষেত্রে ‘লিস পেনডেন্স’ বা Suit pending নীতি প্রযোজ্য হবে।
সর্বোপরি বলা যায় যে, মামলাকৃত জমি বা সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয়ে আইনী বাধা রয়েছে।
COMMENTS