আপনার ছেলে-মেয়েদের মধ্য হতে কোন একজন ছেলে বা মেয়ে একই এলাকার বা পার্শ্ববর্তী এলাকার জনৈক ব্যক্তির ছেলে বা মেয়েকে ভালবাসে। তাদের এ ভালবাসাকে ...
আপনার ছেলে-মেয়েদের মধ্য হতে কোন একজন ছেলে বা মেয়ে একই এলাকার বা পার্শ্ববর্তী এলাকার জনৈক ব্যক্তির ছেলে বা মেয়েকে ভালবাসে। তাদের এ ভালবাসাকে বাস্তবে রূপ দিতে তারা একে অপরকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নেয়। আর সাবালক/সাবালিকা হিসেবে তাদের এ ধরণের সিদ্ধান্ত নেয়ার আইনগত অধিকারও আছে। সেই অধিকারের ভিত্তিতে তারা স্বেচ্ছায়, স্বজ্ঞানে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
অবশেষে, আপনি জানতে পারেন যে, যে ব্যক্তির ছেলে বা মেয়ের সঙ্গে আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে হয়েছে, সে আপনার চিরশত্রু। ফলে, উভয় পরিবারের অভিভাবকদে কাছে এ সম্পর্ক বাধা হয়ে দাড়ায়। এমতাবস্থায়, আপনি ক্ষিপ্ত হয়ে আপনার ছেলে বা মেয়েকে সম্পত্তি হতে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে ত্যাজ্য ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিলেন।
এখন প্রশ্ন হলো- আসলেই কি সন্তানকে ত্যাজ্য করা যায়? পিতা-মাতা সন্তানকে ত্যাজ্য করলেই কি সম্পত্তি থেকে উত্তরাধিকার হারাবে? এ ব্যাপারে আইন কি বলে?
আপনাদের সুবিধার্থে এ সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Does the child lose the inheritance if abandoned?
সন্তানকে ত্যাজ্য করলেই কি উত্তরাধিকার হারায়?
আমাদের সমাজে প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি হলো- কোনও পিতা-মাতা যদি তার সন্তানকে ত্যাজ্য ঘোষণা করেন, তবে সেই সন্তান চিরকাল তার পিতামাতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত থাকবে। ফলে, অনেকে দুই শত টাকার নন-জুডিশিয়্যাল স্ট্যাম্পে হলফ নামার মাধ্যমে এবং নোটারী পাবলিকের সামনে অবাধ্য সন্তানকে ত্যাজ্য ঘোষণা করে ঘোলা জলে মাছ শিকারের চেষ্টা করেন। তবে প্রচলিত আইনে ত্যাজ্যপুত্র ঘোষণার কোনও ভিত্তি নেই। এটি নিছক একটি ভুল ধারণা। সুতরাং পুত্র-কন্যা কেবল ত্যাজ্য ঘোষণার মাধ্যমে ত্যাজ্য হয় না। এটি একটি জনশ্রুতিমাত্র। নাটক-সিনেমায় এগুলি ঘটে থাকে। বাস্তবে এ ধরণের ঘোষণার আদৌ কোন ভিত্তি নেই।
মুসলিম পারিবারিক আইনে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, একজন মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি কে কতটুকু পাবে। মুসলিম আইন অনুসারে, জন্মসূত্রেই সন্তান সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার অর্জন করে এবং কোনওভাবেই এই অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা সম্ভব না।
তবে যে কোনও পিতা-মাতা তাদের সম্পত্তি দান, উইল বা বিক্রয়ের মাধ্যমে যে কারও কাছে হস্তান্তর করতে পারে। এখানে উল্লেখ্য যে, মুসলিম আইনের অধীনে এক-তৃতীয়াংশের অধিক সম্পদ উইলের মাধ্যমে হস্তান্তর করা যায় না। উইল মূলতঃ উইলকারীর মৃত্যূর পর কার্যকর হয়।
অন্যদিকে, যদি কোনও পিতামাতা জীবদ্দশায় তাদের সম্পত্তি যথাযথ উপায়ে অন্য কোনও ব্যক্তিকে সম্পত্তি দান বা বিক্রয় না করেন, তবে মৃত্যুর পরে তাদের সন্তানরা সেই পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারী হিসাবে অবারিতভাবেই অংশীদার হবে। সুতরাং কোনও দলিল বা হলফনামার মাধ্যমে ত্যাজ্য করার ঘোষণা আইনের দৃষ্টিতে অচল এবং আদালতের মাধ্যমে এটি কার্যকর করার কোন সুযোগ নেই।
ঘটনাক্রমে যদি কারো ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে যে, পিতা-মাতা সন্তানদের ত্যাজ্য ঘোষণা করে মৃত্যূ বরণ করেছেন এবং সেজন্য অন্যান্য ওয়ারিশগণ তাদের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছে, তাহলে সেক্ষেত্রে সন্তানেরা আইনের আশ্রয় নিতে পারে। এই ক্ষেত্রে, ১৮৯৩ সালের বাটোয়ারা আইনের অধীনে পাঁচশত টাকা কোর্ট ফি দিয়ে দেওয়ানি আদালতে মামলা রুজু করা যেতে পারে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, নিতান্তই যদি কোন পিতা-মাতা তাদের অবাধ্য কোন সন্তানকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করতে চান, তাহলে জীবদ্দশায় তাদের সম্পত্তি অন্য কাউকে দান করতে হবে কিংবা বিক্রি করে সম্পত্তির দখল হস্তান্তর করতে হবে। তানাহলে বাবা-মা তাদের নিজের নামে যেটুক সম্পত্তিই রেখে যান না কেন, তাদের মৃত্যুর পরে তাদের বৈধ উত্তরাধিকারীরা সেই সম্পত্তির অংশীদার হবে।
প্রচলিত আইনে নরহত্যাজনিত অপরাধের জন্য (ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভূল করে হত্যা করলে) নিহত ব্যক্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। এছাড়া কোন ব্যক্তি যদি ধর্মান্তরিত হয় অর্থাৎ নিজ ধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য ধর্ম গ্রহণে করে, তাতেও সে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকেও বঞ্চিত হবে।
অন্যদিকে, হিন্দু আইনেও সম্পত্তির অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কিছু বিধান আছে। যথাঃ
- ধর্মান্তরিত হওয়া;
- দুশ্চরিত্র হওয়া;
- শারীরিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়া;
- নরহত্যা; এবং
- সন্ন্যাসী হলে।
তবে, ১৮৫০ সালে Caste Disabilities Removal Act পাস হওয়ার ফলে ভারতে ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে কেউ সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবে না। অন্যদিকে, মুসলিম আইনে কেবল নরহত্যার ক্ষেত্রেই উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।
COMMENTS