ইসলামী শরীয়তের চতুর্থ রোকন হলো ছওম বা রোজা। আর তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনই রোজা বা ছিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য। তবে অনেকেই এই উদ্দেশ্য হাছিলে ব্যর্থ...
ইসলামী শরীয়তের চতুর্থ রোকন হলো ছওম বা রোজা। আর তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জনই রোজা বা ছিয়াম সাধনার উদ্দেশ্য। তবে অনেকেই এই উদ্দেশ্য হাছিলে ব্যর্থ হয়ে থাকে। যেমনভাবে, “অনেক কুরআন পাঠকারীকে কুরআন অভিশাপ করে।” (এহয়াউল উলুম) তেমনিভাবে, “অনেক রোজাদারের রোজা হতে ক্ষুৎ-পিপাসা ব্যতীত কোনই লাভ হয় না।” (নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ)
এ সব ব্যর্থতার মূল কারণ হলো- কলব বা হৃদয়ের রুগ্নতা, অর্থাৎ হজরত নবী করীম (সাঃ) এর সুন্নাহকে মনে-প্রাণে গ্রহণ না করা এবং সে অনুযায়ী আ’মল না করা। যেমন, সুন্নাহ সম্মত একটি আ’মল হলো- রমজানে সেহরী ও ইফতারে খেজুর ভক্ষণ করা। কিন্তু অনেকের মধ্যে এ ব্যাপারে উদাসীনতা পরিলক্ষিত হয়। অথচ, হজরত নবী করীম (সাঃ) একেকটি সুন্নাহ অসংখ্য রহস্যে ভরা এবং উম্মতের জন্য ফলদায়ক।
কাজেই সেহরী ও ইফতারে খেজুর খাওয়ার প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
The secret of eating dates in Sehri and Iftar
সেহরী ও ইফতারে খেজুর খাওয়ার রহস্য!
হাদিছে কুদসীতে বলা হয়েছে- “রোজা আমার জন্য এবং আমি স্বয়ং তার পারিতোষিক দান করব” (বোখারী ও মুসলিম)। এছাড়া পবিত্র রমজান মাস অত্যন্ত সম্মানী। কেননা, এই মাসে নামাজ, জেকের, ছদকা ইত্যাদি প্রকারের যে- কোন নফল এবদাত করা হোক না কেন, তা অন্য মাসের ফরজের তুল্য মূল্য রাখে। এছাড়া এই মাসের ফরজ এবাদত সমূহ অন্য মাসের ফরজের সত্তর গুণ অধিক মূল্য রাখে। রমজান মাসের রোজা সারা বছরের গোনাহর কাফ্ফারা বা ক্ষতিপূরণ স্বরুপ।
কেউ যদি এই মাসে কোন রোজাদার ব্যক্তিকে খানা ও ইফতার করায় আল্লাহপাক তাকে ক্ষমা করে দোযখ হতে মুক্তিদান করবেন এবং উক্ত রোজাদারের ছাওয়াবের অনুরূপ ছাওয়াব তাকেও দান করবেন। এছাড়া এই মাসে কেউ যদি অধীনস্থ কর্মচারীদের কাজ কমিয়ে দেয়, তবে তাকেও আল্লাহপাক ক্ষমা করবেন এবং দোযখ হতে মুক্তিদান করবেন।
হজরত নবী করীম (সাঃ) এই মাসে বন্দীদের মুক্তিদান করতেন এবং তাঁর নিকট যে- যা প্রার্থনা করত তা প্রদান করতেন। হাদিছে বলা হয়েছে যে, এই মাসে কাউকে আল্লাহতায়ালা যদি নেক কাজ করার তৌফিক দান করেন, সে বৎসর ধরে নেক কাজ করার সুযোগ পাবে; কিন্তু এই মাসে যদি অশান্তিতে অতিবাহিত হয়, তবে বৎসর ভরে তার অশান্তিই চলবে। (দুর্রে মানশুর; ১/৩৭৭)
অতএব, প্রত্যেক মোমিনের যথাসাধ্য প্রফুল্ল চিত্ত ও শান্তির সাথে এই মাস অতিবাহিত করার চেষ্টা করা উচিত এবং এই মাসকে আল্লাহতায়ালার যথেষ্ট নেয়ামত মনে করা উচিত। এই মাসের প্রত্যেক রাতে যে- কতশত দোযখীদের দোযখ হতে রেহাই দেয়া হয়, তা বলাই বাহুল্য। এই মাসে বেহেশতের দুয়ার সমূহ উন্মুক্ত এবং দোযখের দুয়ার সমূহ আবদ্ধ করে রাখা হয়। শয়তানদেরকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করে রাখা হয় এবং রহমতের দুয়ারগুলি খুলে রাখা হয়। (মুত্তাফাকুন আলায়হি)
পবিত্র মাহে রমজানের রোজা ইসলামের অনিবার্য্য ও অত্যবশ্যকীয় কার্য্য। সাবধানতার সাথে ইহা পালন করা উচিত। সামান্য কারণে রোজা ভঙ্গ করা যুক্তিসঙ্গত নয়। পয়গম্বর (সাঃ) বলেছেন যে, “রোজা দোজখের অগ্নি হতে রক্ষার জন্য ঢাল স্বরুপ।” জরুরী বিঘ্ন যথাঃ অসুস্থতা ইত্যাদি কারণে যদি রোজা ভঙ্গ হয় তাহলে উহার ‘কাজা’ অবিলম্বে আদায় করা আবশ্যক। অবহেলা ও দীর্ঘসূত্রতা করা উচিত নয়।
সেহরী ও ইফতারের সময়
অবিলম্বে ইফতার এবং অতি বিলম্বে সেহরী করা রাসূল (সাঃ) এর সুন্নাত, তিনি এ বিষয় বিশেষ তাগিদ করেছেন। বোধ হয় বিলম্বে সেহরী ও অবিলম্বে ইফতার করার মধ্যে অবশ্য বান্দার অক্ষমতা ও মুখাপেক্ষিতার পরিচয় পাওয়া যায়, যা বন্দেগীর মাকামের উপযোগী। অবিলম্বে ইফতার এবং বিলম্বে সেহরী করার আরোও একটি রহস্য এই যে, এতে খাদ্যদ্রব্য পূর্ণরূপে ভক্ষকের উপকারী হবার সুযোগ পেয়ে থাকে।
খেজুর দ্বারা ইফতারের কারণ
খোরমা বা খেজুর দিয়ে ইফতার করা সুন্নাত। হজরত নবী করিম (সাঃ) বলেছেন যে, “তোমাদের মধ্যে যখন কেউ ইফতার করে, তখন যেন সে খেজুর দিয়ে ইফতার করে। যেহেতু নিশ্চয় এতে ‘বরকত’ আছে” (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজী ও দারেমী)। হজরত (সাঃ) স্বয়ং খেজুর দিয়ে রোজার ইফতার করতেন।
এর ‘বরকত’ এই যে, এই খেজুর গাছ মানবের ন্যায় সঙ্গিভূতি ও সরলতা হিসেবে সৃষ্ট। এই কারণে পয়গম্বর (সাঃ) মানব জাতীর ‘পিতৃস্বসা’ (Patriarchy) বলেছেন। কেননা উহা আদম (আঃ) এর অবশিষ্ট মাটি দ্বার গঠিত। যেমন হাদিছ শরীফে বলা হয়েছে, “তোমরা তোমাদের পিতৃস্বসা (ফুফী) খেজুর গাছের সম্মান করিও, যেহেতু উহা আদম (আঃ) এর অবশিষ্ট কাদা-মাটি দ্বারা সৃষ্ট” (তাফসীরে কাবির, ৬/৪০১; মসনাদে আবু ইয়া’লা)।
এই সমষ্টিভূতির কারণেই সম্ভবতঃ উহার নাম ‘বরকত’ রাখা হয়েছে। উহার ফল খেজুর দিয়ে ইফতার করলে তা ইফতারকারীর দেহের অংশ হয় এবং উহার সমষ্টিভূত্তি তত্ত্ব ভক্ষণকারীর তত্ত্বের অংশ হয়ে থাকে।
এছাড়া হজরত নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, মোমিনের উৎকৃষ্ট সেহরী (শেষ রাতের খানা) খেজুর” (আবু দাউদ, মিশকাত শরীফ)। সেটাও এই অর্থে হতে পারে যে, এটা ভক্ষণকারীর দেহের অংশ হয়ে তার তত্ত্বের পূর্ণতা সাধন করে; খাদ্যের তত্ত্বের পূর্ণতা সাধন উদ্দেশ্য নয়। ইহা যখন রোজার অবস্থায় চলে না, তখন উহার দ্বারা সেহরী করে ক্ষতিপূরণের প্রতি উৎসাহ দিয়েছেন। ইহা ভক্ষণ করা যাবতীয় আহার্য্য বস্তু ভক্ষণ করার তুল্য হয় এবং উহার সমষ্টিভূতির কারণে উহার বরকত (আগামী) ইফতারের সময় পর্যন্ত চলতে থাকে।
ইফতারের পরে পাঠ্য দোওয়া
তারাবীহ নামাজ ও কুরআন খতম
এই মাসে তারাবীহের নামাজ পাঠ করা এবং কুরআন মাজিদ খতম করা সুন্নাতে মোয়াক্কাদা। এতে অসংখ্য ফল লাভ হয়ে থাকে। কুরআন মাজিদের সাথে এই মাসের ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে। “রমজান ঐ মাস যাতে কুরআন মাজিদ অবতীর্ণ হয়েছে” (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)। এই মাসে লায়লাতুল কদর বা শবে কদর আবার উহার সারাংশ। উহা যেন মজ্জা এবং মাসটি যেন উহার ত্বক স্বরুপ।
ইতিকাফ
আল্লাহপাক তারঁ হাবীব (সাঃ) এর অছিলায় আমাদেরকে উক্ত কার্য্য সমূহ সমাধা করার সুযোগ দান করুন। আমাীন।
COMMENTS