বাংলাদেশ, ইরান ও পাকিস্তানের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হওয়ায় এখানে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ও বৈবাহিক ক্ষেত্রে মুসল...
বাংলাদেশ, ইরান ও পাকিস্তানের মত সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হওয়ায় এখানে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন ও বৈবাহিক ক্ষেত্রে মুসলিম পারিবারিক আইন অনুসৃত হয়ে থাকে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে কোন মানুষের শারীরিক অক্ষমতা কিংবা জন্মগত ত্রুটি তাকে সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত করে না। তবে বৈবাহিক ক্ষেত্রে মুসলিম আইনে কিছু বাধা-নিষেধ রয়েছে।
সুতরাং নিম্নে হিজড়াদে সম্পত্তি ও বৈবাহিক অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Right to property and marriage as Transgender
হিজড়াদের সম্পত্তি ও বৈবাহিক অধিকার
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে হিজড়াদের তৃতীয়লিঙ্গ (Transgender) হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারী তাদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি প্রদান করে গেজেট পাস করা হয়। হিজড়া বলতে এমন মানুষকে বুঝায় যার পুরুষ ও নারী উভয় শ্রেণীর অঙ্গ আছে অথবা কোনটিই নেই। আরবীতে হিজড়াদের বলা হয় “খুনছা”। হিজড়াদের সম্পত্তি ও বৈবাহিক অধিকার নিমরুপঃ
হিজড়াদের সম্পত্তিতে উত্তরাধিকার
মুসলিম আইনে সম্পত্তিতে হিজড়া সন্তানের সুনির্দিষ্ট পরিমাণ অংশ রয়েছে। এ ব্যপারে হাদিছে বলা হয়েছে-
আ’ন আব্বাসিন: আন্না রাসূলাল্লাহি ছাল্লাল্লাহু আ’লায়হি ওয়া সাল্লাম সূয়িলা আ’ন মাওলুদিন লাহু কুবুলুন ও জাকারুন মিন আয়না ইউরাছু? ফাকালান্নাবিউ (সাঃ) ইউওয়ার্রাছু মিন হায়ছু ইয়াবুলু।
অর্থাৎ হযরত আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ হযরত নবী করিম (সাঃ) কে একজন সদ্যপ্রসূত শিশুর উত্তরাধিকার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো যার পুরুষ লিঙ্গ এবং স্ত্রী লিঙ্গ উভয়টি আছে। উত্তরে তিনি (সাঃ) বললেন যে, তাকে তার সে অঙ্গ অনুসারে ওয়ারিশ বানাও যে অঙ্গ দিয়ে প্রথমে সে প্রস্রাব করে। [ সুনানে বায়হাকী (৬ষ্ট খন্ড) ২৬১ পৃষ্টা]
সুতরাং কোন হিজড়া সন্তানের প্রস্রাব যদি পুরুষেরা যে অঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে সেই অঙ্গ দিয়ে প্রথমে নির্গত হয়, তবে সে পুরুষ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সে একজন পুরুষের সমপরিমাণ অংশ পাবে। এছাড়া, হিজড়া সন্তানের প্রস্রাব যদি নারীরা যে অঙ্গ দিয়ে প্রস্রাব করে সেই অঙ্গ দিয়ে প্রথমে নির্গত হয়, তবে সে নারী হিসেবে গণ্য হবে এবং সম্পত্তিতে তার প্রাপ্যাংশ একজন নারীর সমপরিমাণ।
পক্ষান্তরে, যদি কোন হিজড়ার উভয় অঙ্গ দ্বারা প্রাস্রাব নির্গত হয়ে, তবে সে “খুনশা মুশকিলা” বা দ্ব্যর্থ হিজড়া হিসেবে বিবেচিত হবে। হানাফী মাযহাবের ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ও তাঁর শিষ্যদ্বয় ইমাম মুহাম্মদ ও ইমাম আবু ইউসূফ (রাহিমাহুমাল্লাহ) এর মতে, সম্পত্তিতে “খুনছা মুশকিলা” বা একজন দ্ব্যর্থ হিজড়ার প্রাপ্যাংশ একজন নারীর সমপরিমাণ।
এখানে উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশে সম্পত্তি বন্টনের ক্ষেত্রে মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুসরণ করা হয়ে থাকে। ফলে, কুরআন অনুসারে, একজন পুরুষ উত্তরাধিকার দুইজন নারীর সমপরিমাণ অংশ পান। (সূরা নিসা; আয়াত-১১)
হিজড়াদের বৈবাহিক অধিকার
ইসলামী আইনের দু’টি মতবাদ হানাফী ও হাম্বলী মাযহাবের মতে, যৌনতার ও অযৌনতার ভিত্তিতে “মুখান্নাছ” বা হিজড়া দুই প্রকার। যথাঃ
(১) উলুল আরবাত মিনার রিজাল যাদের কণ্ঠস্বর মেয়েলী কণ্ঠস্বর এবং মহিলাদের প্রতি কোনও অনুভূতি বা আকাঙ্ক্ষা নেই। এছাড়া যদি তারা কোনরূপ অসামাজিক আচরণের সাথে জড়িত না থাকে, তবে তারা নির্বিঘ্নে মহিলাদের কোয়ার্টারে প্রবেশ করতে পারে। (সূরা নূর, আয়াতঃ ৩১)
(২) ফাসিক; যদিও দ্বিতীয় প্রকারের হিজড়ারা শারীরিকভাবে প্রথম প্রকারে মতই, তবে তারা নৈতিকভাবে হয় দুর্নীতিগ্রস্থ। সুতরাং এদের থেকে পর্দা করতে হবে এবং মহিলাদের সাথে মেলামেশা করা হতে বিরত রাখা উচিত।
পক্ষান্তরে, লিঙ্গ বৈচিত্রের ভিত্তিতে হিজড়া মূলতঃ চার শ্রেণীর। যথাঃ
- পুরুষ, তবে তারা মেয়েলী কণ্ঠস্বরবিশিষ্ট হয় এবং নারীর বেশভূষা পরিধান করে থাকে, এদেরকে আকুয়া বলা হয়। এই প্রকারের হিজড়ারা মেয়েদের বিবাহ করতে পারে।
- নারী, তাদের দাড়ি ও গোফ আছে এদেরকে বলা হয় জেনানা। এই শ্রেণীর হিজড়ারা পুরুষের সঙ্গে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।
- লিঙ্গহীন বা বিকলাঙ্গ হিজড়া যাদেরকে বলা হয় “খুনছায়ে মুশকিলা”। এদের সনাক্তকরণ প্রক্রিয়া চিকিৎসা বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল।
- কৃত্রিম উপায়ে যৌন ক্ষমতা বিনষ্ট করে খোঁজা। যৌন ক্ষমতা না থাকার দরুন তারা বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না।
উপরোক্ত চার প্রকার হিজড়ার মধ্যে আকুয়া ও জেনানা শ্রেণীর হিজড়ার লিঙ্গ বাহ্যিকভাবে সনাক্ত করা গেলেও প্রকৃতপক্ষে উভয়ই বংশ বৃদ্ধিতে অক্ষম। কাজেই মুসলিম আইনে বিবাহের ক্ষেত্রে যৌন অক্ষম ব্যক্তির সাথে বিবাহ করা নিষিদ্ধ। অর্থাৎ ইসলামী বিবাহ পুরুষ ও মহিলা ব্যতীত অন্যদের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করে।
মোদ্দা কথা, হিজড়াদের সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা না থাকায় সুস্থ্য ও স্বাভাবিক মানুষের সঙ্গে তাদের বিবাহের স্বীকৃতি দেয়া হয় না। এছাড়া বাংলাদেশের দন্ডবিধি আইন, ১৮৬০ এর ৩৭৭ ধারানুযায়ী প্রাকৃতিক নীতি বিরুদ্ধ যৌন সঙ্গম অবৈধ এবং এই অপরাধে কেই অভিযুক্ত হলে যাবজ্জীবন কারাদন্ডে বা যে কোন বর্ণনার কারাদন্ডে (যার মেয়াদ ১০ বছর পর্যন্ত হতে পারে) দন্ডিত হবে এবং তৎসহ অর্থ দন্ডেও দন্ডিত হবে।
COMMENTS