পাঁচ বস্তুর প্রতি ইসলামের ভিত্তি এবং যাকাত তৃতীয় রোকন বা স্তম্ভ। মালের যাকাত দেওয়াও দীন-ইসলামের একটি আবশ্যকীয় কার্য্য (ফরজ আম’ল)। শুধু “কালে...
পাঁচ বস্তুর প্রতি ইসলামের ভিত্তি এবং যাকাত তৃতীয় রোকন বা স্তম্ভ। মালের যাকাত দেওয়াও দীন-ইসলামের একটি আবশ্যকীয় কার্য্য (ফরজ আম’ল)। শুধু “কালেমা শাহাদত” পাঠ করাই যথেষ্ট নয়, মোনাফেকগণও উক্ত কালেমা পাঠ করতো। বরং আগ্রহ ও আনুগত্যের সাথে শরীয়তের আদেশ সমূহ পালন করাই অন্তরের দৃঢ়-বিশ্বাসের (ইয়াকিন) চিহ্ন।
নিম্নে যাকাত কাকে এবং কিভাবে দিতে হবে, সে বিষয় বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
To whom and how to pay zakat?
যাকাত কাকে এবং কিভাবে দেবেন?
এই পৃথিবী পরীক্ষার স্থান, দোস্ত-দুশমন এ স্থানে সম্মিলিত আছে; উভয়কেই তিনি স্বীয় রহমতের অন্তর্ভূক্ত করে রেখেছেন। আল্লাহপাক বলেছেন, “এবং আমার রহমত সকল বস্তুকে ব্যাপিয়া আছে” (সূরা আ’রাফ, আয়াত-১৫৬)। এরই প্রমাণ স্বরূপ কিয়ামতের দিন শত্রুগণ হতে মিত্রগণকে পৃথক করবেন। আল্লাহর বাণী, “হে পাপীরা আজ তোমরা পৃথক হয়ে যাও”। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত-৫৯), ইহার নির্দ্দেশক।
সেদিন অনুগ্রহের দাবা গুটিকা (লটারী) দোস্তদের নামই উঠবে। দুশমনেরা পূর্ণরূপে বঞ্চিত হবে। সেদিকে ইঙ্গিত দিয়ে আল্লাহ বলেছেন যে, “অবিলম্বে উক্ত রহমতকে আমি ঐ সকল লোকের জন্য লিখছি যারা আমাকে ভয় করে এবং যাকাত দেয় ও যারা আয়াত সমূহকে বিশ্বাস করে।” (সূরা আ’রাফ, আয়াত- ১৫৬)।
অতএব বুঝা গেল, আল্লাহর রহমত কেবল ঐ দল পাবে, যারা কুফর ও গোনাহ হতে বিরত থাকবে এবং যাকাত দিবে। কাজেই মালের ‘নেছাব’ পূর্ণ হলে ‘জাকাত’ দেওয়া ইসলামের আবশ্যকীয় কার্য্য এবং তা আগ্রহের সাথে বরং উহাকে আল্লাহতায়ালার অনুগ্রহ ভেবে পরিশোধ করা প্রত্যেক মোমিনের দরকার। কেননা, পূর্ণ অনুকম্পা বশতঃ আল্লাহপাক বর্দ্ধিত মাল ও চতুষ্পদ জন্তুর চল্লিশ অংশের এক অংশ সূক্ষ্মভাবে অথবা অনুমান করে ফকীরদের জন্য নির্দ্ধারিত করেছেন। ইমাম আযম আবু হানিফা (রহঃ) মহিলাদের গহনারও যাকাত দিতে বলেছেন।
যাকাত কাকে দেবেন
ইসলামী শরীয়াতে যাকাতের মোট আটটি খাত আছে। আল্লাহতায়ালা বলেছেন যে, “নিশ্চয় ছাদাকা (যাকাত) ফকীর (দরিদ্র), মিসকীন (অভাবী), যাকাত বন্টনে কর্মরত শ্রমিক, মোয়াল্লাফাতে কুলুব বা দুর্বল ঈমানধারী নও-মুসলিম, আল্লাহর পথে এবং পথিকদের জন্য। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।” (সূরাঃ তৌবা, আয়াত-৬০)
হানাফী মাজহাব মতে, উপরোক্ত কোন প্রকার ব্যক্তিকে উক্ত যাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে। পক্ষান্তরে, ইমাম শাফীর মতে যাকাত এবং ছদকা-ফেতরা ইত্যাদি যাকাতের সকল প্রকার স্থানে (বিভিন্ন খাত সমূহে) বন্টন করে দিতে হবে। কিন্তু উহার একটি খাত হলো- মোয়াল্লাফাতে কুলুব বা দুর্বল ঈমানধারী নও-মুসলিম, যারা এই জামানায় দুষ্প্রাপ্য। অথচ, আল্লাহতায়ালা বলেন, “আল্লাহতায়ালা তোমাদের জন্য সরলতা কামনা করেন এবং কঠোরতা কামনা করেন না” (সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৫)। অন্যত্র বলা হয়েছে, আল্লাহতায়া’লা তোমাদের প্রতি লঘুত্বের ইচ্ছা করেন এবং মানব দুর্ব্বলচিত্ত হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে” (সূরা নিসা, আয়াত-২৮)
কাজেই খলকুল্লাহ বা আল্লাহর সৃষ্টিকে সংকীর্ণতায় ফেলা এবং দুঃখ দেওয়া হারাম ও আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির বিপরীত। এই কারণে শাফী মাজহাবধারীগণ অনেক মাসআলার বিষয়ে যাতে ইমাম শাফী সংকীর্ণতা করেছেন তাতে হানাফী মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন; যাতে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির প্রতি সহজ হয়। ফলশ্রুতিতে, শাফী আলেমগণ- হানাফী মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া দিয়েছেন যে, কোন প্রকার ব্যক্তিকে উক্ত যাকাত দিলেই যথেষ্ট হবে।
যাকাত কিভাবে দেবেন
যাকাত ফরজ এবাদত। সুতরাং ফরজ কার্যসমূহ পূর্ণ সাবধানতার সাথে পালন করা উচিৎ। ফরজ এবাদতের সামনে নফল এবাদত পথে ফেলে দেয়া বস্তুতুল্য মূল্যহীন। এই জামানায় অধিকাংশ ব্যক্তি নফলের প্রচলন করে থাকে এবং ফরজ এবাদত নষ্ট করে থাকে। তারা মনযোগের সাথে নফল এবাদত পালন করে এবং ফরজ সমূহকে মূল্যহীন মনে করে।
যাকাতের নিয়াতে ফকীরদেরকে এক টাকা দেয়া, উক্ত নিয়াত ব্যতীত লক্ষ টাকা দেয়া অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। যেহেতু উহা ফরজ পালন করা এবং ইহা নফল কার্য্য। ফরজের তুলনায় নফলের কোনই মূল্য নেই। তাই জনসাধারণকে ফরজ কার্য্য হতে বিরত রেখে নফলের মধ্যে লিপ্ত করতঃ যাকাত দেয়া হতে বিরত রাখা দুর্বৃত্ত শয়তানের প্রবঞ্চনা মাত্র।
অনেক মানুষ আছে, যারা সময়, অসময় বহু টাকা-পয়সা ব্যয় করে, এবং যোগ্য-অযোগ্যকে তা দেয়; কিন্তু যাকাত হিসেবে তাদের পক্ষে একটা আধুলি পয়সা উপযুক্ত পাত্রে দেয়া কঠিন হয়ে থাকে। তারা জানে না যে, একটা আধুলি পয়সা যাকাত দেয়া নফল ছদকা হিসেবে লক্ষ টাকা ব্যয় করা হতে শ্রেষ্ঠ। কেননা যাকাত দেয়ার মধ্যে শুধু মালিকের আদেশ পালন ব্যতীত অন্য কিছু নাই, এবং নফল ছদকা প্রায় সময় নফসের আকাঙ্খা হতে উৎপন্ন হয়ে থাকে।
আরোও উল্লেখ্য যে, ফরজের মধ্যে রেয়ার অবকাশ নাই, এবং নফলের মধ্যে রেয়ার স্থান বর্তমান আছে। এই কারণে প্রকাশ্যভাবে যাকাত আদায় করা উৎকৃষ্ট এবং গোপনভাবে ছদকা খয়রাত করা উচিত, যাতে উহা অপবাদমুক্ত ও কবুল হওয়া উপযোগী হয়। এছাড়া যাকাত দেয়ার সময় উহার নফল, মোস্তাহাব বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখাও শ্রেষ্ঠতর। যাকাতের মধ্যে মোস্তাহাব যথাঃ নিকটস্থ ফকীর, মিছকীনকে প্রদান, ইত্যাদি।
COMMENTS