Discharge বা অভিযোগ থেকে অব্যহতি এবং Acquittal বা বেকসুর খালাস বাংলাদেশ ফৌজদারী কার্যবিধির দু’টি আইনী পরিভাষা। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসা...
Discharge বা অভিযোগ থেকে অব্যহতি এবং Acquittal বা বেকসুর খালাস বাংলাদেশ ফৌজদারী কার্যবিধির দু’টি আইনী পরিভাষা। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আসামী কখনো অভিযোগ থেকে অব্যহতি পায়, আবার কখনো সে বেকসুর খালাস পেয়ে থাকে।
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What is discharge and acquittal?
অভিযোগ থেকে অব্যহতি ও বেকসুর খালাস কি?
Discharge শব্দটি বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিভিন্ন অর্থ বোঝায়। ফৌজদারী কার্যবিধিতে Discharge এর সংজ্ঞা প্রদান না করা হলেও এর দ্বারা ফৌজদারী কোন মামলার অভিযোগ থেকে অব্যহতিকে বুঝায়।
আসামীকে অভিযোগ থেকে অব্যহতি সম্পর্কিত বিধান ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১(ক) ও ২৬৫(গ) ধারায় রয়েছে।
- ২৪১(ক) ধারাঃ কোন মামলার আসামী হাজির হয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবী করলে ম্যাজিস্ট্রেট চার্জ গঠনের পূর্বে ফরিয়াদী বা রাষ্ট্রপক্ষ এবং আসামী পক্ষের বক্তব্য শ্রবন পূর্বক যদি মনে করেন যে, অভিযোগ ভিন্তিহীন এবং চার্জ গঠনের মত উপাদান নেই তবে তিনি কারণ লিপিবদ্ধ করে আসামীকে অব্যহতি দিতে পারেন। মামলার শুরুতে মামলার নথি, পুলিশ রিপোর্ট, মেডিকেল রিপোর্ট (যদি থাকে) ও অন্যান্য কাগজপত্র বিবেচনার পর যদি আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ না থাকে তবে আসামী অব্যহতি পাবে (আসামী কর্তৃক দাখিলকৃতকোন কাগজাদি বিবেচনায় আসবে না)।
- ২৬৫(গ) ধারাঃ মামলার নথি, দাখিলকৃত প্রমাণাদি এবং তৎসঙ্গে আসামী ও ফরিয়াদী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামীর বিরুদ্ধে মামলা চালিয়ে যাওয়ার যথেষ্ট কোন কারণ নেই, তাহলে আদালত আসামীকে মামলা থেকে অব্যহতি দিবেন এবং তার কারণ লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
অন্যদিকে, Acquittal বা বেকসুর খালাসের প্রশ্ন আসে মোকদ্দমার চার্জ গঠন করে বিচারের পর। সাধারণভাবে একজন ম্যাজিস্ট্রেট ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৫(১) ধারামতে এবং দায়রা জজ ২৬৫(জ) ধারামতে বেকসুর খালাসের আদেশ প্রদান করতে পারেন।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৫(১) ও ২৬৫(জ) ধারায় বেকসুর খালাস সম্পর্কিত বিধান রয়েছে।
- ২৪৫(১) ধারাঃ আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ শুনানীতে মিথ্যা প্রমাণিত হলে আসামী বেকসুর খালাস পাবে। কেননা, ধারাতে বলা হয়েছে- “মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণের পর আদালত যদি আসামীকে নির্দোষ হিসেবে সাব্যস্ত করেন, তাহলে আদালত কারণ লিপিবদ্ধ করে আসামীকে খালাস দিবেন।”
- ২৬৫(জ) ধারাঃ অভিযোগকারী পক্ষের সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীর জবানবন্দী গ্রহণ এবং বিষয়টি সম্পর্কে অভিযোগকারী পক্ষ ও আসামী পক্ষের বক্তব্য শুনার পর আদালত যদি মনে করেন যে, আসামী অপরাধ করেছে বলে কোন সাক্ষ্য প্রমাণ নেই, তাহলে আদালত আসামীকে খালাস দিবেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখবেন।
অভিযোগ থেকে অব্যহতি (Discharge) এবং বেকসুর খালাসের (Acquittal) মধ্যে পার্থক্য
ডিসচার্জ বা অভিযোগ থেকে অব্যহতি এবং বেকসুর খালাসের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরুপঃ
১. সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে বিচারের পূর্বেই আসামীকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দেয়া হলে, তাকে অব্যাহতি বলে। অন্যদিকে, সংশ্লিষ্ট মামলার সাক্ষ্য-প্রমাণাদি গ্রহণের পর আসামী নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে ছাড়া পেলে, তাকে খালাস বলে।
২. ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১(ক) এবং ২৬৫(গ) ধারায় অব্যাহতির বিধি-বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে, ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৫ এবং ২৬৫(জ) ধারায় বেকসুর খালাস সংক্রান্ত বিধি-বিধান রয়েছে।
৩. অব্যাহতির ক্ষেত্রে আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই, এটি প্রমাণ করতে হয়। আসামীর নির্দোষিতা প্রমাণ করার দরকার হয় না। অন্যদিকে, বেকসুর খালাসের ক্ষেত্রে আসামীর নির্দোষিতা প্রমাণ করতে হয়।
৪. অব্যাহতির ক্ষেত্রে আসামীর পক্ষে-বিপক্ষে আদালত কর্তৃক সাক্ষ্য প্রমাণ রেকর্ড করা হয় না। পক্ষান্তরে, বেকসুর খালাসের ক্ষেত্রে আদালত কর্তৃক আসামীর পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য প্রমাণ রেকর্ড করা হয়, যার ভিত্তিতে সে নির্দোষ প্রমাণিত হয়।
৫. অব্যাহতির আদেশ দিলেও তা আসামীকে একই বিষয়ে আদালতে হাজির করার ক্ষেত্রে কোন আইনগত বাধা সৃষ্টি করে না। কিন্তু, বাস্তবে খালাসের মত Effect রয়েছে। পক্ষান্তরে, কোন মামলা হতে খালাস পাওয়ার পর আসামীকে ঐ একই বিষয়ের বা অপরাধের জন্য পুনরায় বিচার করা যায় না।
৬. অব্যাহতির আদেশকে মামলার চূড়ান্ত রায় হিসাবে গণ্য করা হয় না। অন্যদিকে, বেকসুর খালাসের আদেশকে মামলার চূড়ান্ত রায় হিসাবে গণ্য করা হয়।
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪১(ক) ধারার বিধান মতে আসাীকে অব্যহতি প্রদানের বিষয়ে বিচারিক হাকিম কি কি বিষয় বিবেচনা করেন?
বিচারের পূর্বেই কোন অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দানের ক্ষমতা ফৌজদারি কার্যবিধির ২৪১(ক) ধারায় ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রদান করা হয়েছে। অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে মনে করলে তিনি আসামীকে মামলা হতে অব্যাহতি দিতে পারেন। তবে ২৪১(ক) ধারা ম্যাজিস্ট্রেটকে ইচ্ছামাফিক অব্যাহতির আদেশ প্রদান করেন না; বরং তাকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হয়ঃ
১. মামলার নথি এবং তৎসহ দাখিলকৃত যাবতীয় কাগজপত্র বিবেচনা করবেন। এ নথির মধ্যে অন্তর্ভূক্ত থাকবে অভিযোগপত্র, পুলিশ কর্তৃক ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় লিপিবদ্ধকৃত সাক্ষীর জবানবন্দী এবং মেডিকেল সার্টিফেকেটসহ উপস্থাপিত দলিল;
২. প্রয়োজনে আসামীর জবানবন্দী গ্রহণ করবেন; এবং
৩. ফরিয়াদী ও আসামী উভয়কেই বক্তব্য পেশের সুযোগ দিবেন।
উপরোল্লেখিত পন্থায় বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনা এবং নথি পর্যালোচনায় যদি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে চার্জ ভিত্তিহীন মনে হয়, তাহলে তিনি আসামীকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আদেশ দিবেন।
চুড়ান্ত বিচারের পর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত আসামীকে কি পুনরায় একই অপরাধের অভিযোগে বিচার করা যায়?
ব্রিটিশ কমন ল’য়ের নীতি অনুসারে একই অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে দু’বার বিচার করা যায় না। এই নীতিটি ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪০৩ ধারায় অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫(২) অনুচ্ছেদেও এই নীতিটি প্রতিফলিত হয়েছে।
৪০৩(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে অপরাধের জন্য কারো একবার বিচার হলে এবং তাকে উক্ত অপরাধের জন্য দন্ডিত করে হলে বা অপরাধ হতে উক্ত খালাস বা দন্ডাদেশ বলবৎ থাকাকালে একই অপরাধের জন্য পুনরায় তার বিচার করা যাবে না অথবা একই ঘটনা হতে উদ্ভূত অন্য কোন অপরাধের জন্যও পুনরায় তার বিচার করা যাবে না, যে অপরাধের জন্য তার বিরুদ্ধে ২৩৬ ধারা অনুসারে একটি পৃথক চার্জ প্রণয়ন করা যেত বা যার জন্য তাকে ২৩৭ ধারা অনুসারে দন্ডিত করা যেত।
অর্থাৎ চূড়ান্ত বিচারের পর বেকসুর খালাসপ্রাপ্ত আসামীকে পুনর্বার একই ঘটনার অভিযোগের বিচার করা যাবে না। তবে এ ধারা প্রয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত তিনটি শর্ত প্রযোজ্য হবেঃ
১. একই অপরাধে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক আসামীর বিচার হয়েছে;
২. বিচারে আসামী খালাস পেয়েছে; এবং
৩. আসামীর খালাস বলবৎ রয়েছে।
তবে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে উপরোক্ত পন্থায় খালাসপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে কোন অপরাধের জন্য পৃথক বিচার করা যাবেঃ
১. যে অপরাধের জন্য পূর্ববর্তী বিচারে তার বিরুদ্ধে ২৩৫(১) ধারার অধীনে পৃথক অভিযোগ আনা যেত কিন্ত আনা হয়নি; অথবা
২. একই কার্য দ্বারা সৃষ্ট অন্য কোন অপরাধ যদি প্রথম বিচারিক আদালতের বিচারের এখতিয়ারভূক্ত ছিল না এমন হয়।
COMMENTS