ইসলাম ধর্মে যেমন প্রতিবেশীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তেমনীভাবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও একজন প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেমন, যাতায়...
ইসলাম ধর্মে যেমন প্রতিবেশীর অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তেমনীভাবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনেও একজন প্রতিবেশীর অধিকার সংরক্ষণ করা হয়েছে। যেমন, যাতায়াত পথের অধিকার, পানির কোন উৎস থেকে পানি নিয়ে আসার অধিকার, আলো ও বাতাস পাওয়ার অধিকার, জলাশায় বা পুকুরের পানি ব্যবহার অধিকার।
উপরোক্ত ‘সুখাধিকার’ (Right of easements) থেকে আপনি বিঘ্নিত বা বঞ্চিত হলে দেওয়ানী আদালতে মামলা দায়ের করে প্রতিকার পেতে পারেন।
নিম্নে রাইট অব ইজমেন্ট, উহার অপরিহার্য শর্তসমূহ এবং কখন ও কিভাবে অর্জন করা যায় সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
The right of easement is a neighbor's legal right
সুখাধিকার একজন প্রতিবেশীর আইনি অধিকার
ইজমেন্ট বা ‘সুখাধিকার’ অর্থ- সাধারণত জমি ব্যবহারকারীর অধিকারে নয় এমন জমির ব্যবহারের অধিকার। তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২৬ ধারা ‘সুখাধিকার’ সম্পর্কিত বিধান রয়েছে। ‘সুখাধিকার’ শব্দটি এই আইনের ২(৫) ধারায় সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
অন্যদিকে, সুখাধিকার আইন, ১৮৮২ এর ৪ ধারানুসারে সুখাধিকার বলতে এমন এক অধিকারকে বুঝায় যার দ্বারা কোন জমির মালিক বা দখলকার তার জমির জমির সুবিধাজনক ভোগের জন্য অন্য কোন ব্যক্তির জমির উপর বা উহার সম্পর্কে কোন কিছু করতে বা করা অব্যহত রাখতে কিংবা কিছু করা হতে নিবৃত্ত করতে বা নিবৃত্ত করা অব্যহত রাখতে পারে।
উদাহরণঃ আব্দুল করিম ২০ বছর যাবৎ শান্তিতে এবং প্রকাশ্যে তার বাড়িতে প্রবেশের জন্য একই পাড়ার আব্দুল করিমের জমির ডান পাশের পথটি ব্যবহার করছেন। আব্দুল করিম ২০ বছর পর আপত্তি জানালে আদালত ১৯০৮ সালের তামাদি আইনের ২৬ ধারানুসারে এই পথের অধিকারটি আদালত বহাল রাখবেন। এটাকেই রাইট অব ইজমেন্ট বা ‘সুখাধিকার’ বলে।
সুখাধিকার (Right of easements) অর্জনের মেয়াদ/সময়মীমা
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২৬(৩) ধারার অধীনে যে সম্পত্তির উপর ‘সুখাধিকার’ অধিকার দাবি করা হয়েছে তা অবশ্যই নিম্নোক্ত মেয়াদকাল ভোগ করতে হবেঃ
- বেসরকারি বা ব্যক্তিগত সম্পত্তির ক্ষেত্রে ২০ বছর; এবং
- সরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে ৬০ বছর।
কখন এই অধিকার বিলুপ্ত হয়
নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে ‘সুখাধিকার’ বিলুপ্ত হবেঃ
- যদি মালিক নিজেই উক্ত স্বত্বে তার অধিকারটি হারিয়ে ফেলেন, তবে পথাধিকার লোপ পাবে।
- নির্দিষ্ট সময়ের জন্য প্রদত্ত পথাধিকার মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তা বিলুপ্ত হবে।
- মালিক নিজের সংরক্ষিত ক্ষমতাবলে পথাধিকার প্রত্যাহার করলে অধিকারটি বিলুপ্ত হবে।
- কোন প্রয়োজনে সুখাধিকার সৃষ্টি করা হলে সেই প্রয়োজন শেষে সুখাধিকার লোপ পাবে।
- সুবিধাভোগী বা সেবক স্বত্বের মালিক একই ব্যক্তিতে পরিণত হ’লে পথাধিকারটি লোপ পাবে।
- সুবিধাভোগী বা সেবক স্বত্বের কোনো একটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হলে Right of easement বা সুখাধিকার লোপ পাবে।
- কোনো পথাধিকার অবিচ্ছিন্ন এবং টানা ২০ বছর যাবৎ উপভোগ করা না হলে পথাধিকারটি লোপ পাবে ইত্যাদি।
ইজমেন্টের অধিকার বিঘ্নিত হলে আইনী প্রতিকার
বাংলাদেশে প্রচলিত তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ২৬ ধারা অনুসারে, কোন ব্যক্তি দীর্ঘকাল অর্থাৎ বেসরকারি সম্পত্তির ক্ষেত্রে ২০ বছর এবং সরকারি সম্পত্তি ৬০ বছর যাবৎ একাধিক্রমে এবং অবিচ্ছিন্নভাবে আলো, বায়ু, পানি বা যাতায়াতের অধিকার ভোগ করলে ভোগ-দখল অনুকূলে Right বা অধিকার সৃষ্টি হয়। আর উক্ত অধিকার বিঘ্নিত হলে, ভোগদখলকারী সেবক স্বত্বে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে বিঘ্নিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
তবে ২৫ ডিএলআর-এ সুধেন্দি দেব বনাম অম্বিকা সিং মনিপুরী মামলায় উল্লেখ আছে “কেবল একটি পথের ব্যবহার ভোগ-দখল অনুকূলে অধিকার সৃষ্টি করতে পারে না, যদি না দেখানো হয় যে, এই জাতীয় ব্যবহারকারীর অধিকার, শান্তিপূর্ণভাবে এবং কোনও বাধা ছাড়াই হয়েছে।”
এছাড়া উক্ত আইনের ৩৭ ধারায় বলা হয়েছে যে, ‘সুখাধিকার’ দাবিকারী ব্যক্তিকে তার অধিকারটি বিঘ্নিত হওয়ার ৩ বছরের মধ্যে আদালতে মামলা করতে হবে।
COMMENTS