ধরা যাক, ‘রহিম’, ‘করিম’ এবং ‘জলিল’ ‘যায়েদ’ কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ঐ ষড়যন্ত্র অনুযায়ী ‘রহিম’ বিষ সংগ্রহের জন্য ‘ক...
ধরা যাক, ‘রহিম’, ‘করিম’ এবং ‘জলিল’ ‘যায়েদ’ কে বিষ প্রয়োগে হত্যা করার জন্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ঐ ষড়যন্ত্র অনুযায়ী ‘রহিম’ বিষ সংগ্রহের জন্য ‘করিম’ কে প্রয়োজনীয় অর্থ দেয়। ‘করিম’ বিষ সংগ্রহ করে ‘জলিল’ কে দেয়। ‘রহিম’ এবং ‘করিম’ এর অনুপস্থিতিতে ‘জলিল’ ঐ বিষ ‘যায়েদ’ কে খাইয়ে তার মৃত্যু ঘটায়। এখন বিষয় হলো ‘যায়েদ’ এর হত্যার জন্য কি কেবল ‘জলিল’ দায়ী, নাকি ‘জলিল’ এর সাথে সাথে ‘রহিম’ ও ‘করিম’ও দায়ী?
নিম্নে ঘটনার প্রেক্ষিতে ‘যায়েদ’ এর মৃত্যূর জন্য উক্ত তিনজন আসামীর দায় দায়িত্ব বিশ্লেষণ করা হলো।
Abetment and its punishment
অপরাধ সংঘটনে সহায়তা ও এর শাস্তি
আইন মানুষের আচরণের উপর নজরদারি করে এবং তাদের অপরাধমূলক ও অ-অপরাধমূলক আচরণগুলিকে শ্রেণীবদ্ধ করে।
কেননা, আপনার রান্নাঘরের জন্য একটি ছুরি কেনার মতো সাধারণ কিছু এমনকি অপরাধহীন আচরণ অপরাধমূলক হয়ে ওঠে যখন এর পিছনে অপরাধমূলক উদ্দেশ্য থাকে।
এই ছদ্মবেশী (অন্তর্নিহিত) উদ্দেশ্যগুলি অন্তর্ভুক্ত করতে এবং সেগুলির শাস্তি দেওয়ার জন্য ‘অপরাধ সংঘটনে সহায়তার’ ধারণাটি ফৌজদারী আইনের দিগন্তকে প্রশস্ত করে। এমনকি যখন আপনি রান্না ঘরের জন্য ছুরিটি কিনেছিলেন তা দিয়ে আসলে আপনি কাউকে হত্যা করেন নি, তবে তা অন্য কারও হাতে দিয়েছিলেন যা Abetment বা অপরাধ সংঘটনে সহায়তা।
সাধারণ অর্থে, Abetment হলো কাউকে ভুল কিছু করার জন্য উৎসাহিত করা বা সহায়তা করা, বিশেষত কোন অপরাধ করার ক্ষেত্রে।
দন্ডবিধির ১০৭ ধারায় প্ররোচনামূলক অপরাধের (Abetment) সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে। সুতরাং, এই ধারানুসারে নিম্নবর্ণিত তিনটি ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি প্ররোচনা দিয়েছে বলে বিবেচিত হবেঃ
- যদি কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তিকে কোন কাজ করার জন্য প্ররোচিত করে;
- যদি কোন ব্যক্তি কোন বিষয়ে বা কার্য সম্পাদনের জন্য এক বা একাধিক ব্যক্তিবর্গের সাথে কোন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়; এবং
- যদি কোন ব্যক্তি কোন কাজ সম্পাদনের মাধ্যমে অথবা বে-আইনীভাবে ঐ কাজ করা হতে বিরত থেকে কোন অপরাধ সংঘটনে ইচ্ছাকৃতভাবে সাহায্য করে।
অতএব, বুঝা গেল যে, যদি কোন ব্যক্তি উস্কানী দেয়, প্ররোচিত করে, উদ্বুদ্ধ করে, হুমকি দেয়, ষড়যন্ত্র করে, আদেশ দেয় বা ইচ্ছাকৃতভাবে কোন ব্যক্তিকে বে-আইনী কাজ করতে সহায়তা করে বা অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত সেই কাজগুলি করতে সেই ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করা হয়, তাহলে সেটা অপরাধ সংঘটনে সহায়তা হিসেবে গণ্য হবে।
অপরাধ সংঘটনে সহায়তার শাস্তি
সাধারণ মানুষের কাছে ‘অপরাধ সংঘটনে সহায়তা’ কে একটি পৃথক অপরাধ হিসাবে বিচার করার এবং দণ্ডনীয় হওয়ার ধারণাটি সত্যই উদ্ভট বলে মনে হতে পারে। কারণ, অধিকাংশ লোকের ধারণা যে, কেবল অপরাধীদেরই শাস্তি দেওয়া হবে। আসলে বিষয়টি তেমন নয়; বরং এটি একটি ফৌজদারী অপরাধ।
বাংলাদেশ দন্ডবিধি, ১৮৬০ এর ১০৯ ধারাতে বলা হয়েছে-
“কোন ব্যক্তি কোন অপরাধে সহায়তা করলে যদি সহায়তার ফলে সাহায্যকৃত কাজটি সম্পাদিত হয় এবং এই বিধিতে অনুরূপ দুস্কর্মে সহায়তার শাস্তি বিধানার্থে কোন স্পষ্ট বিধান না থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তির উক্ত অপরাধের জন্য ব্যবস্থিত বিধান করা হবে।”
উদাহরণঃ ‘আব্দুল্লাহ’ সরকারী কর্মচারী। ‘কবির’ সরকারী কাজ করার সময় তার প্রতি কিছু সহানুভূতি প্রদর্শনের পারিতোষিক হিসেবে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাব দেয়। ‘আব্দুল্লাহ’ উক্ত ঘুষ গ্রহণ করে। এ ক্ষেত্রে ‘কবির’ ১৬১ ধারায় বর্ণিত অপরাধে সহায়তা করেছে বলে গণ্য হবে।
অনুরূপভাবে, আলোচনার শুরুতে আমরা যে উদাহরণ দিয়েছিলাম সেখানে ‘রহিম’ ও ‘করিম’ প্রত্যক্ষভাবে ‘যায়েদ’ কে হত্যা করে নি; বরং হত্যা করেছিল ‘জলিল’। কিন্ত তারা যায়েদের হত্যার ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিল। ফলে, ‘যায়েদ হত্যাকান্ডে’ ‘রহিম’ ও ‘করিম’ উভয়ই দন্ডবিধির ৩০০ ধারায় বর্ণিত অপরাধে সহায়তা করেছে বলে গণ্য হবে।
সুতরাং ৩০০ ধারায় উল্লেখিত খুনের সাজা ৩০২ ধারানুসারে মৃত্যূদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অর্থদন্ডেও দন্ডনীয়।
COMMENTS