ধরা যাক, ‘রহিম’ পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে ৩৫ শতাংশের এক খণ্ড জমির মালিক। বিগত ভূমি জরিপকালে ভুলবশতঃ ঐ জমিটি আগন্তক জলিলের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এই ...
ধরা যাক, ‘রহিম’ পৈতৃক ওয়ারিশ সূত্রে ৩৫ শতাংশের এক খণ্ড জমির মালিক। বিগত ভূমি জরিপকালে ভুলবশতঃ ঐ জমিটি আগন্তক জলিলের নামে রেকর্ড হয়ে যায়। এই ভূল রেকর্ডের সুযোগ নিয়ে জলিল ২০২০ সালের ২ জানুয়ারী তারিখে বলপূর্বক রহিমের জমিটি দখল করে নিয়ে তথায় একটি বসত বাড়ি তৈরী করে এবং পরিবার পরিজন নিয়ে সেখানে বসবাস করছে। এখন রহিমের করণীয় কি?
নিম্নে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখ পূর্বক যথাযথ প্রতিকার আলোচনা করা হলো।
Ways to correct the wrong Record of Rights
ভুল খতিয়ান সংশোধনের উপায়
সরকার ভূমির প্রকৃত দখলকারীর কাছ থেকে খাজনা আদায়ের জন্য সারাদেশে জরিপ পরিচালনা করে থাকে। এ পর্যন্ত আমাদের দেশে সিএস (Cadastral Survey), এসএ (State Acquisition Survey), আরএস (Revisional Survey), এবং সিটি জরিপসহ মোট ৪টি জরিপ সম্পন্ন হয়েছে।
মৌজা ভিত্তিক ভূমি জরিপকালে ভূমি মালিকের মালিকানা নিয়ে যে বিবরণ প্রস্তুত করা হয় তাকে পার্শিতে খতিয়ান বা স্বত্ত্বের রেকর্ড (Record of Rights) বলা হয়।
খতিয়ান বা অধিকারের রেকর্ডের মধ্যে যা সন্নিবেশিত থাকেঃ
- খতিয়ান নং;
- মৌজা, উপজেলা, জেলা এবং জে. এল. নং;
- প্রতিটি মৌজার ভূমি মালিক বা মালিকগণের নাম, পিতা/স্বামীর নাম;
- প্লট বা দাগ নং;
- মালিক বা মালিকদের হিস্যা (অংশ);
- জমির শ্রেণী ও প্রকৃতি;
- প্রদেয় ভূমি উন্নয়ন করের পরিমাণ; এবং
- জমির মোট পরিমাণ (ধাগ ভিত্তিক) ইত্যাদি
জরিপ চলাকালীন সময়ে খসড়া খতিয়ানে (Draft Publication) কোন ভূল ধরা পড়লে সেটেলমেন্ট অফিসারের নিকট প্রজাস্বত্ব বিধি ৩০ ধারা / ৩১ ধারায় আপিল করে খুব সহজেই ভুলগুলো সংশোধন করা যায়।
যদি উক্ত সময়ের মধ্যে ভুলগুলো সংশোধন করা না হয় এবং চূড়ান্ত খতিয়ান প্রকাশিত হয়ে যায়, তবে উক্ত খতিয়ানের শুধুমাত্র করণিক ভুল (Clerical Mistake) বা প্রিন্টিং ভুল সংশোধন ছাড়া অন্য কোন ভুল সংশোধনের ক্ষমতা সেটেলমেন্ট অফিসারের থাকে না। তখন দেওয়ানী আদালতে মামলা করে খতিয়ানের ভুল সংশোধন করতে হয়।
দেওয়ানী আদালতে মামলা
বহুল প্রচলিত একটি কথা আছে যে, মামলা ছাড়া জমি অসম্ভব। কারণ, মোকাদ্দমা ও জমি একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। সুতরাং যেখানে জমি আছে, সেখানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে একটি মামলা জড়িত আছে।
ভূমি জরীপ চলাকালে খতিয়ানে কোন প্রকার ভুল হলে খতিয়ান সংশোধনের জন্য দেওয়ানী আদালতে মামলা করা যায় না এমনকি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সময় থাকলেও দেওয়ানী আদালতে মামলা করা যায়না।
ট্রাইব্যুনাল মামলার সময়সীমা পার হবার পরে দেওয়ানী আদালতে রেকর্ড সংশোধনীর জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৪২ ধারানুসারে একটি Declaratory Suit বা ঘোষণামূলক মোকাদ্দমা দায়ের করতে হবে। জমির মূল্য অনুসারে সহকারী জজ আদালত, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত বা যুগ্ম জেলা জজ আদালতে এই মামলা দায়ের করতে হয়।
এমনকি সরকারী সম্পত্তি ভুলক্রমে খতিয়ানে কোন ব্যক্তির নামে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে, খতিয়ান সংশোধনের ক্ষেত্রে সরকারকেও দেওয়ানী আদালতে মামলা করতে হবে।
এ বিষয়ে হাইকোর্টের নজির আছে এবং সেখানে বলা হয়েছে যে, “খতিয়ান সংক্রান্ত স্বত্বের প্রশ্নে একমাত্র সিভিল কোর্টই সিদ্ধান্ত দিতে পারে”। (১৫ ডিএলআর ৪৮৩)
খতিয়ান সংশোধনের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
খতিয়ান সংশোধনের জন্য যে সব কাগজপত্র লাগবে তা নিম্নরুপঃ
- সংশ্লিষ্ট জমির মালিকানার সকল দলিলপত্র (যেমন- মূল দলিলের সার্টিফাইড কপি, বায়ানা দলিল, পূর্বের খতিয়ানের কপি);
- চূড়ান্তভাবে প্রকাশিত ভুল রেকর্ডের কপি, আইডি কার্ডের ফটোকপি ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায় যে, খতিয়ান হলো দখলের প্রামাণ্য দলিল; মালিকানার দলিল নয়। কাজেই ভুল বশতঃ মালিক ছাড়া খতিয়ানে অন্য কারো নাম রেকর্ড হলে সেই ব্যক্তির মালিকানা তৈরী হয় না এবং জমির প্রকৃত মালিক উক্ত জমির মালিকানা স্বত্বও হারায় না। তবে খতিয়ান সংশোধন করা জরুরী। কেননা খতিয়ান সংশোধন না করলে জমির নামজারি (Mutation) করা যাবে না, আর নামজারি (Mutation) না করতে পারলে সেই জমি বিক্রি করা যাবে না।
COMMENTS