বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহের পদ্ধতিটি মূলত মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ এবং মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) বিধিমালা, ১৯৭৫ দ্বারা...
বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহের পদ্ধতিটি মূলত মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ এবং মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) বিধিমালা, ১৯৭৫ দ্বারা পরিচালিত হয়। ইদানিং আমাদের সমাজে Court marriage বা আদালত বিবাহের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। এমনকি অনেকে এই বিয়েকে রেজিস্ট্রি বিয়ের চাইতে আইনগতভাবে শক্ত বলে ধারণা করে থাকে। আসলে এ বিষয়ে আইন কি বলে?
নিম্নে “কোর্ট ম্যারেজ” এর আইনী ভিত্তি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
There is no such thing as "Court marriage" in law
আইনে কোর্ট ম্যারেজ বলে কিছু নেই
আমাদের দেশে ২০০ টাকার টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারী পাবলিকের কার্যালয়ে কিংবা জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয়ে গিয়ে হলফনামা করাকে বিয়ে বলে অভিহিত করা হয়। অথচ হলফনামা (Affidavit) শুধুই একটি ঘোষণাপত্র। আইনানুযায়ী কাবিন রেজিষ্ট্রি সম্পন্ন করেই কেবল ঘোষণার জন্য Affidavit করা যাবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে “কোর্ট ম্যারেজ” এর কোন বৈধতা নেই, এমনকি এর কোন অস্তিত্বও নেই। এখন প্রশ্ন ওঠে যে, বৈধতা না থাকা সত্ত্বেও কথিত বিয়ের প্রবণতার কারণ কি?
উত্তরে বলব যে, “কোর্ট ম্যারেজ” প্রবণতার অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে নিম্নোক্ত কারণসমূহ উল্লেখযোগ্য। যথাঃ
- পরিবারের অসম্মতিতে পছন্দের পাত্র/পাত্রীকে বিয়ে করা;
- রেজিস্ট্রি ফিস এড়িয়ে চলা। কেননা, মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) বিধিমালা-২০০৯; (সংশোধিত ১০ এপ্রিল, ২০১১) এর ২১(১) অনুযায়ী ৪ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেনমোহরের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার বা উহার অংশ বিশেষের জন্য সাড়ে ১২ টাকা হারে নিবন্ধন ফি দিতে হয়। এছাড়া, দেনমোহর ৪ লক্ষ টাকার অধিক হ’লে তার পরবর্তী প্রতি ১ লক্ষ টাকা দেনমোহর বা উহার অংশ বিশেষের জন্য ১০০ টাকা হারে রেজিস্ট্রি ফি দিতে হয়। দেনমোহরের পরিমাণ যাই হোক না কেন রেজিস্ট্রি ফি সর্বনিম্ন ২০০ টাকা।
- এ্যাফিডেভিটের মাধ্যমে বিয়ে সম্পাদন করে একাধিক বিয়ের কথা গোপন করা;
- মেয়ের অভিভাবককে জিম্মি করে টাকা আদায় করা;
- হলফনামা প্রার্থীকে নোটারি পাবলিকের কাছে হাজির হতে হয় না বলে ১৮ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়িয়ে বিয়ে করা;
- নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া; এবং
- অবৈধ সম্পর্ক বা যৌনকর্মী স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে অবস্থান করা।
১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন (সংশোধিত ৮ই মার্চ, ২০০৫) এর ৩ ধারা অনুযায়ী প্রতিটি মুসলিম বিবাহ রেজিস্ট্র্রি করা বাধ্যতামূলক।
এই আইনের ৫(১) ধারা অনুযায়ী কাজী নিজেই যদি বিবাহ সম্পাদন করেন, তাহলে তিনি তাৎক্ষণিকভাবেই (বিয়ের আসরে) বিবাহ নিবন্ধন করবেন। ৫(২) ধারানুসারে, কাজী ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি কর্তৃক বিবাহ সম্পাদিত হয়ে থাকলে, বর বিয়ে সম্পাদনের ৩০ দিনের মধ্যে কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে নিবেন।
মুসলিম বিবাহ ও বিচ্ছেদ নিবন্ধন আইন, ১৯৭৪ (সংশোধিত) ২০০৫ এর ৫(৪) ধারানুসারে, বিবাহ নিবন্ধন না করা হলে অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে এবং ২ বছর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে।
এছাড়া, বিবাহ রেজিস্ট্রি করা না হলে নিম্নোক্ত ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবেঃ
- নারী তার স্বামীর সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হবে;
- মৃতের সন্তানরা উত্তরাধিকার হারাবে;
- নারী খোরপোষ ও মোহরানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে; এবং
- স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলে বা প্রথম স্ত্রীর বিনা অনুমতিতে বিয়ে করার উদ্যোগ নিলে স্ত্রী আইনগত ব্যবস্থাও নিতে পারে না।
সুতরাং বিবাহ নিবন্ধনের মাধ্যমে একজন নারী তার বিবাহিত জীবনের বিভিন্ন জটিলতা থেকে মুক্তি পেতে এবং নিজেকে অসহায়ত্ব থেকে রক্ষা করতে পারেন।
COMMENTS