হত্যা বলতে অযৌক্তিক অজুহাত ও বিচার বহির্ভূত পন্থায়, আক্রোশমূলকভাবে বা অন্যের প্ররোচনায় পূর্বপরিকল্পিত ও বেআইনীভাবে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্...
হত্যা বলতে অযৌক্তিক অজুহাত ও বিচার বহির্ভূত পন্থায়, আক্রোশমূলকভাবে বা অন্যের প্ররোচনায় পূর্বপরিকল্পিত ও বেআইনীভাবে কোন ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির জীবন সংহার করাকে বুঝায়। আদীকাল থেকে অদ্যবধি প্রায় সব সমাজই হত্যাকে গুরুতর অপরাধ হিসাবে বিবেচনা করে আসছে এবং শাস্তির বিধানও প্রায় একই রকম। হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে প্রতিরোধ, পুনর্বাসন বা অক্ষম করা বা প্রতিশোধের উদ্দেশ্যে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে অপরাধমূলক নরহত্যা ও খুনের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।
নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
The difference between culpable homicide and murder
অপরাধমূলক নরহত্যা ও খুনের মধ্যে পার্থক্য
আধুনিক বিশ্বের অধিকাংশ দেশ, হত্যায় দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিকে সাধারণত দীর্ঘ মেয়াদী জেল বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা বিশেষ ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করে আসছে। বাংলাদেশেও হত্যার বিধান একই ধরনের হলেও উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে হত্যাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ
- অপরাধমূলক নরহত্যা (Culpable Homicide); এবং
- খুন (Murder)।
অপরাধমূলক নরহত্যা (Culpable Homocide) কি?
সাধারণত কোন ব্যক্তির মৃত্যূ ঘটানোকে হত্যা বলা হলেও হত্যাটিতে যদি দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২৯৯ ধারায় উল্লেখিত উপাদানসমূহ বিদ্যমান থাকে, তবে সেই হত্যাটিকে অপরাধমূলক নরহত্যা বলা যাবে। দণ্ডবিধির ২৯৯ ধারাকে বিশ্লেষণ করলে যে কয়েকটি উপাদান পাওয়া যায় তা নিম্নরুপঃ
- কোন কাজের দ্বারা মৃত্যূ ঘটে;
- সরাসরি মৃত্যূ ঘটানোর উদ্দেশ্য না থাকলেও মৃত্যূর সমূহ সম্ভাবনা জানা থাকে;
- দেহের কোন অংশে আঘাত করলে মৃত্যূ ঘটতে পারে জেনেও এমনভাবে আঘাত করা ফলস্বরুপ উক্ত ব্যক্তির মৃত্যূ ঘটে; এবং
- এমন কোন কাজ যা করলে মৃত্যূ ঘটতে পারে, তা জানা সত্ত্বেও সেই কাজ করে কোন ব্যক্তির মৃত্যূ ঘাটানো।
অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত উপাদানসমূহের সমন্বয়ে কোন হত্যাকান্ড ঘটায়, তাহলে তা নিন্দনীয় নরহত্যা বলে বিবেচিত হবে।
খুন (Murder) কি?
খুন শব্দটির সাথে জড়িয়ে আছে অশ্রুজল, শূন্যতা ও হাহাকার। তবে জানা দরকার যে, সকল খুনই অপরাধমূলক নরহত্যা; কিন্তু সব অপরাধমূলক নরহত্যা খুন বলে বিবেচিত হয় না। দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ৩০০ ধারা বিশ্লেষণ করলে খুনের ক্ষেত্রেও কয়েকটি উপাদান পাওয়া যায়। উপাদানগুলোর সমন্বয়ে কোন ব্যক্তির মৃত্যূ ঘটানো হলে তা অপরাধমূলক নরহত্যা নয়, বরং খুন হিসেবে গণ্য করা হয়। যেমন-
- এমন কোন কাজ যা মৃত্যূ ঘটানোর উদ্দেশ্যেই করা হয় এবং মৃত্যূও সংঘটিত হয়;
- এমন দৈহিক জখম, যে জখমে মৃত্যূ ঘটাতে পারে বা সম্ভাবনা থাকে তা জানা সত্ত্বেও সে ধরণের জখম করে মৃত্যূ ঘটানো;
- এমন দৈহিক জখম, যার স্বাভাবিক পরিণতি মৃত্যূ ঘটানোর জন্য যথেষ্ট তা জানা সত্ত্বেও সে ধরণের জখম করে মৃত্যূ ঘটানো; এবং
- এমন কোন কাজ, যে কাজে কারো মৃত্যূ ঘটার সম্ভাবনা থাকে তা জানা সত্ত্বেও ঝুঁকি নেওয়ার অজুহাতে সেই কাজ করে, অন্য ব্যক্তির মৃত্যূ ঘটানো।
- সেচ্ছায় বা নিজেকে উস্কে দিয়ে হত্যা করলে তা খুন হিসেবে বিবেচিত হবে;
- সরকারী কর্মকর্তার আইনগত কাজে বাধা দিতে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে হত্যা করলে তা খুন হিসেবে বিবেচিত হবে; এবং
- এমন উত্তেজনা যেটা আত্মরক্ষার জন্য না হয়ে বরং নিজে আক্রমণ করার জন্য উত্তেজিত হয়ে হত্যা করলে তা খুন হিসেবে বিবেচিত হবে।
অপরাধজনক হত্যা ও খুনের শাস্তি
দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২৯৯ ও ৩০০ ধারার দুটি অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রানহানি ঘটলেও শাস্তিগত কিছু পার্থক্য রয়েছে। যথাঃ
১. দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০৪ ধারা অনুযায়ী, ২৯৯ ধারায় বর্ণিত অপরাধমূলক নরহত্যার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা যেকোন মেয়াদের কারাদণ্ড যা ১০ বছর পযর্ন্ত হতে পারে এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।
২. দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ৩০২ ধারা অনুযায়ী, ৩০০ ধারায় উল্লেখিত খুনের শাস্তি মৃত্যুদন্ড বা যাবজ্জীবন কারাদন্ড এবং অর্থদণ্ডেও দণ্ডনীয় হবে।
COMMENTS