ধরা যাক, ‘রহিম’ একটি মোকাদ্দমার বাদী। সে যথারীতি এবং যথা সময়ে বিবাদী ‘করিম‘ এর বরাবর সমন (Summon) জারী করে। কিন্তু বিবাদী ‘করিম’ শুনানীর দিন...
ধরা যাক, ‘রহিম’ একটি মোকাদ্দমার বাদী। সে যথারীতি এবং যথা সময়ে বিবাদী ‘করিম‘ এর বরাবর সমন (Summon) জারী করে। কিন্তু বিবাদী ‘করিম’ শুনানীর দিন আদালতে অনুপস্থিত থাকে। ফলে, আদালত সামগ্রিক বিষয় বিবেচনা করে বিবাদী ‘করিম’ এর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রী জারি করেন। এ ক্ষেত্রে বিবাদী ‘করিম’ কী প্রতিকার পেতে পারে?
নিম্নে একতরফা ডিক্রী (Ex-parte decree) সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরা হলো।
What are the remedies against an ex-parte decree?
একতরফা ডিক্রী হলে বিবাদীর প্রতিকার কি?
পক্ষগণের উপস্থিতি এবং অনুপস্থিতি মোকাদ্দমার উপর প্রভাব ফেলে। যেমন, এটি পরবর্তী শুনানির জন্য কার্যকর হবে কিনা, বরখাস্ত করা হবে বা একতরফা ডিক্রী দেওয়া হবে কিনা ইত্যাদি। উভয় পক্ষই আদালতে হাজির হলেই পরবর্তী শুনানির জন্য মামলাটি চালানো হয়। যখন কোনও পক্ষই উপস্থিত না হয় ,তখন আদালত দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৯ এর বিধি ৩ মোতাবেক মামলাটি খারিজ করতে পারবেন।
এছাড়া, মোকদ্দমা শুনানীর দিন বাদী উপস্থিত এবং বিবাদী অনুপস্থিত থাকলে কি কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৯ এর বিধি ৬ এ আলোচনা করা হয়েছে।
সেখানে বলা হয়েছে যে, মোকদ্দমা শুনানীর দিন বাদী উপস্থিত এবং বিবাদী অনুপস্থিত। বিবাদীর নিকট সমন যথারীতি জারী হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে আদালত মোকদ্দমার একতরফা নিষ্পত্তি করবেন।
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এ একতরফা ডিক্রীর সংজ্ঞা দেয়া হয় নি, তবে একতরফা ডিক্রী (Ex-parte decree) বলতে বিবাদীর অনুপস্থিতে কোন মোকদ্দমার রায় প্রদান করাকে বুঝায়। এই জাতীয় ডিক্রী বাতিল বা অকার্যকর বা নিষ্ক্রিয় নয়, তবে এটি কেবল অকার্যকর এবং বাতিল হওয়া অবধি এই বৈধ ডিক্রিটির সমস্ত শক্তি রয়েছে।
বিবাদী যে সব প্রতিকার পেতে পারেন
আদালত কর্তৃক একতরফা ডিক্রী প্রদান করা হলে, বিবাদী নিম্নলিখিত প্রতিকার দাবী করতে পারবে। যথাঃ
১. বিবাদী একতরফা ডিক্রীর বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। কারণ, দেওয়ানী কার্যবিধির ৯৬ ধারায় স্পষ্টভাবে বলা আছে-
“An appeal may lie from Ex-parte decree.” অর্থাৎ একতরফা ডিক্রী থেকে আপীল করা যাবে।
২. কোন মামলায় বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রী হলে তা রদ করার জন্য বিবাদী ডিক্রী প্রদানকারী আদালতে আবেদন করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বিবাদীকে প্রমাণ করতে হবে যে, তার উপর সমন যথারীতি জারী হয়নি বা অন্য কোন পর্যাপ্ত কারণে মামলার শুনানী (Hearing) কালে সে আদালতে হাজির হতে পারে নি।
অপরপক্ষকে নোটিশ না দিয়ে একতরফা ডিক্রী রদের আদেশ দেয়া যাবে না। বিবাদীর উপর সমন জারী হয়ে থাকলে একতরফা ডিক্রী রদের আবেদন তামাদি আইন, ১৯০৮ এর ১৬৪ ধারানুসারে ডিক্রীর তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে করতে হবে। আর বিবাদী সমন না পেয়ে থাকলে, একতরফা ডিক্রীর বিষয় জানার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ডিক্রী রদের আবেদন করতে হবে।
৩. দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ আদেশর বিধি ১৩ অনুযায়ী বিবাদী সরাসরি একতরফা ডিক্রী রদ করার আবেদন করতে পারবেন। তবে এ ক্ষেত্রে বিবাদীকে দু’টি শর্ত পূরণ করতে হবে। যথাঃ
- বিবাদী আদালতের মাধ্যমে বাদীকে অনধিক ৩ হাজার টাকা খরচ দিবেন; এবং
- বিবাদী একতরফা ডিক্রীর তারিখ হতে ৩০ দিনের মধ্যে হলফনামা (Affidavit) সহযোগে একতরফা ডিক্রী রদ করার আবেদন করবেন।
৪. বাদী যদি জালিয়াতি (Fraud exercise) করে বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা ডিক্রী পেয়ে থাকে, তাহলে বিবাদী সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ এর ৪২ ধারার অধীনে ঘোষণামূলক মামলা (Declaratory suit) দায়ের করতে পারবে।
৫. বিবাদী দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৪৭, বিধি ১ অনুযায়ী রিভিউ করতে পারবে।
৬. বিবাদী আপীল করে কোন প্রতিকার না পেলে দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১১৫ ধারা অনুযায়ী রিভিশন দায়ের করতে পারবে।
Help us
ReplyDelete