ধরা যাক, ‘রহিম’ একজন আসামী। পুলিশ অফিসারের হেফাজতে থাকাকালীন সময় সে পুলিশ অফিসারের নিকট স্বীকারোক্তি করে যে, সে অভিযুক্ত অপরাধটি করছে। এখন ব...
ধরা যাক, ‘রহিম’ একজন আসামী। পুলিশ অফিসারের হেফাজতে থাকাকালীন সময় সে পুলিশ অফিসারের নিকট স্বীকারোক্তি করে যে, সে অভিযুক্ত অপরাধটি করছে। এখন বিষয় হলো- রহিমের এই স্বীকারোক্তি কি তার বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য?
নিম্নে ফৌজদারী মামলার আসামীর স্বীকারোক্তির গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর সংশ্লিষ্ট ধারা উল্লেখপূর্বক আলোচনা করা হলো।
Confession when irrelevant?
ফৌজদারী মামলার আসামীর স্বীকারোক্তি কখন অপ্রাসঙ্গিক?
ফৌজদারী মামলায় সাক্ষ্য হিসাবে কোন স্বীকারোক্তি ব্যবহার করতে হলে স্বীকারোক্তি অবশ্যই প্রাসঙ্গিক হতে হবে। যদিও কোন ক্ষেত্রে একটি স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে তা বাংলাদেশ সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এ উল্লেখ করা হয় নি, তবে কোন কোন ক্ষেত্রে স্বীকারোক্তি অপ্রাসঙ্গিক তা সাক্ষ্য আইনের ২৪, ২৫, ২৬ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে।
যে সব ক্ষেত্রে ফৌজদারী মামলায় আসামীর স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য (Confession) অপ্রাসঙ্গিক তা নিম্নরুপঃ
১. প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতির কারণে প্রদত্ত স্বীকারোক্তি
সাক্ষ্য আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত স্বীকারোক্তি অপ্রাসঙ্গিক বলে গণ্য হবে যদি আদালত মনে করে যে, এটি প্রলোভন, ভীতি প্রদর্শন বা প্রতিশ্রুতি ইত্যাদির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছে।কিন্তু প্রলোভন, ভীতি ও প্রতিশ্রুতি অপসারণ করার পর স্বীকারোক্তি প্রদত্ত হলে তা প্রাসঙ্গিক হতে পারে। কোন স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য কিনা তা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে আদালত দুইটি বিষয় বিবেচনা করতে পারে।
- স্বীকারোক্তিটি স্বেচ্ছামূলক (Voluntary) কিনা; এবং
- এটা সত্য কিনা?
Reg Vs. Smith মামলায় ব্যারাক রুমে যুদ্ধ করার সময় একজন সৈনিক খুনের জন্য অভিযুক্ত হয়। যুদ্ধের কিছু পর, সার্জেন্ট-মেজর তার সহযোদ্ধাদের প্যারেডে দাড় করায় এবং বলে যতক্ষণ পর্যন্ত না সে জানতে পারছে কে খুন করেছে ততক্ষন পর্যন্ত সে তাদের সবাইকে প্যারেডে দাড় করে রাখবে।
এখানে প্রলোভনের বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার যে, যদি খুনী দোষ স্বীকার করে তাহলে কমান্ডার তাদেরকে প্যারেড থেকে মুক্তি দিবে। কাজেই মামলায় সিদ্ধান্ত হয় যে, স্বীকারোক্তিটি অপ্রাসঙ্গিক।
উদাহরণঃ
‘করিম’ একটি দস্যুতার অভিযোগে অভিযুক্ত। দোষ স্বীকার করলে এবং ঘটনার বিবরণ দিলে তাকে এক লক্ষ টাকা দেয়া হবে। ‘করিম’ এই প্রলোভনে ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট তার দোষ স্বীকার করে। এই ক্ষেত্রে করিমের স্বীকারোক্তি প্রাসঙ্গিক হবে না।
কিন্তু যদি কোনরূপ প্রলোভন ছাড়াই সে নিজের দোষ স্বীকার করে, তবে তা প্রাসঙ্গিক বা গ্রহণযোগ্য হবে। (ধারা ২৮)
২. পুলিশ অফিসারের নিকট প্রদত্ত স্বীকারোক্তি
সাক্ষ্য আইনের ২৫ ধারায় বলা আছে, কোন অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশের নিকট দোষ স্বীকার করলে তা উক্ত অপরাধীর বিরুদ্ধে প্রমাণ করা যাবে না। অর্থাৎ ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ১৬৪ ধারায় বর্ণিত পন্থা ব্যতীত পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি গ্রহণযোগ্য নয়।
Empresses of India Vs. Pancham [(1882) ILR 4 ALL 198] এই মামলার ঘটনা হলো- ‘পঞ্চম’ একটি মেয়েকে খুন করার জন্য অভিযুক্ত। সে পুলিশকে একটি ছুরি দিয়ে বলেছিল যে, এটা হলো সেই ছুরি যেটা দিয়ে সে খুন করেছে। সে আরও বলেছিল যে, খুনের সময় মেয়েটির নূপুর নিচে ছুঁড়ে ফেলেছিল।
উক্ত দিনে ‘পঞ্চম’ পুলিশের সাথে যেখানে মেয়েটির লাশ খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল সেখানে গিয়েছিল এবং নূপুর দেখিয়েছিল। কিন্তু কোন কিছু খুঁজে পাওয়া যায়নি। মামলায় সিদ্ধান্ত হয় যে, যেহেতু পুলিশের নিকট স্বীকারোক্তি দেওয়া হয়েছে এবং স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কিছু পাওয়া যায় নি। সুতরাং স্বীকারোক্তিটি ‘পঞ্চম’ এর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে না।
৩. পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন আসামীর প্রদত্ত স্বীকারোক্তি
সাক্ষ্য আইনের ২৬ ধারায় বলা আছে যে, পুলিশ কর্মকর্তার হেফাজতে থাকাকালীন কোন ব্যক্তি দোষ স্বীকার করলে তা যদি ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে না হয়, তবে উক্ত স্বীকারোক্তি ঐ ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যাবে না।
২৫ ধারা এবং ২৬ ধারার মধ্যে পার্থক্য হলো- ২৫ ধারার অধীনে যে কোনো অবস্থায় পুলিশকে দেওয়া স্বীকারোক্তি অগ্রহণযোগ্য এবং ২৬ ধারার অধীনে পুলিশ হেফাজতে থাকাকালীন অভিযুক্তর দেয়া স্বীকারোক্তি অগ্রহণযোগ্য।
৪. আত্মরক্ষামূলক বক্তব্য
দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্যে দোষ স্বীকারকারী আত্মরক্ষামূলক বক্তব্য (Self-defending) দিলে তা দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য হিসেবে বিবেচিত হবে না। এছাড়া কোন বক্তব্য দোষ স্বীকারমূলক কিনা তা নির্ধারণ করতে সমস্ত বক্তব্যটি অবশ্যই একসাথে পড়তে হবে।
উদাহরণঃ
‘রহিম’ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট বলে যে, সে পাগল থাকাকালীন করিমকে খুন করেছে। এক্ষেত্রে যদিও রহিম, করিমকে খুন করার কথা স্বীকার করেছে তবুও এটাকে দোষ স্বীকারমূলক বক্তব্য বলা যাবে না। কারণ সে আত্মরক্ষামূলক বক্তব্য (পাগল ছিল) উল্লেখ করেছে।
পরিশেষে বলা যায় যে, পুলিশের হেফাজতে থাকাকালীন সময়ে পুলিশ অফিসারের কাছে রহিমের অপরাধ স্বীকারের কোন গ্রহণযোগ্যতা নেই।
COMMENTS