সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দী একটি ফৌজদারী বিচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাক্ষীর সাক্ষ্যদান সাক্ষ্য আইনে অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রমাণ, কারণ যে ব্যক্তি বিব...
সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দী একটি ফৌজদারী বিচারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাক্ষীর সাক্ষ্যদান সাক্ষ্য আইনে অন্যতম নির্ভরযোগ্য প্রমাণ, কারণ যে ব্যক্তি বিবৃতি দিচ্ছেন তিনি ব্যক্তিগতভাবে ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছেন। সাক্ষ্য আইনের ১৩৫-১৬৫ ধারায় সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দী সম্পর্কিত বিধান রয়েছে।
নিম্নে সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দীতে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন কি, কখন এ ধরণের প্রশ্ন করা যায় এবং কখন করা যায় না সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What is a leading question in examination-in-chief and cross-examination of a witness?
সাক্ষীর জেরা ও জবানবন্দীতে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন কি?
দেওয়ানী বা ফৌজদারী যেকোন মামলায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগণ বিভিন্ন ধরণের সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে রায় তাদের অনুকূলে নিতে চায়। এ লক্ষ্যে, মামলার বিষয়বস্তু প্রমাণের জন্য সাক্ষীকে উভয়পক্ষই প্রশ্ন করে থাকে। আইনের ভাষায় এ জাতীয় পদ্ধতিকে জবানবন্দী ( Examination in Chief ) এবং জেরা ( Cross Examination ) বলা হয়।
জবানবন্দী, পুনঃজবানবন্দী এবং জেরা চলাকালে অনেক ক্ষেত্রেই পক্ষগণের অ্যাডভোকেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং কখনও কখনও বিশেষ প্রশ্ন করে থাকেন, যে প্রশ্নের গর্ভেই উত্তর নিহিত থাকে। অর্থাৎ প্রশ্নকারীর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নের মধ্যেই উত্তর লুক্কায়িত থাকে। আর এরূপ প্রশ্নকেই মূলত Leading Question বা ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বলে।
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ১৪১ ধারায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন বলতে এমন প্রশ্নকে বুঝায় যে উত্তর প্রশ্নকারী চাইছে তা প্রশ্নেই উল্লেখ থাকে।
এই ধরণের প্রশ্নের মধ্যে উত্তর থাকার কারণে উত্তরদাতাকে কষ্ট করে কিছু বলতে হয় না; বরং কেবল ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলাই যথেষ্ট।
উদাহরণঃ
বিরুদ্ধ পক্ষের অ্যাডভোকেট জানতে চাইলেনঃ রহিম খুন হওয়ার সময় আপনি হত্যাকারী করিমকে কালো পোশাকে দেখেছিলেন। তাই না?
এই প্রশ্নটি নিজেই ধারণা দেয় যে, করিম একটি কালো পোশাক পরেছিল, এই প্রশ্নটি সাক্ষীকে ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, প্রশ্নকর্কতা তার জবাবে কী চায়।
অন্যদিকে, যদি বিরুদ্ধ পক্ষের অ্যাডভোকেট জিজ্ঞাসা করেনঃ করিম কি পরেছিল?
এই প্রশ্নের উত্তর পূর্ববর্তীটির মতই, তবে প্রশ্নটিতে কোন ধারণা নেই। এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন এবং কোনভাবেই ইঙ্গিত দিচ্ছে না। আদালত এই ধরণের প্রশ্নের অনুমতি দেয়।
সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন কখন করা যায় না?
বিরুদ্ধপক্ষ যদি আপত্তি করেন, তবে একজন সাক্ষীর জবানবন্দী ( Examination in Chief ) ও পুনঃজবানবন্দী গ্রহণকালে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা চলবে না। এছাড়া, যে সকল বিষয় ভূমিকামূলক বা অবিসংবাদিত কিংবা পূর্বেই পর্যাপ্তভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে আদালত মনে করেন সেই সকল বিষয়ে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করতে আদালত অনুমতি দিতে পারেন।
সাধারণত, সাক্ষীকে আহ্বানকারী পক্ষ নিজ সাক্ষীর কাছে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন না। ১৪২ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, যদি বিরুদ্ধপক্ষ আপত্তি না জানায় এবং আদালত অনুমতি দিলে জবানবন্দী ( Examination in Chief ) এবং পুনঃজবানবন্দীর সময়েও ইঙ্গিতমূলক প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যাবে।
নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যেতে পারেঃ
- যেই ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন ও তার উত্তর ভূমিকামূলক;
- যে বিষয়টি নিয়ে কোন প্রকার সন্দেহ বা বিতর্ক নেই;
- ইঙ্গিতবাহী এমন প্রশ্ন যা সাক্ষীর স্মৃতিচারণে সহায়তা করে;
- কোন কিছু সনাক্ত করে এমন ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন; এবং
- পর্যাপ্তরূপে প্রমাণিত হয়েছে এমন বিষয়।
ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন কখন করা যায়?
সাক্ষ্য আইনের ১৪৩ ধারা অনুসারে, Cross-examination বা জেরার সময় সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যেতে পারে। অর্থাৎ জেরার সময় বিরুদ্ধপক্ষ আদালতের অনুমতি ব্যতীতই সাক্ষীকে ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন করতে পারবে। কারণ, জবানবন্দী গ্রহণের সময় সাধারণত কোন একটি পক্ষ কর্তৃক আহুত সাক্ষী তার পক্ষেই সাক্ষ্যপ্রদান করে থাকেন।
সুতরাং, তার উত্তর খণ্ডন করার জন্য, বিরুদ্ধপক্ষ জেরার সময় ইঙ্গিতবাহী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারে।
COMMENTS