মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় সিনেট এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদকে কংগ্রেস বলে। ইহা দ্বি-কক্ষ ব...
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শাসন ব্যবস্থায় সিনেট এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সংস্থা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন পরিষদকে কংগ্রেস বলে। ইহা দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট। উচ্চ কক্ষের নাম সিনেট এবং নিম্ন কক্ষের নাম প্রতিনিধি সভা (House of Representatives)।
গ্রেট ব্রিটেনের উচ্চ কক্ষ লর্ড সভা বা অন্যান্য দেশের উচ্চ সভার ন্যায় এই সংস্থা নয়। স্ট্রং (C. F. Strong) এর মতে, সিনেট হলো একমাত্র কার্যকরী যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিষদ। রাষ্ট্রপতি, সিনেট ও জনপ্রতিনিধি সভা এই তিনটি প্রধান অঙ্গ হলেও কার্য সম্পাদনের কোন কোন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি বা প্রতিনিধি সভাকে বাদ দেওয়া চলে; কিন্তু সিনেটকে বাদ চলে এরূপ কার্যক্ষেত্র নাই বললেই চলে।
অঙ্গরাজ্যসমূহের সমপ্রতিনিধিত্বের ভিত্তিতে সিনেট গঠিত হয়। ৫০টি রাজ্যের ২ জন করে ১০০ জন সিনেটর থাকেন। বর্তমানে সিনেট সদস্যগণ তাদের নিজ রাজ্যের জনগণ কর্তৃক প্রত্যক্ষভাবে ৬ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। যুক্তরাষ্ট্রের উপ-রাষ্ট্রপতি সিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন। তবে রাষ্ট্রপতি ইমপিচমেন্টের ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি সভাপতিত্ব করেন।
নিম্নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী আলোচনা করা হলো।
Powers and functions of the USA Senate
সিনেটের ক্ষমতা ও কার্যাবলী
সিনেট মূলতঃ ৩ ধরণের ক্ষমতা ও কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে। এগুলি হচ্ছে-
- (ক) আইন প্রণয়ন;
- (খ) শাসন; ও
- (গ) বিচার সংক্রান্ত।
(ক) আইন প্রণয়ন (Legislative Powers )
আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সিনেটের ক্ষমতা ব্যাপক। সাধারণ বিলগুলি সিনেটে উপস্থাপিত হয়। কিন্তু অনুমোদনের জন্য সিনেটে পেশ করা হয়। প্রয়োজনবোধে সিনেট সেই অর্থ-বিলের ব্যাপক পরিবর্তন করতে পারে। যেকোন বিল সিনেট অনুমোনদন না দিলে আইনে রূপান্তরিত হতে পারে না। তাই প্রতিনিধি পরিষদের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা কার্যত সিনেটের হাতে পড়েছে।
(খ) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা (Executive Powers)
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট শাসন বিভাগের সর্বোচ্চ ক্ষমতাশালী ব্যক্তিত্ব। কিন্তু চেক এণ্ড ব্যালেন্সের মাধ্যমে সিনেট তার ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং আইন প্রণয়নের মাধ্যমেও শাসন সংক্রান্ত অনেক ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট বহুবিধ নিয়োগ প্রদান করে থাকেন। কিন্তু এ সকল নিয়োগের জন্য সিনেটের অনুমোদনের প্রয়োজন। রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন ও সরকারী বিভাগের পদস্থ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন। প্রেসিডেন্ট যে সকল সন্ধি ও চুক্তি করে থাকেন সিনেটের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্যের ভোটের মাধ্যমে তা অনুমোদিত হতে হয়।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর প্রেসিডেন্ট উইলসন ভার্সাই সন্ধি ও জাতিসংঘের সংবিধানে স্বাক্ষর করে আসলে সিনেট তা অনুমোদন করতে অস্বীকার করে। ফলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর মূল্যহীন হয়ে পড়ে। বর্তমানে অবশ্য শাসন বিভাগীয় কোন কোন চুক্তির ক্ষেত্রে সিনেটের অনুমোদন প্রয়োজন হয় না।
সরকারী কর্মচারীদের কার্যকলাপ সম্পর্কেও সিনেট তদন্ত করে থাকে। এই তদন্তের ভয়ে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাগণ সদা সন্ত্রস্থ থাকেন। এছাড়া উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কোন প্রার্থী সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হলে সিনেটই উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করে।
(গ) বিচার সংক্রান্ত্র ক্ষমতা (Judicial Powers)
সিনেটের বিচার সংক্রান্ত অনেক ক্ষমতা রয়েছে। শাসন সংক্রান্ত সকল প্রকার অভিযোগের বিচার করে থাকে সিনেট। প্রেসিডেন্ট ছাড়াও ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সিনেট বিচার করতে পারে। প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্টের অভিযোগ আনতে পারে প্রতিনিধি পরিষদ কিন্তু সিনেট সেই অভিযোগ বিচার করতে পারে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিচারপতি সিনেট সভায় সভাপতিত্ব করেন। এভাবে সমগ্র প্রশাসন যন্ত্রকে সিনেট নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের নিকট সিনেট সদস্য পদ বেশ আকর্ষণীয়। তাই টকভিলের (Tocqueville) ভাষায়, সিনেট বর্তমানে “বিজ্ঞ ও প্রখ্যাত আইনজীবী, সৈন্যাধ্যক্ষ, রাজনৈতিক নেতা প্রভৃতির পরিষদ।” আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপত্তি যতই বৃদ্ধি পাচ্ছে কার্যকর পরিষদ হিসেবে সিনেটের মর্যদারও তত প্রসার ঘটছে।
ধন্যবাদ
ReplyDelete