ধরা যাক, ‘রহিম’ একটি বাড়ীর স্বত্ব ঘোষণা ও দখল উদ্ধারের জন্য ঢাকার ১ম সহকারী জজ আদালতে ‘করিম’ এর বিরুদ্ধে ১০/১/০৩ তারিখে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ...
ধরা যাক, ‘রহিম’ একটি বাড়ীর স্বত্ব ঘোষণা ও দখল উদ্ধারের জন্য ঢাকার ১ম সহকারী জজ আদালতে ‘করিম’ এর বিরুদ্ধে ১০/১/০৩ তারিখে দেওয়ানী মোকদ্দমা নং ১/২০০৩ দাখিল করে। আদালত দেখে যে, আর্জিতে যে প্রতিকার চাওয়া হয়েছে তাতে মোকদ্দমা মূল্য (তায়েদাদ) কম দেখানো হয়েছে। ফলে, আদালত ২০/১/০৩ তারিখের মধ্যে মোকদ্দমা মূল্য সংশোধন করার নির্দেশ দেয়। বাদী আদালতের নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হলে আদালত ২১/০১/০৩ তারিখের এক আদেশে আর্জি খারিজ করে। বাদীর জন্য কি কোন প্রতিকার আছে?
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Is there any remedy for the plaintiff if the plaint is rejected?
আর্জি খারিজ হলে বাদীর জন্য কি কোন প্রতিকার আছে?
আর্জি (Plaint) বলতে বাদীর লিখিত দাবী এবং প্রতিকার প্রার্থনা আবেদন পত্রকে বুঝায়, যা আদালতে দাখিলের মাধ্যমে মোদ্দমার সূচনা হয়। দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ২৬ ধারানুসারে, প্রত্যেক মোকাদ্দমা আর্জি দাখিলের মাধ্যমে বা নির্ধারিত অন্য কোন পন্থায় দায়ের করতে হবে। অর্থাৎ দেওয়ানী মোকাদ্দমা দুই ভাবে দায়ের করা যায়ঃ
- আর্জি উপস্থাপনের মাধ্যমে; এবং
- নির্ধারিত বিবিধ ফর্মের মাধ্যমে আবেদন।
এছাড়া, আর্জির বিষয়বস্তু কি হবে তা দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ- ৭, বিধি- ১-৯, ১৪, ও ১৫ তে বিস্তারিতভাবে উল্লেখ আছে।
যাই হোক, দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৭ এর রুল ১১ অনুসারে, নিম্নোক্ত ৪টি কারণে আদালত আর্জি খারিজ বা প্রত্যাখান আদেশ দিতে পারেন এবং বিচারিক আদলত যদি কোন আর্জি খারিজ বা প্রত্যাখ্যান করেন, তবে আদেশ- ৭ এর রুল ১২ অনুযায়ী কারণ উল্লেখ পূর্বক একটি আদেশ লিপিবদ্ধ করবে। যদি আর্জিতে-
- মোকাদ্দমার কারণ উল্লেখ না থাকে;
- দাবীকৃত প্রতিকারের মূল্য কম উল্লেখ করা হলে; এবং বাদী আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মূল্য সংশোধনে করতে ব্যর্থ হলে;
- প্রয়োজনের তুলনায় কম মূল্যমানের স্ট্যাম্পে আর্জি দাখিল করলে; এবং বাদী আদালত কর্তৃক স্থিরকৃত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প-পেপার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হলে; এবং
- আইনানুযায়ী উক্ত মোকাদ্দমা নিষিদ্ধ হলে। যেমন, মোকাদ্দমা তামাদিতে বারিত হলে।
এখানে প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য যে, মোকদ্দামার সঠিক মূল্যমান অথবা প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প দাখিলের জন্য আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময়সীমা ২১ (একুশ) দিনের বেশি হবে না।
আরজি খারিজ বা প্রত্যাখানের বিরুদ্ধে প্রতিকার
আদালত কোন আর্জি খারিজ বা প্রত্যাখান করলে বাদী নিম্নোক্ত প্রতিকার পেয়ে থাকেঃ
- পুনারায় একই বিষয়ে নতুন আর্জি দাখিল করতে পারে [আদেশ-৭, বিধি-১৩];
- আর্জি খারিজ বা প্রত্যাখান অথবা নাকচ আদেশ ডিক্রী হওয়ার কারণে এর বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে;
- পুনরায় যদি আপীল না করা হয়, তবে ধারা-১১৪ এর অধীন রিভিউ করা যাবে।
এবার আসা যাক রহিম বনাম করিম মামলায়, যে মামলা দিয়ে আমাদের আলোচনাটি শুরু করেছিলাম। উক্ত মামলায় দেখা যায় যে, রহিম তার মোকাদ্দমার আর্জিতে দাবীকৃত প্রতিকারের মূল্য কম উল্লেখ করেছেন, যা দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ-৭ এর রুল-১১ অনুসারে প্রত্যাখানযোগ্য। এছাড়া আদালত তাকে মূল্যমান সংশোধনের জন্য একটি নির্ধারিত সময় দেন। কিন্তু সে আদালত কর্তৃক নির্ধারিত সময় অর্থাৎ ২১ দিনের মধ্যে তা সংশোধন করতে ব্যর্থ হয়।
কাজেই দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ ৭ এর রুল ১১ অনুযায়ী আদালত রহিমের আর্জি খারিজ বা প্রত্যাখান করেছেন। এই ক্ষেত্রে, বাদী রহিম দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর আদেশ-৭, বিধি-১৩ এর অধীনে একই বিষয়ে নতুন আর্জি দাখিল করতে পারে।
পরিশেষে বলা যায় যে, আর্জি আদালতে মামলা দায়েরের প্রথম পদক্ষেপ। সুতরাং যথাযথ পরিশ্রমের সাথে আর্জির খসড়া করা দরকার। এতে অবশ্যই কার্যবিধির ৭ আদেশে উল্লিখিত সমস্ত বিবরণ অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
COMMENTS