কোন ব্যক্তির কাজ বা হুমকির কারণে অন্য ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার বা মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্থ হলে, দেওয়ানী আদালত ক্ষতিগ্রস্থের অভিযোগ দায়েরের ভিত...
কোন ব্যক্তির কাজ বা হুমকির কারণে অন্য ব্যক্তির সম্পত্তির অধিকার বা মর্যাদা ক্ষতিগ্রস্থ হলে, দেওয়ানী আদালত ক্ষতিগ্রস্থের অভিযোগ দায়েরের ভিত্তিতে কার্যবিধির আওতায় একটি ডিক্রী জারী করে। যে ব্যক্তির পক্ষে ডিক্রী পাস হয় তাকে ডিক্রী-হোল্ডার (Decree-holder) এবং যার বিরুদ্ধে ডিক্রী পাস হয় তাকে সাব্যস্ত-দেনাদার (Judgement debtor) বলা হয়।
দেওয়ানী কার্যবিধিতে ডিক্রী জারীর অনেক পন্থা আছে। আর এ রকম একটি পন্থা হলো- ‘গ্রেপ্তার’ এবং ‘আটক’।
নিম্নে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Arrest and Detention under CPC
দেওয়ানী কার্যবিধির অধীনে গ্রেপ্তার ও আটক
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ৫১ ধারা হতে ৫৯ ধারা এবং আদেশ ২১ এর ৩০ বিধি হতে ৪০ বিধি পর্যন্ত এ ব্যাপারে বিধান রয়েছে। এটি ডিক্রীদারের জন্য একটি প্রতিকারমূলক বিধান, যেখানে তার পক্ষে মামলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
আর এই ধরনের গ্রেপ্তার এবং আটকের আকারে প্রতিকার সাব্যস্ত-দেনাদারের বিরুদ্ধে পাস করা হয়, যদি সে তার বিরুদ্ধে পাসকৃত ডিক্রীটি সন্তুষ্ট করতে ব্যর্থ হন।
আরও উল্লেখ্য যে, এই বিধানটি ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যার বিরুদ্ধে কার্যবিধির আওতায় ডিক্রী পাস করা হয়েছে। এছাড়া, যখন কোন ব্যক্তির পক্ষে একটি ডিক্রী পাস হয়, তখন সেই ব্যক্তিকে সেই ডিক্রী কার্যকর করার জন্য আদালতে যেতে হবে।
অতঃপর, আদালত দেওয়ানী কার্যবিধির বিধান অনুযায়ী সাব্যস্ত-দেনাদারকে গ্রেপ্তার ও আটকের জন্য আদেশ দিতে পারেন।
কখন গ্রেপ্তার এবং আটকের আদেশ দেওয়া যেতে পারে?
দেওয়ানী কার্যবিধি ৫১ ধারানুসারে, ডিক্রী কার্যকরের জন্য ডিক্রীদারের আবেদনক্রমে আদালত সাব্যস্ত-দেনাদারকে গ্রেপ্তার ও আটকের মাধ্যমে এই ধরনের ডিক্রী কার্যকর করতে পারেন।
আদেশ ২১ এর অধীনে নিম্নলিখিত ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার এবং দেওয়ানী কারাগারে আটকের জন্য ডিক্রী পাস হতে পারেঃ
- বিধি ৩০ এর অধীনে, অর্থ পরিশোধের জন্য সাব্যস্ত-দেনাদারকে গ্রেপ্তার এবং আটকের মাধ্যমে একটি ডিক্রী কার্যকর করা যেতে পারে;
- বিধি ৩১ এর অধীনে, যেখানে ডিক্রীটি একটি অস্থাবর পক্ষের জন্য, সেখানে সাব্যস্ত-দেনাদারকে গ্রেপ্তার এবং আটকের মাধ্যমে এটি কার্যকর করা যেতে পারে; এবং
- বিধি ৩২ এর অধীনে, যেক্ষেত্রে ডিক্রীটি চুক্তির নির্দিষ্ট কার্য সম্পাদনের জন্য বা আদালতের স্থগিতাদেশের (Injunction) জন্য, সেখানে আদালত সাব্যস্ত-দেনাদারকে গ্রেপ্তার ও আটকের মাধ্যমে ডিক্রীটি কার্যকর করতে পারে।
কাকে গ্রেপ্তার করা যাবে না?
দেওয়ানী কার্যবিধির বিভিন্ন বিধানের অধীনে গ্রেপ্তার এবং আটক থেকে অব্যাহতিপ্রাপ্ত কয়েক শ্রেণীর ব্যক্তি রয়েছে, যাদেরকে গ্রেপ্তার করা যাবে না। যথাঃ
- ৫৬, ধারা অনুসারে নারী;
- ১৩৫(১) ধারা অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাগণ;
- ১৩৫(২) ধারানুযায়ী যেখানে কোন বিষয় বিচারাধীন রয়েছে, তাদের আবেদনকারী, মুখতার, রাজস্ব-এজেন্ট এবং সমনের সাক্ষিগণ;
- ধারা ১৩৫(এ) ধারা অনুযায়ী আইনসভার সদস্যগণ;
- ৫৫(২) ধারার অধীনে, সরকারী প্রজ্ঞাপন অনুসারে ঐ ব্যক্তি বা শ্রেণীর ব্যক্তি যাদের গ্রেপ্তারে জনসাধারণ বিপদ ও অসুবিধার সম্মুখীন হবে; এবং
- ৫৮(১এ) ধারার অধীনে, যেক্ষেত্রে ডিক্রীর প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ ৫০ টাকারও কম।
গ্রেপ্তার ও আটক পদ্ধতি
গ্রেপ্তার এবং আটকের জন্য কোন পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে তা দেওয়ানী কার্যবিধর ৫৫ ধারায় উল্লেখ করা হয়েছ।
সেখানে বলা হয়েছে যে, ডিক্রী জারীর জন্য সাব্যস্ত দেনাদারকে (Judgment Debtor) যে কোন দিন যে কোন সময় গ্রেফতার করে দেওয়ানী কারাগারে আটক রাখা যাবে। আটক আদেশদানকারী আদালত যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার দেওয়ানী কারাগারে তাকে আটক রাখা যেতে পারে। তবে প্রবেশ ও সময় সম্পর্কিত কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তা নিম্নরুপঃ
- সূর্যাস্তের পরে এবং সূর্যোদয়ের আগে কোন বাসগৃহে প্রবেশ করা যাবে না;
- কোন বাসগৃহের দরজা ভেঙে ফেলা যাবে না; এবং
- কোন বাসগৃহে কোন ধার্মিক নারী থাকলো উক্ত নারীকে সরে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত সময় এবং সুযোগ প্রদান না করে প্রবেশ করা যাবে না।
আটকের মেয়াদ ও মুক্তি
দেওয়ানী কার্যবিধির ৫৮ ধারানুসারে, ডিক্রী জারীর জন্য সাব্যস্ত-দেনাদারকে আটক করার ক্ষেত্রে ২টি ভাগ রয়েছে। যথা:
- ডিক্রীর প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ ৫০ টাকা বা তার কম হলে ৬ সপ্তাহ আটক রাখা যাবে; এবং
- ডিক্রীর প্রদত্ত অর্থের পরিমাণ ৫০ টাকার অধিক হলে ৬ মাস আটক রাখা যাবে।
তবে, উক্ত ব্যক্তিকে আটকের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার পূর্বে মুক্তি দেয়া যাবে; যদি যেকোন উপায়ে ডিক্রীর দেনা পরিশোধ করে দেয়, কিংবা যার আবেদনের প্রেক্ষিতে আটক রাখা হয়েছে তিনি অনুরোধ করলে বা তিনি খোরপোষ ভাতা দেওয়া বন্ধ করে দিলে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই ক্ষেত্রে যে ডিক্রী জারিতে মুক্তি দেয়া হবে সেই বিষয়ে তাকে পুনরায় আটক করা যাবে না।
এছাড়া, ৫৯ ধারাতে বিধান রয়েছে যে, ডিক্রী জারীর জন্য সাব্যস্ত-দেনাদারের বিরুদ্ধে Warrant ইস্যু হওয়ার পরে যেকোন সময় উক্ত ব্যক্তির গুরুতর অসুস্থতার কারণে আদালত উহা বাতিল করতে পারবেন এবং উক্ত ব্যক্তিকে দেওয়ানী কারাগারে আটক করা হলে মুক্তি দিতে পারবেন। এই ক্ষেত্রেও উক্ত ব্যক্তিকে পুনরায় আটক করা যাবে না।
COMMENTS