ধরা যাক, কবির, রহমানের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রহমানের পকেট মারার চেষ্টা করে। কিন্তু রহমানের পকেটে কিছুই না থাকার কারণে তার প্রয়াস ব্যর্থ হয়। এ ক্...
ধরা যাক, কবির, রহমানের পকেটে হাত ঢুকিয়ে রহমানের পকেট মারার চেষ্টা করে। কিন্তু রহমানের পকেটে কিছুই না থাকার কারণে তার প্রয়াস ব্যর্থ হয়। এ ক্ষেত্রে কি কবির কোন অপরাধ করেছে?
সাধারণ দৃষ্টিতে মনে হতে পারে যে, ‘কবির’ কোন অপরাধ করে নি। কারণ রহমানের পকেটে টাকা বা কোন কিছুই ছিল না। তবে আইনী দৃষ্টিকোণ থেকে সে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছে।
নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Is an attempt to commit an offence a crime?
অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা কি অপরাধ?
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, অপরাধ সংঘটনের ৪ টি পর্যায় রয়েছে। যথাঃ
- অপরাধ সংঘটনের ইচ্ছা (Intention to commit an offence);
- অপরাধ সংঘটনের প্রস্তুতি (Preparation to commit an offence);
- অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা (Attempt to commit an offence); এবং
- অপরাধ সংঘটন (Commission of the offence)।
অপরাধ সংঘটনের উদ্যোগের শাস্তি
কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধের প্রস্তুতিই অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়?
নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে অপরাধের প্রস্তুতিই অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যথাঃ
১. জালমুদ্রা
দন্ডবিধির ২৪২ ধারা অনুসারে, জালমুদ্রা কারোও দখলে থাকলে তা প্রতারণার প্রস্তুতি হিসেবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে বিবেচিত হয়। একইভাবে ২৪৫ ধারার বিধান মোতাবেক জাল মুদ্রা তৈরীর যন্ত্রাদি কারো দখলে থাকলেও উহা শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গণ্য হবে।
এছাড়া জাল স্ট্যম্প তৈরী করার যন্ত্র, ওজনে কম রাখা বাটখারা ইত্যাদি অপরাধের প্রস্তুতি হিসেবে দন্ডযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।
২. অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র
দন্ডবিধির ১২০(খ) ধারার বিধান মোতাবেক অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের লক্ষ্যে কতিপয় ব্যক্তির মতৈক্যে উপনীত হওয়াও একটা অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হয়।
৩. সংক্রামক ব্যাধির উৎস
যদি কোন ব্যক্তি তার নিজস্ব ভূমিতে এমন কোন কার্যক্রম চালায় যার ফলে উক্ত জায়গা হতে সংক্রামক ব্যাধি ছড়িয়ে মানুষের জীবন বিপন্ন হবার সম্ভাবনা থাকে, যদিও বাস্তবে এই জাতীয় সংক্রমন না ছড়ায় তবুও সেক্ষেত্রে দন্ডবিধির ২৭০ ধারা অনুযায়ী উক্ত কর্মকান্ড শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
৪. ভেজাল খাদ্য, ঔষধ ইত্যাদি
ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে খাদ্যদ্রব্যে কোন ভেজাল মেশানো হলে উহা দন্ডবিধির ২৭২ ধারা মোতাবেক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এই নিয়ম অনুযায়ী ঔষধ,পানীয় ইত্যাদিতে ভেজাল মেশানোর প্রস্তুতিও অপরাধের প্রস্তুতি হিসেবে শাস্তিযোগ্য।
৫. ডাকাতির প্রস্তুতি
ডাকাতি করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা দন্ডবিধির ৩৯৯ অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। আসলে, এই সমস্ত অপরাধের প্রস্তুতি নেয়াই অপরাধ সংঘটনের প্রচেষ্টা বা সংঘটন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলস্বরূপ, এর দন্ডবিধিতে শাস্তির বিধান রয়েছে।
৬. খুন করার চেষ্টা
খুন করা যেমন অপরাধ তদ্রুপভাবে অপরাধী প্রকৃত খুন না করে খুন করার চেষ্টা করলেও তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। (ধারা-৩০৭)
উদাহরণঃ
রহিম হত্যা করার জন্য পিস্তল দিয়ে করিমকে গুলি করে। এ ক্ষেত্রে যদি ‘করিম’ মারা যায়, তবে ‘রহিম’ হত্যার জন্য দায়ী। কিন্তু যদি ‘করিম’ আহত হয়, তবে ‘রহিম’ হত্যার প্রয়াসের জন্য দায়বদ্ধ।
৭. আত্মহত্যার চেষ্টা
যদি কোন ব্যক্তি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করে এবং এরুপ অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে কোন কাজ করে থাকে, তবে দন্ডবিধির ৩০৯ ধারায় ১ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে আত্মহত্যা সংঘটনের জন্য কোন শাস্তির বিধান নেই। কিন্তু আত্মহত্যার প্রচেষ্টা চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সর্বোপরি বলা যায় যে, যদি কোন ব্যক্তি খালি বন্দুক দিয়ে কাউকে হত্যা করার চেষ্টা করে, বা খালি পকেট থেকে কিছু চুরি করে, বা খালি সিন্দুক থেকে গয়না চুরি করার চেষ্টা করে। তারপরেও এটিকে “অপরাধ সংঘটনের প্রচেষ্টা” হিসাবে বিবেচনা করা হয়। কারণ এখানে অপরাধ সংঘটনের ইচ্ছা বা অভিপ্রায় উপস্থিত রয়েছে এবং তা সেই অপরাধের সমাপ্তির দিকে পরিচালিত করেছিল।
সুতরাং এটি বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৫১১ ধারা অনুযায়ী “অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা” হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
COMMENTS