বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের আইনী অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুতরাং নাগরিকের সেই অধিকার লঙ্ঘিত হলে আইনে একটি প্রতিকার রয়েছে। সামাজিক জী...
বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্র তার নাগরিকদের আইনী অধিকার নিশ্চিত করেছে। সুতরাং নাগরিকের সেই অধিকার লঙ্ঘিত হলে আইনে একটি প্রতিকার রয়েছে। সামাজিক জীবনে আমরা প্রায়শই বিভিন্ন আইনী সমস্যার সম্মুখীন হই। আমরা যখন আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হই বা প্রতারণার শিকার হই, তখন আমরা আদালতের শরণাপন্ন হই।
আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, সমাজের প্রভাবশালী মহল একটি ইস্যু বা বিষয় নিয়ে পাল্লাপাল্টি একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। এখন প্রশ্ন হলো- যদি মামলার বিষয়বস্তু একই হয়, তবে কি একই বিষয় নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের করা যায় বা একটি ইস্যূতে একাধিক মামলা কি চলতে পারে?
নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Can multiple cases be filed on the same subject?
একই বিষয়ে কি একাধিক মামলা করা যায়?
একই বিষয় নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের করার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধান তিনটি আইনে সুনির্দিষ্ট ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। যথাঃ
ফৌজদারী মামলা
বাংলাদেশ সংবিধানের ৩৫(২) অনুচ্ছেদ অনুসারে, “কোন অপরাধের জন্য কোন ব্যক্তিকে একাধিকবার ফৌজদারীতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা যাবে না।” অর্থাৎ এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে কোন ফৌজদারী মামলায় একাধিকবার শাস্তি প্রদান করা যাবে না।
অন্যদিকে, ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪০৩ ধারাতে এ বিষয়টি সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, “কোন উপযুক্ত আদালত কোন মামলায় একজন ব্যক্তির বিচার করে তাকে শাস্তি বা খালাস প্রদান করলে ঐ আদেশ বলবৎ বা কার্যকর থাকাকালীন একই অপরাধের দায়ে পূনরায় তার বিচার করা যাবে না।”
তবে এই নিয়মের কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে, যা আদালত বিবেচনা করে থাকে।
দেওয়ানী মামলা
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ এর ১০ ও ১১ ধারানুসারে, একই বিষয় নিয়ে একাধিক মামলা দায়ের বা পরিচালনা করা যায় না। উপরোক্ত ধারাদ্বয়ে দুইটি নীতির কথা বলা হয়েছে। যথাঃ
- (ক) রেস সাব-জুডিস (Res sub-judice); এবং
- (খ) রেস জুডিকাটা (Res judicata)।
(ক) রেস সাব-জুডিস
এই নীতি অনুযায়ী কোন আদালত এমন কোন মামলা বিচার করবেন না যার বিষয়বস্তু প্রত্যক্ষভাবে পূর্বে দায়েরকৃত কোন মামলার বিচার্য বিষয় এবং পক্ষও একই।
সহজ অর্থে একটি বিষয় নিয়ে এখতিয়ার আছে এ রকম আদালতে মামলা দায়ের করা হলে ঐ একই বিষয় নিয়ে পূনরায় অন্য আদালতে একই পক্ষগণ কোন মামলা দায়ের করতে পারে না। যদি মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে আদালত পরের মামলার শুনানী স্থগিত রাখবে।
উদাহরণঃ
রহিম এবং করিম দুই প্রতিবেশী। করিম তার মালিকানাধীন জমি দখলের অভিযোগে রহিমকে অভিযুক্ত করে আদালতে আর্জি দাখিলের মাধ্যমে মামলা দায়ের করে। আদালত বিলম্ব করেছে এই মনোভাবে সে অপর আরেকটি আদালতে মামলা দায়ের করে।
এ ক্ষেত্রে, পরের মামলা এবং আগের দায়েরকৃত মামলার বিষয়বস্তু একই হওয়ার কারণে আদালত পরে দায়েরকৃত মামলা বিচারকার্য স্থগিত করবেন। কেননা, উক্ত বিষয়ে অপর একটি আদালতে মামলা বিচারাধীন আছে।
(খ) রেস জুডিকাটা
এই নীতির মূল বিষয় হলো যথাযোগ্য আদালত কর্তৃক চুড়ান্তভাবে কোন মামলা নিস্পত্তি করলে পূনরায় ঐ একই বিষয় বিচার করা যায় না। অর্থাৎ কোন মামলা আইনী প্রক্রিয়ায় নিস্পত্তি হলে ঐ একই বিষয় নিয়ে পূনরায় মামলা চলতে পারে না। কাজেই মামলা দায়ের করা হলে আদালত তা খারিজ করবেন।
উদাহরণঃ
খালেক ও রহিমা বিবি’র মধ্যে একখণ্ড জমির স্বত্ব নিয়ে মামলা চলছে। রহিমা বিবি’র বক্তব্য সে ঐ জমি তার পিতা রহমানের নিকট হতে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত হয়ে তাতে দখলদার ছিল। অতঃপর খালেক অন্যায় ও বে-আইনীভাবে তাকে ঐ জমি হতে বেদখল করেছে। কিন্তু খালেকের বক্তব্য সে ঐ জমি রহিমা বিবির পিতা রহমানের নিকট হতে কবলা মূল্যে খরিদ করে দখল করেছে।
অবশেষে রহিমা বিবি বাদী হয়ে মামলা দায়ের করল। তার বক্তব্য তার পিতা খালেকের বরাবরে ঐ জমির বাবদ কোন কবলা সম্পাদন করে দেয় নাই। সুতরাং খালেক যদি ঐ জমি বিষয়ে কোন কবলা দাখিল করে, তবে তা জাল দলিল বলে গণ্য হবে।
কিন্তু বিচার্যকালে খালেক আসল দলিল হারিয়ে গেছে এই মর্মে এর জাবেদা নকল দাখিল করে মামলা চালিয়ে গেল।
অতঃপর বিচারে আদালত খালেকের কবলা খরিদের সত্যতা বিষয়ে সন্দিহান হয়ে মামলা রহিমা বিবি’র পক্ষে ডিক্রী দিলেন। ডিক্রীর কিছুদিন পর খালেক মারা গেল।
অতঃপর খালেকের পুত্র মালেক আসল কবলা দলিলটি খুঁজে পেল এবং আসল দলিলের বলে পুনরায় রহিমা বিবি’র বিরুদ্ধে পূর্বে হেরে যাওয়া মামলার জন্য স্বত্ব সাব্যস্তে খাস দখলের মামলা দায়ের করল।
এই অবস্থায় মালেকের পূর্বের মামলাটি ‘Res Judicata’ দোষে অচল বলে গণ্য হবে। কারণ পূর্বের মামলায় কবলা দলিল মূলে দাবীর ভূমিতে খালেকের কোন স্বত্ব হয়েছিল কিনা এটিই মূলতঃ প্রত্যক্ষ ও সরাসরিভাবে বিচার্য বিষয় ছিল এবং বিচারে এই প্রশ্নটি খালেকের বিপক্ষে নিষ্পত্তি হয়েছিল। পরবর্তী মামলায় পুত্র মালেকের দাবীর সূত্র এবং পূর্ববর্তী মামলার খালেকের দাবীর সূত্র এক ও অভিন্ন। বিধায়, পরের মামলাটি ‘Res Judicata’ দোষজনিত কারণে চলবে না।
রেস সাব-জুডিস এবং রেস জুডিকাটার কিছু ব্যতিক্রম আছে। আদালত ঐ নীতিমালা অনুসরণ করে এ ধরণের সমস্যা সমাধান করে থাকেন।
উপরোক্ত আইনের বিধান মেনে আদালত মামলা নিষ্পত্তি করলে ঐ একই ইস্যুতে একাধিক মামলা দায়ের করা যায় না এবং আদালতে চলমান বিষয়ে সাধারণত পূনরায় মামলা দায়ের করা যায় না।
COMMENTS