ইসলামী শরীয়তের বিধানানুসারে, জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীকে জবা...
ইসলামী শরীয়তের বিধানানুসারে, জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নির্দিষ্ট কিছু প্রাণীকে জবাই করাই হলো কুরবানী। তবে, কুরবানীর পশু জবাই করার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। কেননা, পশুর মাংসের মাধ্যমে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ যেমন, অ্যানথ্রাক্স, জন্ডিস, জলাতঙ্ক ইত্যাদি ছড়াতে পারে।
এছাড়া, জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে এবং পশু জবাই ও পশুর মাংস বিলিবণ্টনে শৃঙ্খলা আনতে পশু জবাই ও মাংসের মান নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১১ প্রণীত হয়। এই আইন অমান্যে রয়েছে জেল জরিমানা।
নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Sacrifice; and Slaughter Act, 2011
কুরবানী; এবং পশু জবাই আইন, ২০১১
স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম যদি কুরবানী ঈদের তিন দিন (১০ জিলহজ্ব সকাল থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত) এর মধ্যে ছাহিবে নিছাব (সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রৌপ্য অথবা এর যেকোন একটির মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসায়িক পণ্যের মালিক) থাকেন বা হন, তার জন্য কুরবানী করা ওয়াজিব হবে।
অন্যদিকে, নারী যদি সামর্থ্যবান বা ছাহিবে নিছাব হন, তার জন্যও কুরবানী করা ওয়াজিব। এছাড়া, হিজড়ারা মূলত নারী বা পুরুষ, তাই তাদেরও প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হলে কালেমা, নামাজ, যাকাত, রোজা, হজ্বের মত কুরবানীও ওয়াজিব হবে।
আরোও উল্লেখ্য যে, এই নিছাব পরিমাণ অর্থ-সম্পদ বছর অতিক্রান্ত হওয়া শর্ত নয়। তাই সামর্থ্যবান লোকের হাতে যদি নগদ অর্থ না থাকে, তবে আপাতত ঋণ করে হলেও ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে হবে।
যে সব পশু দ্বারা কুরবানী করা যায়
গৃহপালিত পশু যেমন, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ এবং উট দ্বারা কুরবানী করা যায়। উল্লেখিত এই ৬ প্রকার পশু ছাড়া অন্য কোন পশু দ্বারা কোরবানী করা যাবে না। হালাল বন্য পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে না; যদিও তা গৃহপালিত হয়। অর্থাৎ কেউ যদি বাড়ীতে হরিণ পালন করে এবং তা কুরবানী করে, তবে জায়েজ হবে না।
কুরবানীর জন্য ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার বয়স ১ বছর হতে হয়; গরু ও মহিষের বয়স ২ বছর এবং উটের বয়স ৫ বছর হতে হবে। দুম্বার ১ বছর পূর্ণ না হলেও যদি এক বছরের মত হৃষ্টপুষ্ট হয়, তাহলে চলবে। উল্লিখিত পশুগুলো নর-মাদী যা-ই হোক না, তা দ্বারা কুরবানী হবে।
কুরবানীর পশু তরতাজা ও হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কোন খুঁত থাকলে সে পশু দ্বারা কুরবানী আদায় হবে না। যেমন-
- লেজ বা কানের বেশীর ভাগ অংশ কাটা থাকা;
- অন্ধ বা এক চোখ কানা হওয়া;
- এক পা খুঁড়িয়ে চলা বা চলনশক্তিহীন হওয়া; এবং
- উভয় শিং বা কোন এক শিং মূল থেকে উৎপাটিত হওয়া।
অর্থাৎ এমন কোন ত্রুটি, খুঁত বা অপূর্ণতা, যার দ্বারা এটির উপযোগিতা কমে যায় ও মূল্য হ্রাস পায়।
মৃত ব্যক্তির পক্ষে কুরবানী
ওয়াজিব কুরবানী ছাড়াও যে কেউ ছোট, বড়, জীবিত কিংবা মৃত যেকোন ব্যক্তির পক্ষে নফল (Optional) কুরবানী আদায় করা যায়। এ ক্ষেত্রে উভয়েই ছওয়াবের অধিকারী হবেন।
কুরবানী পশু জবাইকারী
কুরবানীর পশু যেকোন মুসলমান জবাই করতে পারেন। নিজের কুরবানীর পশু নিজ হাতে জবাই করাই উত্তম। দোওয়া জানা জরুরী নয়। নিজে জবাই করতে অপারগ হলে যেকোন কাউকে দিয়ে জবাই করাতে পারেন। কুরবানীর পশু জবাইয়ের সময় নিজে উপস্থিত থাকতে পারলে ভালো।
ভাগে (Shareholders) ও আকিকার সাথে কুরবানী
একটি কুরবানী হলো একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা। গরু, মহিষ ও উট প্রতিটি ছাগল, ভেড়া ও দুম্বার সাতটির সমান। কাজেই গরু, মহিষ ও উটে অনূর্ধ্ব ৭টি পর্যন্ত অংশ দেয়া যায়।
আকিকা হলো একটি বা দু’টি ছাগল। সুতরাং গরু, মহিষ বা উটে অংশ হয়ে যেভাবে কুরবানী দেওয়া যায়; একইভাবে একটিকে ৭টি ধরে অংশ হারে আকিকাও করা যায়। কুরবানী ও আকিকা একসঙ্গে করতে কোন বাধা নেই।
কুরবানীর মাংস বন্টন পদ্ধতি
ওয়াজিব ও নফল কুরবানীর গোশত খাওয়া যায় এবং খাওয়ানো যায়; এটি সবাই খেতে পারেন। কুরবানী ও আকিকার গোস্ত নিম্নলিখিত নিয়মে বন্টন করা উত্তমঃ
- তিন ভাগের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনকে দেওয়া;
- তিন ভাগের এক ভাগ দরিদ্র পাড়া-প্রতিবেশীদের দেওয়া; এবং
- নিজের পরিবারের জন্য তিন ভাগের এক ভাগ রাখা।
তবে এর চেয়ে বেশি দিলে আরও ভালো। প্রয়োজনে পুরোটা রেখে দিলেও ক্ষতি নেই। অনেকে ৭ ভাগের এক ভাগ দিয়ে থাকেন।
যেখানে জবাই করতে হবে
Slaughter Act, 2011 এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, “ঈদ বা কোন উৎসবে বা পারিবারিক ভোজনের (Family meal) জন্য জবাইখানার বাইরে পশু জবাই করতে হলে পানি বা পানির উৎস, বায়ূ বা পরিবেশের অন্য কোন উপাদান দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই; এবং নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ করা যায় এমন জায়গাতে পশু জবাই করতে হবে।”
আইন অমান্য করলে শাস্তি
Slaughter Act, 2011 এর ২৪(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, “যদি কোন ব্যক্তি এই আইনে বিবিবদ্ধ কোন বিধান লঙ্ঘন করেন কিংবা সেই অনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদনে বা আদেশ অথবা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হন, তবে তিনি অনুরূপ লঙ্ঘন অথবা ব্যর্থতার দায়ে অনূর্ধ্ব ১ বৎসর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা অন্যূন ৫ হাজার এবং অনূর্ধ্ব ২৫,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।”
আরও বলা হয়েছে যে, “ যদি একই ব্যক্তি এই আইনের কোন বিধান পুনরায় লঙ্ঘন করেন বা সে অনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদনে কিংবা আদেশ অথবা নির্দেশ পালনে ব্যর্থ হন, সেক্ষেত্রে তিনি অনুরূপ লঙ্ঘন বা ব্যর্থতার দায়ে অনূর্ধ্ব ২ বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অন্যূন ১০ হাজার ও অনূর্ধ্ব ৫০,০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ডনীয় হবেন।”
COMMENTS