বিচার পর্বের শুরু হয় মূলত অভিযোগ গঠনের পরে। অন্যদিকে, অপরাধের ভার এবং গুরুতরতা, এখতিয়ার এবং এর জন্য প্রযোজ্য মূল আইনের ভিত্তিতে বিচারের প্র...
বিচার পর্বের শুরু হয় মূলত অভিযোগ গঠনের পরে। অন্যদিকে, অপরাধের ভার এবং গুরুতরতা, এখতিয়ার এবং এর জন্য প্রযোজ্য মূল আইনের ভিত্তিতে বিচারের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। ফলে, বাংলাদেশ ফৌজদারী কার্যবিধিতে মোট তিন ধরণের ট্রায়াল বা বিচার প্রক্রিয়া রয়েছে। যথাঃ
- পরোয়ানা (Warrant Trial );
- সংক্ষিপ্ত বিচার (Summary Trial); এবং
- সেশন (Session Trial)।
উপরোক্ত বিচারসমূহকে আবার দু’ভাগে করা হয়ে থাকে, যেমন নিয়মিত বিচার (Regular Trial); এবং সংক্ষিপ্ত বিচার (Summary trial)।
নিম্নে সংক্ষিপ্ত বিচার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What is a summary trial?
সংক্ষিপ্ত বিচার কি?
সংক্ষিপ্ত বিচারের মূলনীতিটি আইনী প্রবাদ “Justice delayed is justice denied” উপর ভিত্তি করে তৈরী হয়েছে। অর্থাৎ ন্যায়বিচারে বিলম্ব হওয়া ন্যায়বিচারকে অস্বীকার তুল্য।
বাংলাদেশ ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এ Summary Trial বা সংক্ষিপ্ত বিচারের কোন সংজ্ঞা দেয়া হয় নি। তবে “সংক্ষিপ্ত বিচার” বলতে এমন একটি বিচারকে বুঝায় যেখানে সহজ (Short-cut) পদ্ধতিতে একটি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হয়ে থাকে।
গুরুতর নয় এমন অপরাধ এবং যে অপরাধমূলক কাজের জন্য লঘু শাস্তি হয়, সে সব অপরাধসমূহের বিচার সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে করা হয়। এই জাতীয় বিচার জটিল এবং তদন্তের দীর্ঘ প্রক্রিয়া প্রয়োজন এমন মামলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।
মোটকথা, সংক্ষিপ্ত বিচার মূলত Regular Trial বা নিয়মিত বিচারের Simplified বা সহজ সংস্করণ হিসাবে বিবেচিত।
কে সংক্ষিপ্ত বিচার করতে পারেন?
ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬০ থেকে ২৬৫ ধারা পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতি সম্পর্কিত বিধান রয়েছে। ২৬০ ধারা অনুযায়ী তিন শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট সংক্ষিপ্ত পদ্ধতিতে বিচার করতে পারেন। যথাঃ
- (ক) মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ;
- (খ) ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট; এবং
- (গ) প্রথম শ্রেনীর ম্যাজিস্ট্রেট বেঞ্চ বা ক্ষমতাপ্রাপ্ত অন্য কোন ম্যাজিস্ট্রেট।
সংক্ষিপ্ত উপায়ে বিচার্য অপরাধসমূহ
আইনানুযায়ী সমস্ত অপরাধে সংক্ষিপ্ত বিচারের প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা যাবে না, কারণ এটি যথাযথ ন্যায়বিচার প্রদানে গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
সুতরাং, ফৌজদারি কার্যবিধি কোড, ১৮৯৮ এর ২৬২(১) বিধান মোতাবেক একজন ক্ষমতাপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট কার্যবিধির ২০ অধ্যায়ের নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে নিম্নলিখিত বা অন্য যে কোন অপরাধের বিচার করতে পারেনঃ
- যেসব অপরাধ যা মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডনীয় বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ২ বছরের বেশি মেয়াদে কারাদণ্ডনীয় নয়;
- বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০ এর ২৬৪, ২৬৫, এবং ২৬৬ ধারার অধীনে বাটখারা ও মাপকাঠি সম্পর্কিত অপরাধ;
- একই আইনের ৩২৩ ধারায় বর্ণিত স্বেচ্ছাকৃতভাবে আঘাত;
- দণ্ডবিধির ৩৭৯, ৩৮০ বা ৩৮১ ধারা অধীনে চুরি, যেখানে চুরি করা সম্পত্তির মূল্য ১০.০০০/= অতিক্রম করে না;
- একই আইনের ৪০৩ ধারার অধীনে অসাধুভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ, যেখানে অসাধুভাবে আত্মসাৎকৃত সম্পত্তির মূল্যমান দশ হাজার টাকার বেশি নয়;
- একই আইনের ৪১১ ধারার অধীনে অসাধুভাবে চোরাই মাল গ্রহণ করা, যেখানে এই জাতীয় সম্পত্তির মূশ্য দশ হাজার টাকার বেশি নয়;
- একই আইনের ৪১৪ ধারার অধীনে চোরাই মাল গোপন করার ব্যাপারে সহায়তা করণ, যেখানে এই প্রকার সম্পত্তির মূল্য দশ হাজার অতিক্রম করে না;
- দণ্ডবিধির ৪২৬ ও ৪২৭ ধারার অধীনে অনিষ্ট;
- একই আইনের ৪৪৭ ধারার অধীনে অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ, ৪৪৮ ধারার অধীনে অনধিকার গৃহে প্রবেশ এবং ৪৫১, ৪৫৩, ৪৫৪, ৪৫৬ ও ৪৫৭ ধারার অধীনে অপরাধসমূহ;
- দণ্ডবিধির ৫০৪ ধারার অধীনে শান্তিভঙ্গের জন্য উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইচ্ছাকৃত অপমান, ৫০৬ ধারার অধীনে অপরাধমূলক ভীতি প্রদর্শন এবং ৫০৯ ও ৫১০ ধারার অধীনে অপরাধসমূহ;
- দণ্ডবিধির ১৭১(ঙ) ও ১৭১(চ) ধারার অধীনে ঘুষ এবং নির্বাচনে অন্যায় প্রভাব প্রয়োগ বা ছদ্মবেশ ধারণ;
- পূর্ববর্ণিত যে কোন অপরাধে সহায়তা; এবং
- The Cattle Trespass Act, 1871 এর ২০ ধারার অধীনে অপরাধসমূহ।
শাস্তি
ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ২৬২(২) ধারানুসারে, সংক্ষিপ্ত বিচার পদ্ধতিতে কোন অপরাধে কোন ব্যক্তি অপরাধী হলে তাকে ২ বছরের অধিক মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যাবে না। তবে আইন অনুসারে অভিযুক্তকে কি পরিমাণ জরিমানা করা যেতে পারে তার বিষয়ে কোন বিধিনিষেধ নেই।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ফৌজদারী কার্যবিধির ৪১৪ ধারানুসারে, সংক্ষিপ্ত বিচারে ২০০ টাকার অধিক জরিমান না করা হলে তার বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে না। অর্থাৎ ম্যাজিস্ট্রেট দুইশত টাকার বেশি জরিমানা করলে, আপীল করা যাবে।
COMMENTS