আইনের জন্মের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল জনসাধারণের অধিকার সংরক্ষণ করা। কোন ব্যক্তির উপর অন্যায় ও অবিচার করা হলে সে আইনের আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা কর...
আইনের জন্মের পিছনে অন্যতম কারণ ছিল জনসাধারণের অধিকার সংরক্ষণ করা। কোন ব্যক্তির উপর অন্যায় ও অবিচার করা হলে সে আইনের আশ্রয় পাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু যখন আইন কোন ব্যক্তিকে আশ্রয় দেওয়ার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়, তখন সেই ব্যক্তি অসহায় হয়ে পড়ে এবং আইনের প্রতি তার বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে।
সুতরাং, এটি একটি সাধারণ নীতি এই যে, আইনের কোন ভুল হওয়া চলবে না। তবে ভুল না করা খুব কঠিন ব্যাপার। ভুল করা মানুষের স্বভাবজাত ধর্ম। বিচারকরাও মানুষ। কাজেই তারা এই ধরণের আচরণের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। একজন বিচারক তার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রেও একটি ত্রুটি করতে পারেন। আর এই কারণে, আপীল, রিভিশন এবং রিভিউ বিধানগুলি জন্ম নিয়েছিল।
বহু শতাব্দী ধরে আপীল, পর্যালোচনা এবং পুনর্বিবেচনার বিধানগুলি আইনের একটি অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই বিধানগুলি বিচারকদের ত্রুটিগুলি অপসারণ বা হ্রাস করার প্রয়াসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষ আপীলও চলে না।
নিম্নে কোন কোন ক্ষেত্রে আপীল করা যায় না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
What are the cases where no appeal lies?
কোন কোন ক্ষেত্রে আপীল চলে না?
‘আপীল’ শব্দটির সংজ্ঞা ১৮৯৮ সালের ফৌজদারী কার্যবিধিতে দেয়া হয় নি। তবে এটিকে উচ্চ আদালত কর্তৃক নিম্ন আদালতের প্রদত্ত একটি সিদ্ধান্তের বিচারিক পরীক্ষা বলা যেতে পারে।
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪১৭ ধারা মোতাবেক মামলার রায়ের বিরুদ্ধে সংক্ষুব্ধ পক্ষ আপীল দায়ের করে থাকেন।
সাধারণত রায় ঘোষণার ৬০ দিনের মধ্যে আপীল দায়ের করতে হয়। মাইনর এ্যাক্টের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আইনের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কিংবা কোর্টের নির্দিষ্ট সময়েরর মধ্যে আপীল দায়ের করতে হয়। আপীল দুই প্রকারে করা যায়। যথাঃ
- ঘটনাগত (Incidental); এবং
- আইনগত (Legal)।
- আসামী নিজে তার দোষ স্বীকার করে (৪১২ ধারা); (এখানে দণ্ডের পরিমাণ বা আইনগত যৌক্তিকতা প্রশ্নে যদি প্রশ্ন উত্তাপিত হয়, তাহলে আপীল করা যাবে।);
- দায়রা আদালত (Session Court) ১ মাসের কম কারাদণ্ডাদেশ দেন (৪১৩ ধারা);
- ম্যাজিস্ট্রেট আদালত (Magistrate Court) ৫০ টাকার কম জরিমানা করেন (৪১৩ ধারা);
- শাস্তি কারাদণ্ড না হয়;
- জরিমানা অনাদায়ে কারাদণ্ড হয়;
- Summary Trial হয় অর্থাৎ সংক্ষিপ্ত বিচারের ক্ষেত্রে জরিমানা ২০০ (দুই শত) টাকার কম হয় (৪১৪ ধারা)। উল্লেখ্য যে, এক্ষেত্রেও আপীল করা যায় যদি এই জরিমানা অন্য কোন দণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে; এবং
- নালিশী মামলা (C. R case) খারিজ হলে আপীল চলে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত ক্ষেত্র ছাড়া অবশিষ্ট সকল ক্ষেত্রে আপীল করা যায়।
যে ক্ষেত্রে আপীল চলে না, সে ক্ষেত্রে প্রতিকার কি?
দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৪৩৫ ধারা মোতাবেক যে সকল মামলায় আপীলের বিধান নেই সেই সকল মামলার আদেশ কিংবা রায় বিবেচনার জন্য সংক্ষুব্ধ পক্ষ উচ্চ আদালতে রিভিশন আবেদন করতে পারবে। কার্যবিধির ৪৩৫ থেকে ৪৪২ ধারা পর্যন্ত রিভিশনের বিধান রয়েছে।
ফৌজদারী কার্যবিধিতে ‘রিভিশন’ শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া হয় নি। তবে কার্যবিধির ৪৩৯ ধারা অনুসারে, উচ্চ আদালত এবং ৪৩৯(ক) দায়রা জজকে রিভিশনের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সর্বোপরি, সাধারণ অর্থে আপীল হলো পক্ষগণকে প্রদত্ত আইনী অধিকার। তবে, রিভিশন (সংশোধন) সম্পূর্ণরূপে ফৌজদারী আদালতের বিবেচনার উপর নির্ভর করে, যার অর্থ এই যে, এটি অধিকার নয়।
COMMENTS