ধরা যাক, আব্দুল রহমান একখণ্ড সম্পত্তি ১৯৯০ সালে রহিমকে উইল করেন এবং তার ব্যক্তিগত আইনজীবী এ. কে. এম. আজাদ কর্তৃক লিখিত করে এবং সত্যায়নকারী স...
ধরা যাক, আব্দুল রহমান একখণ্ড সম্পত্তি ১৯৯০ সালে রহিমকে উইল করেন এবং তার ব্যক্তিগত আইনজীবী এ. কে. এম. আজাদ কর্তৃক লিখিত করে এবং সত্যায়নকারী সাক্ষী হিসেবে জলিল ও কবিরেরর উপস্থিতিতে তাতে স্বাক্ষর দেন।
পরবর্তীতে, ২০২০ সালে ‘রহিম’ এবং করিমের মধ্যে সেই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে বিরোধ দেখা দেয়।
এক্ষেত্রে কি সাক্ষ্য আইনের ৬৮ ধারানুসারে অন্ততঃ একজন প্রত্যায়নকারী সাক্ষীর মাধ্যমে আদালতে উইলটির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হবে, নাকি পুরাতন দলিল হওয়াই রহিম সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করা হতে অব্যাহতি পাবে?
নিম্নে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
How will the court prove the 30-year-old document?
৩০ বছরের পুরাতন দলিল আদালত কিভাবে প্রমাণ করবে?
সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়মানুসারে, কোন প্রাসঙ্গিক দলিল আদালতে দাখিল হলেই তা সাক্ষ্যরুপে গ্রহণীয় হয় না। সাক্ষী দ্বারা দলিলটি প্রমাণ করতে হয় এবং তারপর সাক্ষ্যরূপে গৃহীত হয়। দলিল প্রমাণের সাধারণ পদ্ধতি সাক্ষ্য আইনের ৬৮ ধারায় আলোচনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে-
“যদি কোন দলিল সত্যায়িত হওয়া বিধি দ্বারা প্রয়োজন হয়, তবে উহা সাক্ষ্যরূপে ব্যবহার করা যাবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না উহার সম্পাদন প্রমাণ করার উদ্দেশ্যে কমপক্ষে একজন প্রত্যায়নকারী সাক্ষীকে তলব করা হয়, যদি কোন প্রত্যায়নকারী সাক্ষী জীবিত থাকে এবং আদালতের পরোয়ানার অধীন হয় ও সাক্ষ্যদানে সমর্থ থাকেঃ
তবে, উইল নয় এরূপ কোন দলিল যা রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮ এর বিধানসমূহ অনুসারে রেজিস্ট্রিকৃত হয়েছে তার সম্পাদন প্রমাণ করার জন্য কোন প্রত্যায়নকারী সাক্ষীকে তলব করার প্রয়োজন হবে না, যদি না যে ব্যক্তি কর্তৃক উহা সম্পাদিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, তৎকর্তৃক উহার সম্পাদন বিনির্দিষ্টভাবে অস্বীকৃত হয়।”
কিন্তু সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারা এই সাধারণ আইনের ব্যতিক্রম। ১৮৭২ সালের সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারায় ত্রিশ বছরের পুরাতন দলিল কি এবং এর মুল্যায়ণ কি সে সম্পর্কে বলা আছে। সেখানে বলা হয়েছে যে-
“যেক্ষেত্রে ৩০ বছরের পুরাতন বলে প্রতীয়মান বা প্রমাণিত কোন দলিল এরূপ কোন হেফাজত হ’তে উপস্থাপিত হয় যা আদালত ঐ বিশেষ ক্ষেত্রে উপযুক্ত বিবেচনা করেন, সেক্ষেত্রে আদালত প্রাগধারণা করতে পারেন যে, ঐরূপ দলিলের স্বাক্ষর এবং অন্য প্রত্যেক ভাগ, যা কোন বিশেষ ব্যক্তির হস্তলিপিতে বলে প্রতীয়মাণ হয় তা সেই ব্যক্তির হস্তলিপিতে হয়েছে এবং, সম্পাদিত বা প্রত্যায়িত কোন দলিলের ক্ষেত্রে, যে ব্যক্তিগণ কর্তৃক উহা সম্পাদিত ও প্রত্যায়িত বলে প্রতীয়মান, সেই ব্যক্তিগণ কর্তৃক উহা যথাযথভাবে সম্পাদিত ও প্রত্যায়িত হয়েছিল।”
অর্থাৎ, যখন কোন দলিল ৩০ বছরের পুরাতন বলে প্রতীয়মান বা প্রমানিত হয়, তখন স্বাভাবিক নিয়মে দলিলটি যার হেফাজতে (Custody) থাকার কথা তার নিকট হতে যদি উহা দাখিল হয়, তবে আদালত অনুমান করতে পারেন (May Presume) যে, এই দলিলে স্বাক্ষর, হাতের লেখা এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর যে যে ব্যক্তি করেছেন তা সঠিক।
সুতরাং, ৩০ বৎসরের পুরাতন দলিল আদালতে দাখিল হলে তা অন্যান্য দলিলের ন্যায় সাক্ষী দ্বারা প্রমাণ করতে হয় না। শুধু ৩০ বছরের পুরাতন মূল দলিল যথাযথ হেফাজত (Proper custody) প্রমাণ করলেই হয়। স্বাভাবিকভাবে ৩০ বৎসরের পুরাতন দলিলটি যার দখলে থাকার কথা সেখান হতে দলিলটি আদালতে দাখিল হয়েছে মর্মে যার দখলে দলিল ছিল তা দ্বারা মৌখিক সাক্ষ্য দিলেই হেফাজত প্রমান হবে এবং তদবস্থায় দলিলটি সাক্ষ্যরুপে প্রমাণ গৃহীত হবে।
আদালত এই বিষয়ে অনুমান করবেন যে, দলিলের লেখা সম্পাদন এবং প্রত্যায়িত দলিল হলে প্রত্যায়ন অকৃত্তিম। এইগুলি ব্যতীত দলিলের বিষযবস্তুর ব্যাপারে আদালত কিছুই অনুমান করবেন না।
এছাড়া, ৩০ বছরের পুরাতন আসল দলিলটি যদি হেফাজতকারীর নিকট হতে হারিয়ে গিয়ে থাকে এরুপ প্রমাণ থাকে, তবে উক্ত দলিলের সহিমোহরকৃত নকল গৌণ সাক্ষ্যরুপে এই ধারা অনুযায়ী গৃহীত হবে। দলিলের তারিখ হতে দলিলটি যখন সাক্ষ্যরুপে ব্যবহার করতে চাওয়া হবে সেই সময় পর্যন্ত ৩০ বৎসরের পুরাতন হলেও এই ধারা সামনে আসবে। কিন্তু ২৯ বছর হলে চলবে না।
সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারায় আলোচনায় বলা হয়েছে যে, আদালত ৩০ বছর বা ততোধিক প্রাচীন দলিলের সম্পাদন এবং দূরীকরণ সঠিক বলে ধরে নিতে পারেন। আবার সঠিক কিনা তা যাচাই ও প্রমাণের নির্দেশ দিতে পারেন। এখানে আদালতকে Discretionary Power বা বিবেচনামূলক এখতিয়া দেয়া হয়েছে। এই ধারার Presumption বা অনুমান খন্ডনযোগ্য।
এখানে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, এই ধারামতে দলিল বলতে-
- নিবন্ধিত দলিল;
- অনিবন্ধিত দলিল;
- ব্যক্তিগত দলিল; এবং
- সরকারী দলিল হতে পারে।
অতএব, দেখা যায় যে, রহিম এবং করিমের মাঝে বিরোধীয় সম্পত্তির দলিলটি ৩০ বছর পুরনো হওয়াই সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারা প্রযোজ্য। ফলে, রহিমকে সাক্ষ্য আইনের সাধারণ নিয়মানুসারে সাক্ষ্য দ্বারা দলিলটি প্রমাণ করতে হবে না; বরং মৌখিক সাক্ষ্য দিলেই যথাযথ হেফাজত প্রমাণ হবে।
সর্বোপরি বলা যায় যে, সাক্ষ্য আইনের ৯০ ধারা অনুসারে ৩০ বছরের পুরনো দলিল দিয়ে মামলা-মোকদ্দমা করার সুযোগ রয়েছে। এ কারণে অনেকে ৩০ বছরের পুরনো জাল দলিল দিয়ে সম্পত্তি দখল করে বৈধ মালিক সেজে অহরহ ভূসম্পত্তি ভোগদখল করছে। অন্যদিকে, প্রকৃত মালিক তার বৈধ স্বত্ব হারিয়ে পথ বসছে।
COMMENTS