ধরা যাক, রহিম এবং খালেক এর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত প্রভাব-প্রতিপত্তির লড়াই চলছে। এরই জের ধরে একদিন রহিমের সন্ত্রাসী বাহিনী খালেককে হত্যা করে বসে...
ধরা যাক, রহিম এবং খালেক এর মধ্যে দীর্ঘদিন যাবত প্রভাব-প্রতিপত্তির লড়াই চলছে। এরই জের ধরে একদিন রহিমের সন্ত্রাসী বাহিনী খালেককে হত্যা করে বসে। ফলশ্রুতিতে, ফৌজদারী আদালতে রহিমের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের হয়।
কিন্তু রহিম ইতিমধ্যে গা ঢাকা দেয় (আত্মগোপন করে)। আদালত রহিমকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়। ঐদিকে পুলিশ বারবার তার বাড়িতে অভিযান চালিয়েও তার হদিছ পায় না। রহিমকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না বলে মামলার বিচারিক কার্য প্রলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
এমতাবস্থায় আদালত কি করবে? রহিমকে কবে নাগাদ পুলিশ গ্রেপ্তার করতে সমর্থ হয়, ততদিন অপেক্ষা করবে নাকি তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু হয়ে যাবে?
নিম্নে ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Can a trial be held in the absence of the accused?
আসামীর অনুপস্থিতিতে কি বিচার করা যায়?
ফৌজদারী মামলার বিচার কোন প্রক্রিয়ায় করতে হবে তা ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এ বিস্তারিতভাবে দেয়া আছে। কিন্তু ১৯৮২ সাল পর্যন্ত এই ফৌজদারী কার্যবিধিতে আসামীপক্ষের অনুপস্থিতিতে বিচারের কোন বিধান রাখা হয়নি।
ফলে, আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করা হলে, সেই বিচারকার্যের কোন আইনী ভিত্তি নেই এমন একটি সাধারণ নীতি চালু ছিল। কিন্তু ১৯৮২ সালে ২৪ নম্বর অধ্যাদেশবলে আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারের বিধান বা “Trial in absentia” নামে একটি ব্যতীক্রম নীতি যুক্ত করা হয়।
ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৩৩৯(খ) নামের ঐ ধারাতে বলা হয়েছে যে, “আসামীকে আদালতে হাজির করার যৌক্তিক প্রচেষ্টা চালানোর পরেও যদি তাকে হাজির করা সম্ভব না হয়, তখন তার অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ চলবে।”
এছাড়াও ঐ ধারাতে যৌক্তিক প্রচেষ্টা কি রকম হতে পারে সে সম্পর্কেও পরিষ্কার একটি ধারণা দেয়া হয়েছে। যথাঃ
প্রথমতঃ
ফৌজদারী কার্যবিধির ৮৭ ধারা অনুসারে লুকিয়ে থাকা আসামীর উদ্দেশে একটি বিশেষ ঘোষণা (Proclamation) জারি করতে হবে। আদালত যখন দেখবে যে, গ্রেপ্তারী পরোয়ানা জারীর পর থেকে আসামী লুকিয়ে আছে এবং গ্রেপ্তার এড়াতে চাচ্ছে, তখন আদালত ঐ আসামীর উদ্দেশে বিশেষ একটি লিখিত ঘোষণা জারি করবে, যেখানে আসামীকে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আদালতের সামনে উপস্থিত হওয়ার নির্দেশ দেয়া থাকবে।
লিখিত এ আদেশ আসামীর আবাসিক অঞ্চলের কোন একটি জায়গায় পড়ে শোনানো হবে। এ ক্ষেত্রে এমন একটি স্থান বেছে নিতে হবে, যা ঐ অঞ্চলের লোকদের জন্য খুব সুস্পষ্ট।
একই সাথে, লিখিত আদেশটি সেখানে সংযুক্ত করতে হবে যেখানে আসামী বসবাস করতে পারে। একই আদেশ আদালতের একটি সুস্পষ্ট স্থানেও লাগিয়ে রাখতে হবে।
দ্বিতীয়তঃ
৮৭ ধারার অধীনে এ ধরনের লিখিত আদেশ রুজু করার পর যেকোন সময় আদালত ইচ্ছা করলে ৮৮ ধারার অধীনে পালাতক আসামীর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ক্রোক (Attachment of property) করতে পারবেন।
তৃতীয়তঃ
হুলিয়া ও ক্রোক আদেশ (Warrant of Proclamation and Attachment) জারীর পরেও যদি পালাতক আসামী আদালতের সামনে হাজির না হয়, সে ক্ষেত্রে আদালত দুটি বহুলপ্রচারিত বাংলা সংবাদপত্রে আসামীর উদ্দেশে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে এই মর্মে আদেশ প্রচার করবেন, উল্লেখিত সময়সীমার মধ্যে যদি আসামী আদালতের সামনে হাজির না হয়, সে ক্ষেত্রে তার অনুপস্থিতিই বিচারকাজ শুরু হয়ে যাবে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, আসামী যদি বিচারকাজ শুরুর পূর্বে একটিবারও আদালতের সামনে হাজির হয়ে থাকে কিংবা আদালতে উপস্থিত হয়ে জামিন নিয়ে থাকে এবং পরে আদালতের সামনে উপস্থিত হওয়া থেকে বিরত থাকে, সে ক্ষেত্রে উপরোল্লিখিত প্রক্রিয়া ছাড়াই আদালত আসামীর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য সম্পন্ন করতে পারবেন।
সর্বোপরি বলা যায় যে, ক্রমাগতভাবে আদালতের আদেশ লঙ্ঘন করার পর আদালত যখন আসামীর অনুপস্থিতেই বিচারকাজ শুরু করবেন, তখন সেই মামলার রায় ঐ আসামীর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ ধরনের মামলায় আসামীর বিরুদ্ধে কঠোর সাজা ঘোষণা করা হয়ে থাকে।
COMMENTS