সাক্ষ্য বলতে বিচারাধীন বা অনুসন্ধানকালীন কোন বিষয় প্রমাণ বা অপ্রমাণে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির মৌখিক বিবৃতি বা দলিল উপস্থাপনকে ...
সাক্ষ্য বলতে বিচারাধীন বা অনুসন্ধানকালীন কোন বিষয় প্রমাণ বা অপ্রমাণে সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত ব্যক্তির মৌখিক বিবৃতি বা দলিল উপস্থাপনকে বোঝায়।
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩ ধারা মতে, তদন্তাধীন বিষয়সমূহ সম্পর্কে সকল বিবৃতি যা আদালত সাক্ষীগণকে তার সম্মুখে প্রদানের অনুমতি বা আদেশ দেন এবং যে সকল দস্তাবেজ আদালত কর্তৃক পরীক্ষার জন্য উত্থাপিত করা হয়, তাকে সাক্ষ্য (Evidence) বলে।
নিম্নে বিচার কার্যে সাক্ষ্যের বিভিন্ন প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
What are the different types of evidence in judicial trial?
বিচার কার্যে সাক্ষ্যের বিভিন্ন প্রকারভেদ কি কি?
সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর বিধান মতে, প্রত্যেক মামলায় উহার বিচার্যবিষয় প্রমানের জন্য সাক্ষ্য গ্রহণ করা প্রয়োজন। তাই উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক বিচার্যবিষয় স্থির করেন। স্বাভাবতই সংশ্লিষ্ট মামলার পক্ষগণ তাদের ইচ্ছামত কোন সাক্ষ্য দান করিতে পারে না। যেহেতু সাক্ষ্য দানকালীন তাদেরকে সাক্ষ্য আইনের বিধিবদ্ধ মেনে চলতে হয়।
উল্লেখ্য যে, বিচারকার্যে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলেও সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এ কেবলমাত্র ২ প্রকার সাক্ষ্যের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। যথাঃ
- (১) মৌখিক সাক্ষ্য (Oral evidence); এবং
- (২) দালিলিক সাক্ষ্য (Documentary evidence)।
(১) মৌখিক সাক্ষ্য
মৌখিক সাক্ষ্য বলতে এমন সাক্ষ্যকে বোঝায় যা মুখের মাধ্যমে বলা কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। সাক্ষ্য আইন, ১৮৭২ এর ৩ ধারায় বলা হয়েছে যে, আদালতে যে ঘটনার বিষয় বিচার করা হয়, সেই সম্পর্কে সাক্ষীকে যে সকল বিবৃতি দেওয়ার জন্য আদালত অনুমতি দেন বা বিচারের জন্য যে সকল বিবৃতি আদালতের প্রয়োজন হয় ঐ সকল বিবৃতিকে মৌখিক সাক্ষ্য বলে।
উদাহরণঃ
রহিম বলল, “করিমকে লাঠি দ্বারা রহমানকে আঘাত করতে আমি দেখেছিলাম।” রহিমের এই বিবৃতি মৌখিক সাক্ষ্য।
মৌখিক সাক্ষ্য শপথ গ্রহণপূর্বক আদালতে পেশ করতে হয়। সাক্ষ্য আইনের ৫৯ ও ৬০ ধারায় মৌখিক সাক্ষ্য সম্পর্কে বর্ণনা আছে।
(২) দালিলিক সাক্ষ্য
যে সকল দলিল-দস্তাবেজ আদালত কর্তৃক পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপিত হয়, তাকে দালিলিক বা দস্তাবেজী সাক্ষ্য বলে। যেমন, আত্মহত্যাকারীর লিখিত চিরকুট, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, ডাকাতের লেখা চিঠি ইত্যাদি।
দালিলিক সাক্ষ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য আইনের ৬৪ ধারা অবশ্যই অনুসরণ করা হয়ে থাকে এবং ব্যর্থতায় ৬৫ ধারা অনুসরণ করতে হয়। সাক্ষ্য আইনের ৬১-৯০ ধারা পর্যন্ত দালিলিক সাক্ষ্য সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, উপরে বর্ণিত প্রধানতম দুই ধরণের সাক্ষ্য ছাড়াও আরোও ভিন্নতর সাক্ষ্যের অস্তিত্ব আছে। যথাঃ
- (ক) বস্তুসাক্ষ্য (Real evidence);
- (খ) অভিযুক্তের বিবৃতি (Statement of accused);
- (গ) বিচারিক পর্যবেক্ষণ (Judicial notice); এবং
- (ঘ) বাদী-বিবাদী ও সাক্ষীদের আচার-আচরণ (Conduct of witness and parties concerned)।
(ক) বস্তু সাক্ষ্য
দলিল ব্যতীত অন্যান্য বিষয়, যা আদালতের পরিদর্শনের জন্য উপস্থাপন করা হয়ে থাকে। যেমন, চোরাই মাল, অস্ত্রশস্ত্র, রক্তমাখা পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি। এগুলো প্রত্যক্ষ ও স্পষ্ট প্রমাণ হিসেবে অনিবার্য ধারণা দিয়ে থাকে।
বস্তুসাক্ষ্য সম্পর্কে সাক্ষ্য আইনের ৪৫ ধারা ও ফৌজদারী কার্যবিধির ৫১০ ধারাতে উল্লেখ আছে। এই ধরণের সাক্ষ্য বিচার কাজে প্রাসঙ্গিক।
(খ) অভিযুক্তের বিবিৃতি
এ ধরনের সাক্ষ্য সাধারণত মৌখিক সাক্ষ্যের অন্তর্ভূক্ত না হলেও ফৌজদারী কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ৩৪২ ধারা মোতাবেক আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন। কেননা, আসামীর স্বীকৃতি বা স্বীকারোক্তি বা অন্য কোন বিষয়ে তার বক্তব্য বিচার্য বা প্রাসঙ্গিক বিষয় সম্পর্কে ধারণা দেয়।
(গ) বিচারিক পর্যবেক্ষণ
যে সকল বিষয় আদালতের নজরে আসে সে সকল বিষয় আদালত ধরে নিতে পারেন কিংবা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক পরিচালিত অনুসন্ধানের ফলাফল সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
(ঘ) বাদী-বিবাদী ও সাক্ষীদের আচার-আচরণ
বিচারিক সিদ্ধান্তে আসার জন্য বিবাদমান পক্ষদ্বয়ের আদালত কক্ষে প্রদর্শিত আচরণ, শারীরিক ভাষা এবং প্রতিটি মামলার পারিপার্শ্বিকতা সাক্ষ্য হিসেবে আদালত বিবেচনায় নিতে পারেন। আদালত সাক্ষীগণের শারীরিক ভাষা ও আচার-আচরণ থেকে সত্যবাদিতা ও ঘটনার অস্তিত্ব সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন। জেরার সময় সাক্ষীর ক্ষুব্ধ আচরণ, দ্বিধাদ্বন্দ্ব, আবেগ ইত্যাদি থেকে সাক্ষীর বিবৃতির সত্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা সম্পর্কে আদালত ধারণা নিতে পারেন।
পরিশেষে বলা যায় যে, সাক্ষ্য প্রতিটি মামলার অপরিহার্য অঙ্গ; সেটি ফৌজদারী কিংবা দেওয়ানী মামলা হোক। কেননা, একজন বিচারক উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত রায় প্রদান করে থাকেন।
COMMENTS