টাকা-পয়সা কর্জ বা ঋণ দেয়া অনেক পূণ্যের কাজ। যেমন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে, জনৈক ব্যক্তি জান্নাতের প্রবেশ দ্বারে দেখতে পেল যে, “ ছদকা বা দানের...
টাকা-পয়সা কর্জ বা ঋণ দেয়া অনেক পূণ্যের কাজ। যেমন, মহানবী (সাঃ) বলেছেন যে, জনৈক ব্যক্তি জান্নাতের প্রবেশ দ্বারে দেখতে পেল যে, “ ছদকা বা দানের ছওয়াব ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয়, এবং অর্থ ঋণ বা ধার দিলে নেকি ১৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।
তবে বর্তমান যুগের মানুষের মধ্যে আমানতদারী গুণের অভাবে উপরোক্ত হাদিছ অনুযায়ী আ’মল করতে গিয়ে অনেকেই বিপদে পড়ে থাকেন।
সুতরাং নিম্নে পাওনা টাকা আদায়ের আইনগত উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
পাওনা টাকা আদায়ের আইনী পদ্ধতি কি?
পাওনা টাকা ফেরত পেতে আপনাকে দেওয়ানী আদালতে একটি Money suit বা অর্থের মামলা করতে হবে। এছাড়া, প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অপরাধের জন্য ফৌজদারী আদালতে মামলা করতে হবে।
মামলা করলেই যে আপনি টাকা ফেরত পাবেন, বিষয়টি তেমন নয়; বরং সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রমাণ করতে হবে। অন্যথায় মামলা খারিজ হয়ে যাবে। সুতরাং, অর্থ ধার বা কর্জ দেওয়ার সময় আপনার করণীয় কী তা জানতে হবে।
কর্জ বা ঋণ দেওয়ার সময় করণীয়
কর্জ বা ঋণ দেওয়ার পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি পালণ করা উচিত। যথাঃ
- ৩০০/= টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে (Non-judicial stamp) লিখিত করে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে।
- ঋণের টাকার পরিমাণ, কখন এবং কিভাবে পরিশোধ তা উল্লেখ করতে হবে। অর্থাৎ টাকা একসাথে পরিশোধ করা হবে নাকি কিস্তিতে (Installment), বা নগদে নাকি ব্যাংকের মাধ্যমে ইত্যাদি।
- সময় মত টাকা ফেরত না দিলে বা চুক্তির কোন শর্ত ভঙ্গ করা হলে কি ধরনের আইনী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা উল্লেখ করতে হবে। যেমন, স্থানীয় বা স্ব-নিযুক্ত সালিসের মাধ্যমে, বা দেওয়ানী বা ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হবে।
- উভয় পক্ষের সাক্ষীর উপস্থিতিতে চুক্তি সম্পাদন করতে হবে। সাক্ষীদের স্বাক্ষর অবশ্যই রাখতে হবে যাতে চুক্তি নিয়ে ভবিষ্যতে কোন জটিলতা দেখা দিলে তারা চুক্তির বৈধতার সাক্ষ্য দিতে পারে।
- এছাড়া, চুক্তি পত্রটি নোটারী পাবলিক বা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক সত্যায়িত করতে হবে, তাহলে চুক্তি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আইনী সহায়তা পাওয়া সহজ হবে।
- যদি সম্ভব হয়, দেনাদার ব্যক্তির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অর্থের পরিমাণ উল্লেখ করে তার স্বাক্ষরযুক্ত একটি চেক নিতে হবে, তবে চেকে তারিখ উল্লেখ করা যাবে না। কেননা তারিখযুক্ত চেকের মেয়াদ চেকে উল্লেখিত তারিখ হতে ৬ মাস। আরোও উল্লেখ্য যে, চেক থাকলে অর্থ উদ্ধার করা সহজ হয়। কারণ চেক ডিজ-অনারের মামলায় আসামী দ্রুত গ্রেপ্তার করা যায় এবং মামলাও দ্রুত নিষ্পত্তি হয়।
অনেকে ধারণা করে থাকে যে, অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করে গাঁ ঢাকা দিলে আর পরিশোধ করা লাগবে না, এমন ধারণা আদৌ সঠিক নয়।
কোন ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত হয়ে মারা গেলে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এজন্য মহানবী (সাঃ) মৃতের সম্পদ তার উত্তরাধিকারীদের মধ্যে বন্টনের পূর্বে মৃতের ঋণ পরিশোধের তাগিদ (Emphasis) দিয়েছেন।
COMMENTS