হিন্দু আইন মূলতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ে ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত আইন। জন্মসূত্রে হিন্দু বা হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত, হিন্দু পিতা মাতার অবৈধ সন্তান (Illeg...
হিন্দু আইন মূলতঃ হিন্দু সম্প্রদায়ে ধর্মীয় এবং ব্যক্তিগত আইন। জন্মসূত্রে হিন্দু বা হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত, হিন্দু পিতা মাতার অবৈধ সন্তান (Illegitimate child) কিংবা পিতা খ্রীষ্টান ও মাতা হিন্দু এবং অবৈধ সন্তান যদি মায়ের কাছে হিন্দু আচার অনুযায়ী লালিত-পালিত হয়, তাদের ক্ষেত্রে হিন্দু আইন প্রযোজ্য।
বাংলাদেশ সহ, ভারত এবং পাকিস্তানে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দু’ধরণের উত্তরাধিকার পদ্ধতি চালু রয়েছে। যথাঃ দায়ভাগ; এবং মিতাক্ষরা পদ্ধতি। বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও আসামে দায়ভাগ প্রচলিত আছে। দায়ভাগ মতে পিন্ডদানের অধিকারী ব্যক্তিই কেবল মৃত ব্যক্তির উত্তরাধিকারী হতে পারবে। অন্যদিকে, ভারতের অন্যান্য প্রদেশ এবং পাকিস্তানে মিতাক্ষরা মতবাদটি প্রযোজ্য।
নিম্নে হিন্দু আইনে সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
Inheritance of Hindu women
হিন্দু নারীর উত্তরাধিকার
বাংলাদেশে প্রচলিত হিন্দু উত্তরাধিকার আইন দায়ভাগ মতে পাঁচজন নারীর উত্তরাধিকার স্বীকৃত। তারা হলেন-
- বিধবা (Widow);
- কন্যা (Daughter);
- মাতা (Mother);
- পিতার মাতা (Grandmother); এবং
- পিতার পিতার মাতা (Great grandmother)।
উপরোক্ত ৫ জন নারী কিছু শর্ত সাপেক্ষে সম্পত্তি ভোগ করার অধিকারী। এই ধরনের সম্পত্তির অধিকার Widow’s estate হিসাবে পরিচিত যদিও বিধবা ছাড়া অন্যরা এই অধিকার পেতে পারে।
এই প্রকার অধিকার তারা কেবলমাত্র জীবনস্বত্বে (Life interest) সম্পত্তি ভোগের অধিকার পায় অর্থাৎ, জীবন অবসানের সঙ্গে সঙ্গে এই সম্পত্তি পূর্ব-মৃত ব্যক্তির পুরুষ উত্তরাধিকারীর কাছে চলে যায়। সীমিত কিছু ক্ষেত্র ছাড়া (Legal necessity) বিধবা মহিলা উত্তরাধিকারীদের এই সম্পত্তি হস্তান্তরের অধিকার নেই।
এই ধরনের সীমিত অধিকার প্রদানের উদ্দেশ্য ছিল যাতে বিধবা তার মৃত স্বামীর আত্মার আধ্যাত্মিক কাজ ও মৃত স্বামীর ‘দায়’ সারতে পারে এবং অবিবাহিত কন্যার বিয়ের ব্যয়ভার বহন করতে পারে।
পরবর্তীতে, The Hindu Women’s Right to Property Act, 1937 প্রণয়নের মাধ্যমে বিধবাদের অংশ সুনির্দিষ্ট করা হয় (অর্থাৎ এক পুত্রের সমান অংশ), কিন্তু একই সাথে এটাও স্পষ্ট করা হয়েছে যে, এটি শুধুমাত্র সম্পত্তিতে জীবনস্বত্বের অধিকার হিসেবে গণ্য হবে।
হিন্দু কন্যা, পুত্রের উপস্থিতিতে সম্পত্তির অধিকার থেকে সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হয়। পুত্র যদি না থাকে, তাহলে অবিবাহিত কন্যা এবং পুত্রবতী কন্যারা জীবনস্বত্বে সম্পত্তির অধিকার পেয়ে থাকে। অন্যদিকে, বন্ধ্যা, বিবাহিতা কন্যা বা বিধবা কন্যা এবং কন্যা জন্মদানকারী কন্যাগণ সম্পত্তির উত্তরাধিকার হতে বঞ্চিত হয়। অর্থাৎ কন্যার অধিকার নির্ভর করবে পুত্র থাকা বা না থাকার উপর।
প্রচলিত আইনে সম্পত্তিতে নারীর পূর্ণ অধিকার আছে কেবলমাত্র স্ত্রীধনের উপর। স্ত্রীধন হচ্ছে নারী স্বোপার্জিত আয় বা সম্পদ, বিবাহের সময় পিতা কর্তৃক প্রদত্ত যৌতুক অথবা দান বা উপহার।
নারীকে যে সমস্ত সম্পত্তি দান বা উপহার দেয়া হয় তা তাদের আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকেই আসে। নারী ইচ্ছামত এই সম্পত্তি হস্তান্তর করতে পারে এবং মৃত্যুর পর এই সম্পত্তির অধিকার তার নিজের উত্তরাধিকারীদের কাছে চলে যায়। কিন্তু সমস্যা হলো এই দান সম্পূর্ণরূপে দাতাদের ইচ্ছার উপর নির্ভরশীল। অর্থাৎ স্ত্রীধন পাওয়ার নিশ্চয়তা নেই।
অন্যদিকে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ১৯৫৬ সালে “Hindu Succession Act” পাশ করেছে এবং এই আইনের মাধ্যমে হিন্দু নারী ও পুরুষের উত্তরাধিকার সম্পত্তিতে সমান অংশ নিশ্চিত করেছে। পরবর্তীতে তারা আইনটি দু’বার (২০০৫ ও ২০০৭ সালে) সংশোধনের মাধ্যমে যুগোপযোগী করে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে “খসড়া হিন্দু উত্তরাধিকার আইন-২০২০” প্রণয়ন করা হয়। এই আইন অনুযায়ী ছেলে ও মেয়ে পৈতৃক সম্পত্তি সমান অংশ পাবে। কেননা, বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ ও ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, “আইনের সামনে সকল নাগরিক সমান এবং কোন বৈষম্য ছাড়াই নারী-পুরুষ আইনের সমান সুরক্ষার অধিকারী।”
COMMENTS