তামাদি আইন, ১৯০৮ একটি পদ্ধতিগত আইন। বাদী বা বিবাদীর আদালতের প্রতি স্বেচ্ছারিতা প্রতিরোধে আইনটি প্রণীত হয়। এই আইনের মোট ধারা ৩২ টি, তার মধ্যে...
তামাদি আইন, ১৯০৮ একটি পদ্ধতিগত আইন। বাদী বা বিবাদীর আদালতের প্রতি স্বেচ্ছারিতা প্রতিরোধে আইনটি প্রণীত হয়। এই আইনের মোট ধারা ৩২ টি, তার মধ্যে ৩ টি ধারা বাতিল করা হয়েছে এবং বর্তমানে ২৯ টি ধারা বলবৎ রয়েছে। তামাদি আইনে মোট ১৮৩ টি অনুচ্ছেদ রয়েছে। মোট তফসিল ৩ টি (২য় ও ৩য় তফসিল) বাতিল করা হয়েছে। বর্তমানে ১ টি তফসিল বলবৎ আছে।
নিম্নে তামাদি আইনের সংজ্ঞা, প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
Definition, necessity and purpose of Limitation Act
তামাদি আইনের সংজ্ঞা, প্রয়োজনীয়তা এবং উদ্দেশ্য
তামাদি একটি Loan-word বা আরবী ভাষা থেকে গৃহীত শব্দ এর অর্থ- কোন কিছু বিলুপ্ত হওয়া কিংবা বাধা প্রাপ্ত হওয়া।
একটি নির্দিষ্ট মেয়াদের পরে কোন্ আইনগত অধিকারের বিলুপ্তি ঘটে, কতদিনের মধ্যে কোন্ মোকদ্দমার আপীল, রিভিউ বা রিভিশনের জন্য আদালতে দরখাস্ত পেশ করতে হবে, কখন বিলম্ব মৌকুফ করা যাবে? ইত্যাদি বিষয় তামাদি আইনে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
মামলা-মোকদ্দমা দায়ের করার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। কোন মামলা ৩ বৎসর আবার কোন মামলা ১২ বৎসর মেয়াদের মধ্যে করতে হয়। মামলার মতো আপীলেরও একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। তামাদি আইনের প্রথম তফসিলে উক্ত নির্ধারিত সময়সীমা বর্ণনা করা হয়েছে।
সুতরাং তামাদি আইন বলতে এমন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইনকে বুঝায় যা সকল প্রকার দাবী বা স্বত্বের দ্বন্দ্বকে নিরবচ্ছিন্ন বিস্তৃত বা দীর্ঘায়িত করার সুযোগ দেয় না; বরং তা চিরদিনের জন্য নিষ্পত্তি করতে সাহায্য করে এরুপ ব্যবস্থাকে তামাদি আইন বলে।
তামাদি আইনের প্রয়োজনীতা
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। যেমন-
- দেওয়ানী মামলা, আপীল এবং আদালতে কিছু দরখস্ত দাখিলের সময়কাল সম্পর্কিত আইন সংহত এবং সংশোধন করা হয়।
- দখল দ্বারা ব্যবহার স্বত্ব ও অন্যান্য সম্পত্তির অধিকার অর্জনের নির্ধারিত সময়সীমা প্রণয়ন করা হয়।
- তামাদি আইনের সময়সীমার দ্বারা বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সামাজিক শান্তি বজায় রাখা হয়।
- মামলার দীর্ঘস্থায়ী প্রকৃতি পরিহার করে জনসাধারণের দুর্ভোগ লাঘব করা হয়।
- মামলার জটিলতা অর্থাৎ বহুগুণ বা সময় সাশ্রয় হয়।
- মামলার দীর্ঘসূত্রীতা বন্ধ করে অর্থের অপচয় রোধ করা হয়।
- প্রতারণামূলক কার্যকলাপ রোধ করা হয়।
- প্রতিষ্ঠিত অধিকার সংরক্ষণের জন্য সহায়তা করে অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হয়।
- সর্বোপরি, তামাদি আইন প্রক্রিয়াটিকে দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে সমস্ত ধরণের দাবি এবং মালিকানার দ্বন্দ্ব চিরতরে নিষ্পত্তি করতে সহায়তা করে।
তামাদি আইন একটি স্বয়ং সম্পূর্ণ আইন কি না?
তামাদি আইন, ১৯০৮ এর সুস্পষ্ট বিধান হলো- নির্ধারিত সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোন মোকদ্দমা, আপীল, কিংবা আবেদন আদালতে দাখিল করা হলে আদালত তা গ্রহণ করবেন না।
আরোও উল্লেখ্য যে, তামাদি আইনের ৩ হতে ২৫ ধারা পর্যন্ত সকল ধরণের মোকদ্দমা, আপীল কিংবা আবেদন দাখিলের মেয়াদ সম্পর্কে সাধারণ নিয়মাবলী ব্যতিক্রমসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
এই আইনের ৫ ধারায় তামাদি রেয়াত বা বিলম্ব মৌকুফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২৮ ধারায় জবর দখলের মাধ্যমে স্থাবর সম্পত্তির মালিকানা স্বত্ব বিলুপ্ত হয় এবং জবর দখরকারীর স্বত্ব অর্জনের সময়সীমার বিষয়ে নির্ধারিত বিধানাবলী বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া, ১৬ ও ২৭ ধারায় ব্যবহার-সিদ্ধ অধিকার অর্জনের সময়সীমা সম্পর্কে বিধান আছে।
তাই এই আইনের ৫ ধারায় বিলম্ব মৌকুফের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে উক্ত বিধান ছাড়া আদালত ন্যায় বিচারের স্বার্থে তামাদি আইন দ্বারা অনুমোদিত সময়সীমার ব্যাপারে কোন অনুমান বা ক্ষমা প্রদর্শন করবেন না। কেননা, কোন দাবী যদি তামাদি হয়ে যায়, তবে সময়সীমা বৃদ্ধির এখতিয়ার আদালতের নেই; এমনকি তামাদিকৃত দাবী বা অধিকারকে আদালতে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে না।
সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, তামাদি আইন একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন যা সর্ব প্রকার দাবী বা স্বত্বের দ্বন্দ্বকে অবিরাম গতিকে দীর্ঘায়িত করার সুযোগ না দিয়ে চিরদিনের জন্য তা নিষ্পত্তি করায় সাহায্য করে থাকে।
এছাড়া, এই আইন প্রতারণা মূলক কার্যক্রম প্রতিরোধ করে। তামাদি আইন, ১৯০৮ এ মোট ২৯টি ধারা ও একটি তফসিল সম্বলিত একটি আইন। এই আইনে সব ধরনের বিধিবদ্ধ নিয়মাবলী সন্নিবেশিত রয়েছে বিধায় এটি একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ আইন হিসেবে বিবেচিত।
COMMENTS